Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

মানসিক সুস্থতার সাথে খাবারের কোনো যোগসূত্র আছে কি?

$
0
0

শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব শুধু শরীরের উপরে নয়, বরং মনের উপরও পড়ে। সঠিক খাবার খেলে যেমন শরীর ভালো থাকে, তেমনি মনও ভালো থাকে। মানসিক সুস্থতার সাথে খাবারের কোনো যোগসূত্র আছে কি, সেটা নিয়েই কথা হবে আজ।

অনেকেই জানেন না যে মানসিক সুস্থতার সাথে ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। পুষ্টিকর খাবার, যেমন ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য, মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এতে থাকা ভিটামিন, মিনারেলস আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস মানসিক স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। আবার, অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মানসিক সমস্যা যেমন উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতার কারণ হতে পারে। তাই চলুন আগে জানি ডায়েট মূলত কী, ডায়েট কীভাবে মনকে প্রভাবিত করে।

ডায়েট বলতে কী বোঝায়?

ডায়েটের অর্থ হল খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্য তালিকা যা ব্যক্তির দৈনন্দিন খাদ্য নির্বাচনের উপর নির্ভর করে। এটি কেবলমাত্র কম ক্যালোরি ইনটেক করা নয়, বরং সঠিক পুষ্টির সমন্বয়। সঠিক ডায়েট মানে হলো এমন খাবার নির্বাচন করা যা শরীর ও মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করে। মন ভালো না খারাপ কিংবা দিনের শুরুটা কেমন হবে তা অনেকটাই কিন্তু ডায়েট এর উপর নির্ভরশীল।

মনের উপর ডায়েটের প্রভাব

মনের উপর ডায়েটের প্রভাব

ডায়েটের বেশ কিছু প্রকার রয়েছে যা বিভিন্নভাবে আমাদের মনকে প্রভাবিত করে, আবার ভুলভাল ডায়েটে শরীর ও মন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্দিষ্ট ধরনের ডায়েট মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, Mediterranean ডায়েট, যা অধিক পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, তা ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে, উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ডায়েট কিছু মানুষের মধ্যে উদ্বিগ্নতা বাড়াতে পারে। খাবারের গুণাগুণ আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ভূমিকা রাখে।

ডায়েট নিয়ে ভুল ধারণা

অনেকে মনে করেন যে কেবলমাত্র কম খাওয়াই ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য, যা ভুল। আসলে, ডায়েটের প্রধান লক্ষ্য হল পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অর্থাৎ সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা। সঠিক ডায়েট মানে শুধু ক্যালোরি কমানো নয়, বরং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যা শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। খাবারতালিকায় চাই ব্যালেন্স। সেই সাথে খাবারের গুণগত মানের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

বয়স অনুযায়ী ডায়েট

মনকে চনমনে রাখলেই কিন্তু বয়স কমই থেকে যায়, তাই না? তাই বলে খাবার কিন্তু সব বয়সে একরকম রাখা ভালো নয়৷ বয়স অনুযায়ী খাবারের চাহিদা বদলাবে, শরীরে প্রয়োজন হবে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি উপাদানের৷ বয়সের সাথে সাথে আমাদের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তিত হয়। শিশুদের জন্য ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন ও দুধের মতো পুষ্টিকর খাবার গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরে পুষ্টির চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়, তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের জন্য প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও পরিমিত কার্ব প্রয়োজন, যা কাজের জন্য এনার্জি দেয়। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে, খাদ্য তালিকায় বেশি ফাইবার, কম সোডিয়াম, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার থাকা গুরুত্বপূর্ণ। টিনেজে যেমন বাড়তি প্রোটিন ও পুষ্টির প্রয়োজন, ৫০ বছরের পর কিন্তু সেইম চাহিদা থাকবে না, বরং তখন ডায়েট চার্ট হতে হবে শারীরিক কন্ডিশন অনুযায়ী, এটাই তো স্বাভাবিক তাই না? তাই, বয়স অনুযায়ী ডায়েট মেনে চলা মাস্ট।

মানসিক সুস্থতার সাথে খাবারের যোগসূত্র

জনপ্রিয় কিছু ডায়েট

বর্তমানে কয়েকটি ট্রেন্ডি ডায়েট প্ল্যান বেশ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এর মধ্যে কিটো ডায়েট, প্যালিও ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং উল্লেখযোগ্য। কিটো ডায়েট হচ্ছে যাতে কার্বোহাইড্রেট কম, ফ্যাট বেশি; তরুণদের মধ্যে ওজন কমানোর জন্য জনপ্রিয় এটি। এটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। প্যালিও ডায়েট প্রাকৃতিক খাবারের উপর নির্ভর করে এবং এটি সাধারণত বয়সের ভেদে সবাই ব্যবহার করতে পারে, তবে প্রবীণদের ক্ষেত্রে এটি খুব উপযোগী হতে পারে, কারণ এতে প্রক্রিয়াজাত খাবার কম থাকে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এখন জনপ্রিয়, বিশেষত যারা খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এটি খাদ্যের মধ্যে বিরতি দেয় যা মেটাবলিজম উন্নত করতে সহায়তা করে এবং স্থূলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

হ্যাপি ফুড

“You are what you eat” অর্থাৎ আপনি যা খাবেন, তাই প্রতিফলিত হবে আপনার কাজকর্ম ও মানসিক স্বাস্থ্যে৷ কিছু খাবার গ্রহণে মন থাকে সুস্থ, এসকল খাবারকে বলা হয় হ্যাপি ফুড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পূর্ণ মাছ, বিশেষ করে স্যামন ও সারডিন, আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং বিষণ্ণতা কমাতে পারে। শাকসবজি ও ফলমূল যেমন স্পিনাচ, ব্রকলি, বেরি, সাইট্রাস ফল মনকে সতেজ রাখে।

রোগ প্রতিরোধে যেসব খাবার উপকারী

Whole grains, বাদাম, বীজ, ফল, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন চিকেন ও দুধ, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন আভোকাডো ও জলপাইয়ের তেল- মানসিক সুস্থতার জন্য উপকারী। এ ধরনের খাবারগুলো মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যকলাপ উন্নত করতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে অর্থাৎ মানসিক সুস্থতার সাথে এটি জড়িত। একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য বজায় রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুমও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।

সবশেষে, মনে রাখতে হবে যে খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে আমরা স্বাস্থ্যবান ও সুখী জীবন কাটাতে পারি। সঠিক খাবার আমাদের শুধু শারীরিক শক্তি বাড়ায় না, বরং মনকে শান্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ছবি- সাটারস্টক

লিখেছেন- লিন জেনিফার

The post মানসিক সুস্থতার সাথে খাবারের কোনো যোগসূত্র আছে কি? appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles