আমাদের মন ভালো থাকলেই শরীর ভালো থাকে। দেহের সুস্থতার থেকে মনের সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। কারণ আমাদের মনই যে কোনো ব্যাপারে প্রথমে সাড়া দেয়। আর তাই শুধু শারীরিক সুস্থতা ও কায়িক পরিশ্রম দিয়েই একজন মানুষ সবসময় ভালো থাকতে পারে না, যদি তার আত্মিক বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না হয়। মন ভালো রাখার কিছু উপায় জেনে নিন:
শান্ত থাকুন
আমরা বেশিভাগ সময়ই নিজেদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করি।ভবিষ্যতে আমার কী হবে? আমার কী করা উচিত বা অনুচিত? কিন্তু এভাবে দুশ্চিন্তা না করে স্থির থাকুন। এক জায়গায় স্থির হয়ে বসুন। নিজেকে আট বছরের বালক বা বালিকা ভাবুন। নিজেকে নিরপেক্ষ ভেবে নিজের দোষগুণ নিয়ে প্রশ্ন করুন এবং নিজেই উত্তর দিন। নিজেকে বুঝান। নিজের মনকে শান্ত আর স্থির হতে বলুন। একটু পরেই দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে। যখনই অশান্ত হয়ে পড়বেন তখনই এটি করতে থাকবেন।
স্থির হতে ব্যায়াম করুন
একটি চেয়ারে বসুন ও পা দুটিকে মেঝেতে রাখুন। চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে চিন্তা করুন যেন আপনার মেরুদর শেষ প্রান্তে, যোগের ভাষায় যাকে কু-লী বলে, সেখানে একটি বৈদ্যুতিক তার লাগানো রয়েছে। এই বৈদ্যুতিক তার আপনার মাথার ওপরের শান্ত সাগরের মতো পৃথিবীর ঠিক মাঝখান থেকে ঝরনাধারার মতো নেমে এসেছে। এটি আপনার দেহে ঢুকে আপনার দেহের সকল খারাপ কিছু চুষে নিচ্ছে। আপনি নিজেকে খুব হালকা বোধ করছেন। প্রথম প্রথম এটি করতে শান্ত জায়গার প্রয়োজন হবে। পরেআপনি এটি আয়ত্ত করতে পারলে যে কোনো স্থানে বা জায়গায় যেমন- অফিসে,রাস্তায়, লোকালয়ে করতে পারবেন। মন শান্ত রাখার জন্য এটি একটি মহাষৌধ।
কিফো ব্যায়াম
কিফো নিতে মাত্র দু মিনিট লাগবে। আপনার দু হাত হালকাভাবে মুঠো করুন এবং আপনার সম্পুর্ণ দেহের ওপর চাপড়াতে থাকুন। মাথা থেকে আরম্ভ করে খুলি, মগজ ও ঘাড় ছাড়িয়ে সম্পুর্ণ দেহে এটা করতে থাকুন। এতে আপনার রক্তচলাচল বেড়ে গিয়ে আপনার দেহে শক্তি উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে। আমাদের মাথা চিন্তা করার স্থান। মন সবসময় কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করেই চলেছে এবং একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা সে ভালো হোক বা খারাপ।
ক্ষমা
ক্ষমা মহৎ গুণ। তাছাড়া কাউকে ক্ষমা না করতে পারলে বার বার সেই ব্যক্তিটির কথা মনে পরতে থাকবে। আপনার মনের মধ্যে তার ছবি কল্পনা করে ও আপনার উচ্চ সত্তা থেকে ভালোবাসার শক্তি নামিয়ে এনে বার বার বলুন, তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। এক পর্যায়ে আপনি মনে মনে চিন্তা করতে থাকুন যে এই সমস্যাটা ঠিক হয়ে গেছে এবং আপনি লোকটিকে ক্ষমা করতে পেরেছেন। এবং তাকে সহজে ভুলে যাবেন।
পছন্দের খাবার খান
মাঝে মাঝে নিজের পছন্দের খাবারগুলো খাবেন। একা অথবা কাউকে সাথে নিয়ে খাবেন। মন ভালো রাখতে ভালো স্বাদের খাবার অনেকটাই কার্যকরী।
স্নায়ু উত্তেজক ব্যায়াম
জড়তা কোনো ভালো জিনিস নয়। এটিকে যোগের ভাষায় ‘তামসিক ভাব’ বলা হয়ে থাকে। স্নায়ু উত্তেজিত করতে ও জড়তা দূর করতে আপনি বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন-আপনার এক হাতের তালুর একটু ওপরে অন্য হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন। আস্তে আস্তে আঙ্গুলগুলো দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের দিকে নামিয়ে আনুন। পনের বার এটা করুন। এতে আপনার জড়তা দূর হবে।
