“জব স্যাটিসফ্যাক্সন” বলে একটা শব্দ এখন বুঝি বইয়ের পাতাতেই পাওয়া যায়। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে বসলেই প্রথম কথা, “ আজকাল অফিস যেতে আর ভালো লাগে না”। হয়তো অন্য কোথাও চাকরি করতে পারলে ভালো হত। এর মানেই হচ্ছে আপনি ঐ কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। উপরন্তু বেশির ভাগ মেয়েদের বেলায়ই চাকরিটা করতে হয় সংসার সামলে। তাই দেখা যায়, একটা পর্যায়ে অনেকেই মোটিভেটশন হারিয়ে ফেলেন। এভাবে দিনের পর দিন কাজ না করে আনন্দ না পেলে কিন্তু প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। এই অবস্থায় নতুন করে আবার পুরনো কাজকেই ভালো লাগাতে হবে।
১) পরের দিনের কাজগুলোকে একটা টার্গেট হিসেবে নিন। একটা নোট করে রাখুন কী কী করবেন। সেগুলো শেষ না করে উঠবেন না। খুব বড় টার্গেট নেবেন না প্রথমেই। টার্গেট পূরণ হলে আবার সেই পুরনো আমেজ ফিরে আসবে।
২) নতুন কাজ হাতে নিন। যেমন মাস শেষের প্রেজেন্টেশান হয়তো আপনার বসই করে থাকেন, আপনি হয়তো সেটাতে সাহায্য করেন। এবার সেটা নিজেই করে ফেলুন। তাতে আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়বে , সেই সাথে আপনার বস ও খুশি হবেন। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন। যে কাজটি আপনি করলেন তার স্বীকৃতি যেন আপনিই পান, অন্য কেউ নয়।
৩) কাজের ক্ষেত্রে অন্যদের সাহায্য করুন । তবে লক্ষ্য রাখবেন আপনার বেশি কাজ করার প্রবণতা কে কেউ যেন তাদের স্বার্থে না লাগায়। অন্য কেউ তাদের কাজের ভার আপনাকে দিলে যথাসম্ভব বিনয়ের সাথে না করে দিন।
৪) জব পলিটিক্স বা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেনট কাজের প্রতি আগ্রহ তো কমিয়ে দেয়ই, সেই সেই সাথে মানসিকভাবে আপনাকে দুর্বল করে দেয়। সমস্যার কথা চেপে না রেখে অফিস কর্তৃপক্ষকে জানান। মনে রাখবেন, যেখানে আপনি কোন অন্যায় করেন নি, সেখানে আপনার ভয় বা লজ্জা পাবার কিছু নেই।
৫) মাঝে মাঝে আপনার পুরনো কোন সাফল্যের কথা মনে করুন। কীভাবে কঠিন কাজগুলো শেষ করেছিলেন। এতে করে নিজের পুরনো আত্মবিশ্বাস অনেকখানি ফিরে আসে।
৬) টাইম ম্যানেজমেন্ট করুন। আপনি যখন কোন কাজ করছেন, কোনভাবেই সেটা থেকে যেন আপনার মনোযোগ না সরে যায় সেটা খেয়াল রাখুন। অন্য কেউ যেন আপনার কাজের বা চিন্তা করার সময়টাতে ব্যাঘাত না ঘটায় সেদিকেও খেয়াল রাখুন।
৭) মাঝে মাঝেই আপনার সহকর্মীদের ধন্যবাদ দিন, তাদের কাজের প্রশংসা করুন, কেন প্রশংসা করছেন সেটাও বলুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং অন্যকে খুশি করার চাইতে ভালো অনুভূতি আর কিচ্ছু নেই। পাশাপাশি এতে আপনার কাজের পরিবেশ ভালো থাকবে। তারাও আপনার প্রতি পজিটিভ থাকবেন।
৮) কাজের ক্ষেত্রে শত্রুতার মনোভাবের মত ক্ষতিকর আর কিছু নেই। কেও সেরকম আচরন করলে শুরুতেই এগ্রেসিভ আচরন করবেন না। তার অবস্থান, তার সমস্যা বোঝার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে সাহায্য করুন। তবে তিনি যদি আপনার ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন, সেক্ষেত্রে সুকৌশলে পদক্ষেপ নিন।
৯) রোবটের মত কাজ করবেন না। লাঞ্চের সময়টাতে কলিগদের সাথে আড্ডা দিন। আপনি আর আপনার স্বামীর কাজের জায়গা এক হলে বা কাছাকাছি হলে দুজনে একসঙ্গে লাঞ্চ সেরে নিন। বা ছোট্ট কফি ব্রেকে কোন বন্ধুকে ফোন করুন। এই কয়েক মিনিটের আলাপ কয়েক ঘণ্টার স্ট্রেস কমিয়ে দিতে সক্ষম।
১০) এক জায়গায় বসে সারাদিন কাজ করবেন না। এতে করে বিরক্তি চলে আসবে। তবে সেটা এমনভাবে করবেন যাতে তা অন্য কারোর বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
১১) যখনই সময় পাবেন ইন্টারনেটে পড়াশোনা করুন, বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ুন, নিউজ দেখুন। অর্থাৎ নিজের জানার পরিধি বাড়ান। এটা আপনাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
১২) Look good to feel good. প্রতিদিন কোনরকম নিজকে গুছিয়ে নিয়ে দৌড়ে অফিস যাবেন না। হালকা সাজগোজ, সামান্য পারফিউম, আপনার পুরো মুডটাই বদলে দেবে। প্রতিদিন আটপৌরে শাড়ি না পড়ে একদিন একটু পছন্দের তুলে রাখা শাড়িটা পড়ুন। ভালো লাগবে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন – মাহবুবা বীথি
ছবি – র্যান্ড.কম, দিজার্নাল.ইআই