যেসকল নারীরা সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির নারীদের চেয়ে তাদের বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সিজারের সময় শুধু যে লেবার পেইন হয় তা নয়, লেবার পেইনের সাথে যোগ হয় অপারেশন পরবর্তী রিকভারী পেইন। আর এটি যেহেতু একটি মেজর অপারেশন, তাই সিজারের পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তিন থেকে ছয় মাস কোন ধরনের ভারী ব্যায়াম বা কড়া ডায়েট করা উচিত না। তবে সিজারের তিন মাস পর থেকে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে বাড়তি ওজন কমানো এবং পুরনো বডি শেপ ফিরে পাওয়াটা বেশ কিছুটা সহজ হয়ে যায়। আজ সেরকম কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুধু বাচ্চার জন্যই উপকারী না, এটা মায়ের জন্যও অনেক উপকারী। যেসকল মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ওজন অন্য মায়েদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত ঝরে যায়। কারণ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দিতে গিয়ে মায়ের শরীর থেকে অনেক বেশী ক্যালরি ক্ষয় হয়। যার ফলে ওজন ঝরে যেতে শুরু করে। এজন্য শুধু জন্মের প্রথম ছয় মাসই নয়, বরং এরপরও বাচ্চাকে অন্তত এক বছর পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
নিয়মিত হাটা শুরু করুন
সিজারের পর ওজন কমানোর জন্য হাটা হচ্ছে সবথেকে ভালো উপায়। নিয়মিত হাটা শুধু ক্যালরি বার্ন করে না, অপারেশনের পর শরীরের অ্যানার্জি লেভেল বাড়াতেও সাহায্য করে। যে সকল মায়েরা সিজার অপারেশনের মধ্য দিয়ে যান তাদেরকে সাধারণত অপারেশনের পরদিন থেকেই অল্প অল্প করে হাটা শুরু করতে বলা হয়। কারণ হাটলে সেলাই দ্রুত শুকায়, রক্ত জমে না এবং ব্যাথা প্রশমন ত্বরান্বিত হয়। তবে প্রথম ছয় থেকে আট সপ্তাহ খুব আস্তে আস্তে হাটতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে হাটার গতি এবং সময় বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
সিজারের মত মেজর অপারেশন থেকে রিকভারীর জন্য সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খুবই দরকারী। বিশেষত যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য অতিরিক্ত খাবার অতি জরুরী। কারণ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ক্যালরি বার্ন হয়ে যায়। এই বাড়তি ক্যালরির ঘাটতি বাড়তি খাবারের মাধ্যমে পুরণ করা উচিত। তবে এই খাবারটি হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। একজন মায়ের সকালটি শুরু হওয়া উচিত একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা দিয়ে যা তাকে সারাদিনের জন্য অ্যানার্জি দেবে। এরপর সারাদিনে ৫ থেকে ৬ বার অল্প অল্প করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে মায়ের খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস অথচ অল্প পরিমাণে ক্যালরি থাকে। আর প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
ভাজাভুজি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন
সকল নতুন মায়েদেরই একটু আধটু মিষ্টি বা ভাজাভুজি খাওয়ার অধিকার আছে। তাই বলে ক্ষিদে লাগলেই চিপস বা কেক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লে কখনোই পুরনো ওজন ফিরে পাওয়া সম্ভব না। এজন্য ডুবো তেলে ভাজা খাবার, আইসক্রীম, সফট ড্রিঙ্কস এসব যত এড়িয়ে চলা যায় ততই ভালো। এসব খাবারের বদলে তাজা ফল বা সবজি নাস্তা হিসেবে খেলে মা ও বাচ্চা দুজনের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে।
লিখেছেন – সাদিয়া রিফাত ইসলাম