কুকুর অথবা বিড়াল পোষা
বেশির ভাগ মানুষ স্বার্থপর হয়ে থাকে। আবার অনেকের মধ্যে পশুবৃত্তি আছে। প্রাণীরা প্রভুভক্ত। প্রাণীদের আচার, শিশুসুলভ আচরণ, খেলাপ্রিয়তা ও অল্পে সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতা আপনার মধ্যেও সংক্রামক রোগের মতো প্রবাহিত হয়ে থাকে।স্বার্থপর মানুষের সঙ্গ না দিয়ে প্রাণীদের সঙ্গ দেওয়া অনেক ভালো।
পরিষ্কার থাকুন
আমাদের সম্পুর্ণ দেহের ওপর একটি বলয় আছে যেটিকে ‘সূক্ষ্ম দেহ’ বলে। এই সূক্ষ্ম দেহ অলৌকিক আভা দিয়ে তৈরি, যেটি আমাদের দৈহিক ও আত্মিক সুস্থতা প্রকাশ করে থাকে। আমাদের দেহকে এই অলৌকিক আভা প্রকাশের জন্য পরিষ্কার থাকতে হবে। দেহ পরিষ্কার না থাকলে রোগ দেহে বাসা বাঁধবে ও জীবনটাকে বোঝা ও বিরক্তিকর মনে হবে।
রঙতুলি ব্যবহার
ছোট শিশু মানেই নিষ্পাপ ও পবিত্র কিছু। ছোট শিশুদের মতো রঙপেন্সিল নিয়ে আঁকতে আরম্ভ করুন। চোখ বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করে মন শান্ত করুন। এরপরআপনার মস্তিষ্ক সচল করার জন্য কাগজের ওপর একটি বৃত্ত আঁকুন এবং এটিকে আট ভাগে ভাগ করুন। এই আট ভাগে আপনার ইচ্ছামতো রঙ দিয়ে বৃত্তটি পূরণ করুন। ছবি আঁকার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানুন বা না জানুন এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। চাইলে যা মনে ভালো লাগা তৈরি করে তাই আকুন।
গাছ লাগান
গাছ লাগানো খুব ভালো একটা অভ্যাস। বাগান করা মনের খোরাক জোগায়। গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা আপনাকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাবে, প্রকৃতিপ্রেমিক করে তুলবে, প্রকৃতির মতো উদার হতে সাহায্য করবে। বাড়িতে করা বাগান থেকে আপনি সতেজ বাতাস পাবেন। তাছাড়া, আপনি রান্নার জন্য তাজা সবজি পাবেন।
হাসুন
মনোবিজ্ঞানীরা সকলকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই হাসির কোন সুযোগ পেলে নিজেকে আটকিয়ে রাখবেন না, বরং মন খুলে হাসুন।
গান
গান শুনুন অথবা নিজের পছন্দের গান গাবেন। ভালো হোক আর খারাপ হোক দেখবেন আপনার নিজেরই ভালো লাগবে। মন ভালো হবে। মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে।
ঘুরতে যান
আপনি আনন্দে থাকতে পারে ঘুরাঘুরি করেও। কারণ সব সময় ব্যস্ত থাকতেও একঘেয়েমি লাগে। প্রিয়জন অথবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যান কোনো পছন্দের জায়গায়।অবসরের সময়গুলোতে পরিবারের সকলকে নিয়ে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠানও দেখতে পারেন। রাতে ভালো কোনো গল্পের বইও পড়তে পারেন। সিনেমা হলে গিয়ে স্বপরিবারে বা বন্ধুদের নিয়ে দেখে আসতে পারেন ভালো কোনো চলচ্চিত্র।অথবা তাদের বন্ধুদের সাথে ঘুরার পাশাপাশি খেলাধুলা করুন।
দেখবেন আপনি আপনার কাছের মানুষদের একটু খুশি করতে পেরে আপনারও খুব ভালো লাগবে!!
সর্বোপরি হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবেন,আপনি যেমনই হন না কেন আপনার মত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ কোথাও নেই। পৃথিবীকে দেবার মতন আপনার কাছে এখনও অনেক কিছুই বাকি। তাই নিজেকে অহেতুক অন্যের চেয়ে ছোট না ভেবে নিজের মত করে বাঁচুন। সুস্থ এবং আনন্দে থাকুন।
লিখেছেন – সোহানা মোর্শেদ
ছবি – ফটোগ্রাফারস.ক্যানভেরা.কম