যারা যারা আজকের এই লেখাটি পড়ছেন তাদের যদি এখন প্রশ্ন করা হয়, পার্লারে ফেসিয়াল করতে যাওয়া হয়? জানি বেশির ভাগের উত্তর আসবে যাওয়া হয়।প্রতি সপ্তাহে না হলেও মাসে ২ বার তো কমপক্ষে! এমনটা হলে ক্ষতি নেই।কর্মব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য আলাদা করে একটু সময় বের করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।আর আলসেমি তো আছেই।যেটুকু সময় মিলে তা ঘরে বসে রূপচর্চা করায় আমার অনীহাই বেশি কাজ করে।তাই ফেসিয়াল করতে পার্লারে তো যাওয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করাই যায়।
বাসার কাছাকাছি হওয়ায় ল’রিয়েল বিউটি পার্লারে যাওয়া হত। যেখানে আগে কেবল চুল কাটতে বোনের সাথে যেতাম। সেখানেই হারবাল ফেসিয়াল নিই তবে এই ফেসিয়াল নেয়ার আগে আমি আমার বেশ কয়েকজন পরিচিতদের কাছ থেকে একটু রিসার্চ করে গিয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে রিভিউ এর উপর ভিত্তি করেই আমি হারবাল ফেসিয়াল করবো বলে সিদ্ধান্ত নিই।
হারবাল ফেসিয়াল মুলত বডি পার্ট ভাগ করা। যারা নিয়মিত পার্লারে যান বা কখন গিয়েছেন তারা জানেন, যে যত বেশি এরিয়া কাভার করতে চান টাকার পরিমানটাও সেভাবেই বাড়ে। যেমন ধরুন ব্লাউজ গলা করলে একরকম আবার কেবল মুখ করলে টাকার পরিমান একটু কমে । তো আমি ঠিক করেছিলাম প্রথমে কেবল মুখ করাব। তাতে আমার খরচ হয়েছিল ৩৫০ টাকা।
যেহেতু হারবাল ফেসিয়াল তাই হার্মফুল কিছু ইউজ করবে না এমনটাই আমার ধারনা ছিল। তারপরও আমি জিজ্ঞেস করে নিয়েছি যে, “আপনারা কী কী ইউজ করছেন?”
তাদের উত্তর অনেকটা এরকম, প্রথমে আমারা ভিটামিন ই দিয়ে পুরো মুখ মাসাজ করি তারপর স্ক্রাবার দেয়া হয় এরপর ফাইনালি একটি প্যাক লাগানো হয়। ব্যস এখানেই হারবাল ফেসিয়াল সমাপ্ত।
কিন্তু খেয়াল করেছেন? কেবল স্টেপগুলোই বর্ণনা করে গেলেন! কী কী ব্যবহার করছে তাই জানা হল না। আমিও সবার মতই ধোঁয়া ধোঁয়া উত্তরেই সন্তুষ্ট হই…
যেভাবে বলা হল সেভাবেই করা হল কিন্তু লাস্ট ধাপে প্যাক রিমুভ করার পর আমার পুরো মুখে কিছু একটা প্রলেপ লাগিয়ে দিয়ে বলল আপু শেষ। আমি পাশে থাকা আয়নাতে তাকালাম দেখলাম বেশি ব্রাইট লাগছিল।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি যে, “আপু কিছু কী মেখে দিয়েছেন? অনেক বেশি চেঞ্জ এসে গেছে!”
উনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললেন, “ফেসিয়াল করেছেন আগের থেকে ‘ফর্সা’ তো লাগবেই।”
আবার জিজ্ঞেস করলাম তবে কী দিয়েছেন বললে অন্তত পক্ষে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারব “আমার” মুখে আপনি কী দেলেন যে এতো রেডিকাল চেঞ্জ চলে আসলো! তার বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল বলল, “এসব আমাদের সিক্রেট ইনগ্রিডিয়েন্ট!!! বলা যাবে না।”
আমি তো থ! এবার বলেই ফেললাম, আমার স্কিনে কী দিচ্ছেন এটাই যদি ক্লিয়ার করে না বলেন তাহলে আপনাদের বিজনেসের স্বচ্ছতা কতটুকু তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে আমার এমন কথায় বেশ ভাবলেশহীনভাবে পাল্টা উত্তর আসে আমরা এভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। কই কারো ক্ষতি হয়েছে এমন কোন ফিডব্যক তো পাইনি!
এরপর আমি আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেলাম নিজেকে বোঝালাম, যে পার্লারে আমি টাকার বিনিময়ে সেবা নিচ্ছি এবং আমার জিজ্ঞাসার উত্তর যদি এভাবে আসে ( স্কিনে কী মাখাচ্ছে ক্ষতিকর কি না তা যদি আমাকেই না জানতে দেয়) তাহলে আমি আর সেখানে যাব কেন? সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর সেখানে যাবো না। এইতো গেল বাসার পাশের বিউটি পার্লারের কথা। এই অভিজ্ঞতার পর ঠিক করেছিলাম বিশ্বস্ত পার্লার ছাড়া আর কোন দিন স্কিনে ঘষামাজা করতে যাব না।
এবার আসা যাক কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতারটুকু ভালো করে পড়ে দেখলে বুঝতে পারবেন যে আমি ট্রাই করেও ছোট ছোট ভুল এবং বিচক্ষন না হবার কারণে ৩৫০ টাকা জলে ফেলেছি।
এবার আসা যাক আমার ভুলগুলোতে
- আমি ফেসিয়াল করানোর আগে কেবল কয়েকজনের মুখের কথাতেই বিশ্বাস করেছি ।
- পার্লারে বিউটিশিয়ান সম্পর্কে কোন তথ্যই নেয়া হয়নি। আদৌ কোন এক্সপার্ট ব্যক্তি যিনি অনেক বছর এই পেশায় নিয়োজিত বা পড়াশোনা করেছেন কিনা তা যাচাই-বাছাই না করা। মোট কথা পার্লারের রেপুটেশন সম্পর্কে জানায় আমার ঘাটতি ছিল।
- ফেসিয়াল সম্পর্কে জানতে চেয়ে ধোঁয়াশামুলক উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন না করা। যা বলেছেন তা সরল মনে বিশ্বাস করা।
- নিজেকে ভালনারেবল ফিল করা। আপনার পকেট থেকে টাকা যাচ্ছে আপনার স্কিনে তারা ছাইপাশ কী মেখে দিল আপনার জানার অধিকার রয়েছে।
আশা করি এই ভুলগুলো আমার মতো আর কেউ করবেন না। এবার আসা যাক যেসব ব্যাপারগুলো মাথায় রাখা উচিত,
- স্কিন টাইপ পার্লারের বিউটিশিয়ানকে না দেখিয়ে পার্লারের কর্মচারীর কথায় যেকোনো কিছু করে বসবেন না। আগে জানান আপনার সমস্যা কি?
- আপনার স্কিন টাইপ সেন্সেটিভ, অয়েলি, ড্রাই, নরমাল যাই হোক না কেন তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফেসিয়াল বা স্কিন ট্রিটমেন্ট নিন।
- ব্লিচ এবং হোয়াইট পলিশ (ক্ষতিকর) ছাড়া একবার করেই ঝকঝকে ত্বক পেয়ে যাবেন কোন এমন কথা বললেই বুঝে যাবেন আপনাকে ধোকা দেয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে স্পাও যদি করান তাও আপনাকে অন্তত ২ থেকে তিন মাস কন্টিনিউয়াজ ওই সেবা নিতে হবে তবেই ভালো ফল পাবেন।
- ত্বককে সুন্দর রাখতে যদি পার্লারই আপনার জন্য উত্তম হয়ে থাকে তবে অবশ্যই এমন একটি সেবা বেছে নিন যাতে করে কখনই মনে না হয় অযথাই খরচ করে যাচ্ছেন। ফলাফলের সাথে খরচের সামঞ্জস্যতা কাম্য।
লিখেছেন – নূর নাহার