হেয়ার কেয়ারে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের তেল। ছোটবেলায় চুলে তেল দিয়ে বেণী বা পনিটেইল করার সেই মধুর স্মৃতি আমাদের সবারই কম-বেশি আছে। দাদি, নানিদেরকেও আমরা দেখেছি যে ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি তেল দিয়ে চুলের যত্ন নিতে। বর্তমানে সেলফ কেয়ার নিয়ে সবাই সচেতন আমরা, আর তাই অনেকেই কনফিউশন থাকেন যে চুলের যত্নে আসলেই কি হেয়ার অয়েলের কোনো কার্যকর ভূমিকা আছে কি না। কোন তেলের কাজ কী সেটা নিয়েও থাকে অনেক প্রশ্ন! আজকের ফিচারটি মূলত চুলের যত্নে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার অয়েলের ভূমিকা ও উপকারিতা নিয়ে। একেক তেলের কাজ, কার্যকারিতা একেক রকমের। চলুন জানা যাক কোন তেলের কাজ কী।
চুলের যত্নে হেয়ার অয়েল আসলেই কি কার্যকরী?
চুলের ধরন বুঝে হেয়ার অয়েল ব্যবহার করলে তা চুলের ড্যামেজ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে৷ শ্যাম্পুর পূর্বে চুলে অল্প পরিমাণে অয়েল লাগিয়ে নিলে তা চুলের চারপাশে একটি প্রোটেকটিভ লেয়ার তৈরি করে, যার কারণে হেয়ার লেন্থ শ্যাম্পু করার সময় ফিজিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা পায়। দুই ধরনের অয়েল সম্পর্কে আগে কিছু তথ্য জানা যাক।
১. অ্যাসেনশিয়াল অয়েল: এ ধরনের অয়েল বিভিন্ন প্ল্যান্ট থেকে সরাসরি এক্সট্রাক্ট করা হয়ে থাকে। যেমন : ল্যাভেন্ডার অয়েল, রোজমেরি অয়েল, টি ট্রি অয়েল ইত্যাদি। এগুলো খুব অল্প পরিমাণে বা ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিক্স করে ব্যবহার করতে হয়।
২. ক্যারিয়ার অয়েল: এগুলো সীড-বেজড অয়েল, অর্থাৎ বিভিন্ন গাছের বীজ বা প্ল্যান্ট থেকে এগুলো সরাসরি তৈরি করা হয়। যেমন: নারিকেল তেল, আর্গান অয়েল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।
কোন তেলের কাজ কী, কয়েক ধরনের হেয়ার অয়েলের কার্যকারিতা তুলে ধরা হলো, যাতে আপনারা নিজের কনসার্ন অনুযায়ী সঠিক হেয়ার অয়েলটি বেছে নিতে পারেন।
কোন তেলের কাজ কী?
নারিকেল তেল
চুলের যত্নে নারিকেল তেল অত্যন্ত কার্যকরী, কারণ এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলকে ডীপলি ময়েশ্চারাইজড করে। এর ফলে চুলে সিল্কি, শাইনি ইফেক্ট দেখা যায়। হিট ও কেমিক্যালি ড্যামেজড চুলের যত্নে এটি অত্যন্ত মানানসই। এতে থাকা বিভিন্ন ফ্যাটি অ্যাসিড স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন থেকেও সুরক্ষা দেয়। যেহেতু খাঁটি নারিকেল কিছুটা থিক, তাই এটি প্রি শ্যাম্পু অয়েল ট্রিটমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করলে বেস্ট রেজাল্ট দেয়। তবে বর্তমানে কোকোনাট এক্সট্র্যাক্ট যুক্ত বিভিন্ন হেয়ার সিরাম বা অয়েল পাওয়া যায় যা তূলনামূলক হালকা হয়ে থাকে, যাদের খাঁটি নারিকেল তেল ভারি মনে হয় তাদের জন্য এই ফর্মগুলো বেশ উপযোগী।
আর্গান অয়েল
এই অয়েল এখন বেশ পপুলার। আর্গান গাছের বীজ থেকে এই তেল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই তেলে আছে ভিটামিন ই সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস ও অন্যান্য নারিশিং ইনগ্রেডিয়েন্টস, যা চুলে দেয় মাল্টিপল বেনিফিটস! এই তেল চুলের ফ্রিজিনেস, ড্রাইনেস কমায় এবং শাইনি করে তোলে। আর্গান অয়েল খুবই লাইটওয়েট, এই কারণে এটিকে হেয়ার সিরাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং শুষ্ক চুল অথবা ভেজা দু’ অবস্থাতেই ব্যবহার করা যায়।
রোজমেরি অয়েল
বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় আরেকটি হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট হলো রোজমেরি অয়েল। রোজমেরি অয়েল এতো জনপ্রিয় তার প্রধান কারণ হলো এটি হেয়ার গ্রোথকে স্টিমুলেট করতে পারে। এতে থাকা hemisqualane হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট করে, যা এখন সায়েন্টিফিক্যালি প্রমাণিত। রোজমেরিতে আছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপারটিজ, যা মাথার তালু ঠান্ডা রাখে এবং ইচিনেস কমায়। যেহেতু রোজমেরি হেয়ার গ্রোথ স্টিমুলেশনের জন্য বিখ্যাত, এটি অ্যালোপেশিয়ার মতো রোগীদেরকে রোজমেরি অয়েল সাজেস্ট করা হয়ে থাকে এবং রিসার্চে প্রমাণিত যে ৬ মাসের মধ্যে রোগী এর কার্যকারিতা দেখতে পায়। এই তেল মাথাব্যথাও দূর করতে কার্যকরী।
ক্যাস্টর অয়েল
এতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস, যা চুলে শাইনি ইফেক্ট দিতে সাহায্য করে এবং চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ক্যাস্টর অয়েল তুলনামূলক ভারি। স্ক্যাল্পের জন্য ক্যাস্টর অয়েল খুবই উপকারী, কারণ এটি অ্যান্টি- ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ট্রিটমেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। যাদের খুব ড্রাই ও ইচি স্ক্যাল্প, তাদের জন্য এই তেল বেশ উপযোগী। চুলে ময়েশ্চার লক করতেও ক্যাস্টর অয়েল কাজ করে ম্যাজিকের মতো। তবে যেহেতু এটি বেশ থিক টেক্সচারের, তাই অন্য লাইটওয়েট ক্যারিয়ার তেলের সাথে মিক্স করে এবং শ্যাম্পুর পূর্বে ব্যবহার করা উচিত।
জোজোবা অয়েল
এটি বেশ ময়েশ্চারাইজিং ইফেক্ট দেয় এবং বেশ লাইট ওয়েট। এই তেল বিভিন্ন ধরনের নিউট্রিয়েন্টস যেমন ভিটামিন ই, বি, সি ও জিংক এ ভরপুর। হেয়ার স্ট্র্যান্ডে এই তেল ব্যবহার করলে তা চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে। চুলের পাশাপাশি এই তেল ত্বকেও ব্যবহার করা যায়, কারণ এই তেল ত্বকের পোরস ক্লগ করে দেয় না।
টি ট্রি অয়েল
এটি এক ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যা টি ট্রি প্ল্যান্ট থেকে এক্সট্র্যাক্ট করা হয়। এতে আছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটিজ, যা স্ক্যাল্পকে মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন আর ইচিনেস থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। স্ক্যাল্প একনে, ড্যানড্রাফ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে ২/৩ ড্রপ টি ট্রি অয়েল মিক্স করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে নিন।
অ্যাভোকাডো অয়েল
এটি অন্যতম একটি লাইট ওয়েট অয়েল। এতে আছে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি এসিডস। এই অয়েল খুব সহজেই হেয়ার শ্যাফটকে ডিট্যাঙ্গেল করতে সাহায্য করে, এমনকি কার্লি চুলেও দারুণ কাজ করে। অর্থাৎ চুলের জট ছাড়িয়ে খুব সুন্দরভাবে ম্যানেজেবল রাখে। এটি চুলের আগা ফাটার সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। যাদের চুল রাফ ও ড্যামেজড, একটুতেই জট বেঁধে যায়; তাদের জন্য দারুণ কার্যকরী।
এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের তেল হেয়ার কেয়ারে ব্যবহার করা হয়, যেমন পাম্পকিন সীড অয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি। চুলের ধরন অনুযায়ী হেয়ার অয়েল বাছাই করলে তা চুলে বেস্ট বেনিফিট দেয়।
- যাদের লো পোরোসিটি হেয়ার, তারা সুইট আমন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল, আর্গান অয়েল, পাম্পকিন সীড অয়েল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন
- যাদের হাই পোরোসিটি হেয়ার, তারা কোকোনাট অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, আমন্ড অয়েল, আর্গান অয়েল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন
হেয়ার কেয়ারে কোন তেলের কাজ কী, কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আজ তাহলে এই পর্যন্তই। আবারও চলে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে, ভালো থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ
লিখেছেন- জাফরিন জাহান
The post চুলের জন্য কোন তেলের কাজ কী এবং সবচেয়ে বেশি কার্যকরী কোনটি? appeared first on Shajgoj.