ঘনো, কালো, লম্বা চুল আমাদের সকলেরই প্রিয়।কিন্তু ধুলা-ময়লা, আবহাওয়া ও যত্নের অভাবে চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে থাকে।আর ব্যস্ততার জন্য নিয়মিত চুল পরিচর্যা করা হয়ে ওঠে না; না পার্লারে গিয়ে আর না ঘরে বসেও এটা ওটা লাগিয়ে বসে থাকার সময় থাকে। তাই বলে চুল চর্চা বন্ধ থাকবে? মোটেও না। আপনার ব্যস্ততার কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন রকমের রেডিমেড তেল উৎপাদন করে থাকে যেগুলো সহজলভ্য, ব্যবহারে ঝামেলা নাই আর সময়ও লাগে অল্প।এমনি মাল্টি পারপাজ এক হেয়ার ওয়েল হল ডু গ্রো হেয়ার গ্রোথ স্টিমিউলেটিং ওয়েল। চুল পড়া রোধে ও নতুন চুল গজানোতে এই তেলের অবদান অনবদ্য।আজকে এই তেলের রিভিউ দিচ্ছি।
নাম – ডু গ্রো হেয়ার গ্রোথ স্টিমিউলেটিং ওয়েল
পরিমান – ৪.৫ আউন্স বা ১৩৫ মিলি
মূল্য – ১৩০০ টাকা
আকার, বর্ণ ও গন্ধ:
স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোতলে হালকা গেরুয়া রঙের তেলটি।হাতের তালুতে নিলে তেমন একটা রঙ্গিন মনে হয় না তবে স্বচ্ছ বোতলে খুব হালকা কমলা রঙ দৃশ্যমান।হারবাল বা লতা-পাতার বেশ ভালোই গন্ধ পাওয়া যাবে তেলটিতে।নাকের কাছে নিলেই ওষধি এর মত গন্ধ পাওয়া যায়।অনেকের কাছে সুগন্ধী ও কারো কারো কাছে বেশ স্ট্রং ও মনে হতে পারে। প্লাস্টিকের বোতলটি দেখতে খুব বেশি আকর্ষণীয় না লাগলেও খুবই ব্যবহারোপোযোগী।চিকন নলাকৃতি অংশটি দিয়ে খুব সহজে স্ক্যাল্পে ও চুলের গোড়ায় গোড়ায় ব্যবহার করা যায়।তাছাড়া সরু হওয়ার কারণে বেশি তেল নষ্ট হবার ও কোন সম্ভাবনা থাকে না, ঠিক যতটা দরকার অতটুকুই নেয়া যায়।
উপাদান:
প্যারাফিন, সুইট আমন্ড ওয়েল, মিয়াডোফোম সিড ওয়েল, শিয়া বাটার এক্সট্রাক্ট, হোয়েট গ্রাম ওয়েল, কর্ণ ওয়েল, সাফ ফ্লাওয়ার সিড ওয়েল, টোকোফেরোল, অফিসিননালিস, ওয়াইল্ড চেরী, গোল্ডেন সিল, হেনা, হোপ্স ও মাত্রিকারিয়া এক্সট্রাক্ট, লেনোলিন ওয়েল, প্রোপাইল প্যারাবেন, BHA, BHT, সুগন্ধী।
বর্ণনা:
উপাদান দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে তেলটি সম্পূর্ণ আয়ুর্বেদিক উপাদানে তৈরি করা হয়েছে।এতে কোন রকম কেমিক্যাল বা ক্ষতিকারক উপাদান নেই।চুল ও মাথার ত্বকের জন্য উপকারী ও কার্যকরী উপাদান সমূগের সাথে যুক্ত হয়েছে দূর্লভ কিছু হার্ভ।এদের সঠিক মাত্রার ব্যবহারে চুল পড়া কমে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।তেলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা নিস্তেজ চুলকে প্রাণবন্ত করে তোলে।গাছ-গাছরার গুণাগুনের কারণে ইচি ও সেনসেটিভ স্ক্যাল্পেও মানিয়ে যায়।শিয়া বাটার চুলের ফ্রিজি ভাব কমায় আর চুলকে করে তোলে নরম, কোমল, মোলায়েম।বোটানিকাল গুণ, ভিটামিনে ভরপুর থাকার কারণে খুব বেশি শুষ্ক, ড্যামেজড, কার্লি ও ক্ষতিগ্রস্ত চুলেও সমানভাবে কার্যকর।তেলটি খুবই লাইট, তাই তৈলাক্ত চুল বা স্ক্যাল্পেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ব্যবহারবিধি:
শুরুতেই বলেছি যে এটি একটি মাল্টি পারপাজ ওয়েল।আপনার ইচ্ছা মত নানা ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।সেরামের মত ভেজা চুলে লাগাতে পারবেন।নরমাল হেয়ার ওয়েলের মত রোজ ব্যবহার করতে পারবেন।যে কোন হেয়ার স্টাইলিং এর সময় ব্যবহার করতে পারবেন।আবার চাইলে ডীপ নিরিশিং ওয়েল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।হট ওয়েল ম্যাসাজের ক্ষেত্রে তেলটি সামান্য গরম করে পুরো মাথায় লাগিয়ে ওয়ার্ম তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপে মুড়ে রাখতে হবে এবং ১৫-৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।চুলের আগা ফাটা রোধ করতে প্রতি রাতে চুলের ডগায় ব্যবহার করুন।
আমার অভিজ্ঞতা:
বর্ণনা অংশটি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই লেখা।তারপরেও আপনাদের সুবিধার্থে এক নজরে ভালো ও খারাপ দিক দেখে নেই।
ভালো দিক:
- লাইট ওয়েট।একদম ই চটচটে নয়।
- কোন ক্ষতিকারক কেমিক্যাল না থাকায় প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়।
- মাথার ত্বকের যে কোন সমস্যার সমাধান করে।
- চুল পড়া কমায়।
- নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
- ইচিভাব, ফ্রিজিভাব, রুক্ষতা, শুষ্কতা দূর করে।।
- এলার্জির সমস্যা দূর করে।
- চুলের নির্জীব ভাব দূর করে শাইনি লুক দেয়।
- সব ধরনের চুলে সমান উপযোগী।
- ব্যবহার করা সহজ ও অল্প সময় সাপেক্ষ।
খারাপ দিক:
- স্ট্রং স্মেল
- একটু দামী
কোথায় পাবেন
বাংলাদেশ থেকে কিনতে চাইলে চোখ বন্ধ করে চলে যেতে পারেন ‘SAPPHIRE’ এ।আর যদি বাইরের দেশে থাকেন তবে সেখানকার সুপার শপগুলো দেখতে পারেন। আজ এই টুকুই।ভালো থাকবেন সবাই।
লিখেছেন – রোজা স্বর্ণা