প্রতিদিন ঘুম ভাঙে মোবাইলের এলার্মে, এরপর সারাদিনের কাজকর্মের বড় একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপটি। আর কাজের ক্লান্তিতে একটু গান শোনার জন্য তো হাতের কাছেই রয়েছে সাধের হেডফোনটি। এসব গ্যাজেট আমাদের নিত্যদিনের চলার পথের সঙ্গী হয়ে আছে সারাটা বছর জুড়ে। তবে দিনশেষে কেন যেন এসব জিনিসগুলোরই খুব একটা যত্ন নেওয়া হয়না। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় গ্যাজেটগুলোর দরকার আলাদা আলাদা যত্ন যাতে এসব ব্যবহার করা যায় দীর্ঘদিন ধরে, কোন ঝুটঝামেলা ছাড়াই।
ল্যাপটপ/ নেটবুক এর যত্নআত্তি
ল্যাপটপ ও নেটবুক অনেকক্ষত্রেই খুব সংবেদনশীল হয় তাই একটুখানি অযত্ন কিংবা মনোযোগের অভাবে আপনার অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটির যেকোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ল্যাপটপের উপর কখনোই ভারী কিছু রাখা উচিত নয়। লাপটপের পুরুত্ব খুব বেশি না হওয়ায় ভারী কিছুর চাপ পরলে তা মনিটরে সমস্যা করতে পারে। যেহেতু ল্যাপটপের ডিসপ্লে পরিবর্তন বেশ ব্যায়বহুল এবং ঝামেলাপূর্ণ তাই এই ব্যাপারে সচেতন হলে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ল্যাপটপের জন্য স্ক্রীন প্রটেক্টর এবং কীবোর্ড প্রোটেক্টর ব্যবহার করলে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করা যেতে পারে সহজেই। এছাড়া আজকাল মিনি ইউএসবি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার পাওয়া যায় যা দিয়ে নিয়মিত মনিটর ও কীবোর্ড পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
এছাড়া নিয়মিত ল্যাপটপ শুকনো সূতির কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন যাতে কোন ময়লা জমে না থাকে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ল্যাপটপ এর ভেতর কোন অবস্থাতেই যেন পানি প্রবেশ করতে না পারে।
ডেস্কটপ কম্পিউটার এর যত্ন
ল্যাপটপের চেয়ে বেশি কাজের ঝড়ঝাপটা পোহাতে হয় ডেস্কটপকে। তাই যত্নটাও হওয়া চাই ভালো। ডেস্কটপ বা যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসই একাধারে চালিয়ে না রেখে কিছুটা সময় বিরতি দেওয়া উচিৎ। বিদ্যুতের তারতম্য দেখা গেলে খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ডেস্কটপ বন্ধও রাখাই ঠিক হবে কারণ মাঝে মাঝে এই তারতম্য মাদারবোর্ড জ্বলে যাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যবহারের পর সবসময় কম্পিউটার হালকা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন যাতে কোন ধরণের ধুলাবালি আক্রমণ করতে না পারে। এছারা সব ধরণের কম্পিউটারের ভেতরকার সুরক্ষায় ভাইরাস প্রোটেকশন অনেক জরুরী।
শখের মোবাইল ফোনের যত্ন
স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবের সবচেয়ে বড় দিকটি হলো স্পর্শের সংবেদশীলতা। তাই খুব জোরে কিংবা নখ দিয়ে মোবাইল বা ট্যাব চাপা থেকে বিরত থাকলে টাচ সেনসিটিভিটি অনেকদিন ভালো থাকে।
টাচস্ক্রিন মোবাইলের স্ক্রিনে পানি, ঘাম কিংবা তেল পড়লে এর টাচ এর কর্ম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় । তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করুন এসব থেকে মোবাইল ফোনটি দূরে রাখতে। আর পানি পরলে সাথে সাথে আলতো করে মুছে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
মোবাইলের স্ক্রীন বা পর্দা পরিষ্কার করার জন্য পাতলা স্ক্রিনপেপার ব্যবহার করতে পারেন।কেননা, স্ক্রিনপেপার ব্যবহারে সহজে দাগ বা ময়লা পরে না। তবে স্ক্রীন পরিস্কার করার জন্য সাবান,পানি কিংবা কোন ধরণের দ্রবন ব্যবহার করা যাবে না। পরিস্কার করার জন্য নরম কাপড়/টিস্যু ব্যবহার করতে হবে । পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ করে পরিষ্কার করতে হবে ।
হেডফোনের যত্ন
অবসরের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠা হেডফোনটিরও চাই একটুখানি যত্ন যাতে করে দিনের বিভিন্ন ভাগ আপনি উপভোগ করতে পারেন পছন্দের কোন গান দিয়ে। গান শোনার সময় প্লাগটি এমনভাবে রাখুন যাতে হ্যাঁচকা টান কিংবা অসাবধানতায় এটি হঠাৎ খুলে না পড়ে যায়। এছাড়া অন্যসব গাজেট এর মতো হেডফোনও কোন তরল পদার্থ কিংবা অতিরিক্ত গরম থেকে দূরে রাখুন।
অযথা কানের মাঝে হেডফোনটি চেপে ধরা কিংবা বারবার পরিবর্তন করা কোনটিই ঠিক নয়। তাই সঠিকভাবে হেডফোনটি কানে দিন।
হেডফোন পরিষ্কার করা ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন ছোট ছোট ওয়াইপস কিংবা টিস্যু। এছাড়া কটনবাড দিয়েও হেডফোনে জমে থাকা ময়লা বের করা যাবে অনায়াসেই। এছারা শখের হেডফোনটিকে ঝকঝকে, সুন্দর ও নতুনের মতো দেখাতে অনেকেই ব্যবহার করেন একটু সাবানপানি। এটি দিয়ে পরিষ্কারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে হেডফোনের ভেতরের দিকে কোনভাবে পানি প্রবেশ না করে।
অন্যসব কাজের পাশাপাশি দিনের কিছুটা সম আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় গ্যাজেটগুলোর যত্নের জন্য ব্যয় করুন। এতে হয়তো আপনি নিজের পছন্দের গ্যাজেটটিকে সুন্দর এবং কার্যকর রাখতে পারবেন অনেকদিন ধরে।
লিখেছেন – জান্নাতুল ইসলাম শিখা
ছবি – দ্যাস্টার.কম.পিএইচ