Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

ব্রেস্ট ক্যান্সার |কী এবং কেন?

$
0
0

ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার নারীদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। সমগ্র বিশ্বে নারীদের ক্যান্সার জনিত কারণে মৃত্যুবরণের অন্যতম প্রধান কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সার। পশ্চিম বিশ্বে এর প্রাদুর্ভাব বেশী থাকলেও এখন সাউথ ইস্ট এশিয়ান দেশে এই রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। ব্রেস্ট ক্যান্সার বাংলাদেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। আগে ৪০-এর কম বয়সী রোগী বিরল ছিল। অথচ আজ ১৭ বছরের বালিকাও এ রোগের করুণ শিকার হচ্ছে।

সারা বিশ্বে ১১ অক্টোবরকে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা দিবস এবং অক্টোবর মাস ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর প্রায় ১৪,৮৩৬ জন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৭,১৪২ জন মৃত্যু বরণ করেন। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতি বছর সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়।

 

ব্রেস্ট ক্যান্সার কী?

স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে তখন স্তন ক্যান্সার হতে দেখা যায়। তখন এই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিন্ডে পরিনত হয় এবং রক্তনালী লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতাই ক্যান্সার রোগের বিষয়ে আতঙ্কের কারণ। কেন? কারণ এমতাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্য নিয়েও রোগীকে  পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা বা দীর্ঘ জীবনকালের নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আশার বিষয় হচ্ছে, স্তন ক্যান্সার যদি আমরা ‘Early State’ বা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারি তবে তা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় শতভাগ নিরাময় করা যায়।

কেন বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যান্সার?

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের মূলত দু ধরনের কারণ দেখা যায়। প্রথমত, অপরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ এবং দ্বিতীয়ত, পরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ

অপরিবর্তনযোগ্য এই কারণে বলা হচ্ছে যে এই ঝুঁকিসমূহ জেনেটিক, বংশ এবং হরমোনের কারণে হয়ে থাকে,যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না।

আর পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিসমূহ পুরোপুরি আমাদের নিজেদের হাতে থাকে, যা ইচ্ছে করলেই আর একটু সাবধান থাকলেই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি। চলুন তবে এই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের কারণগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

পরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ

  • অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করা এবং ৩০ বছর বয়সের পর নারীদের প্রথম সন্তানের মা হওয়া কিংবা সন্তান না নেয়া মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
  • সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাসের কারণে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
  • যারা অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খান এবং খাদ্যতালিকায় একেবারেই শাক সবজি রাখেন না তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এছাড়াও দীর্ঘসময় টিনজাত খাবার খাওয়া, প্রিজারভড খাবার, কৃত্তিম মিষ্টি ও রঙযুক্ত খাবার খাওয়া নারী ও পুরুষের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী।
  • অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই না করা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • দীর্ঘদিন এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিকস, ডিওডোরেন্ট এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • ভুল সাইজের ব্রা ব্যবহার করা। স্তনের আকার অনুযায়ী সঠিক মাপের ব্রা ব্যবহার করুন। কেননা নয়তো এটি আপনার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিতে পারে অনেকখানি। স্তনের আকারের চেয়ে বড় মাপের ব্রা স্তনের টিস্যুগুলোকে ঠিকমত সাপোর্ট দিতে পারে না আবার অতিরিক্ত ছোট বা টাইট ব্রা স্তনের তরলবাহী লসিকাগুলো কেটে ফেলতে পারে।
  • সারাক্ষণ ব্রা বা ব্রেসিয়ার পরে থাকার কারণে ঘাম নির্গত হবার অসুবিধে, আর্দ্রতা জমে থাকা, সব মিলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ঘরে থাকার সময়টুকুতে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ব্রা ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন।
  • লেবেল না দেখে ডিওডোরেন্ট কেনা। আজকাল কর্মজীবী নারী হোক বা শিক্ষার্থী, সারাদিনের বাইরে থাকা আর সেই সাথে ঘামের দুর্গন্ধ এড়াতে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করেন প্রায় সবাই। কিন্তু এই ডিওডোরেন্ট কেনার সময় খেয়াল রাখুন কী কী উপাদান আছে এতে। অ্যালুমিনিয়াম বেইজড উপাদান থাকলে তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ডিওডোরেন্ট যেহেতু আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করেন, তাই কোন কোম্পানির পণ্যটি ব্যবহার করবেন তা আগে একজন স্কিন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিন।

অপরিপবর্তনযোগ্য কারণসমূহ

  • জেনেটিক কিছু কারণে মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বিআরসিএ১, বিআরসিএ২ নামের জিনের মিউটেশন ৫% থেকে ১০% স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী থাকে।
  • বংশগত কারণে এই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকেই। যেমন-মা, খালা, বোন বা মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে।
  • মহিলাদের মাসিক শুরু এবং বন্ধের বয়সের ওপরেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নির্ভর থাকে। যাদের ১২ বছর বয়সের পূর্বে মাসিক শুরু এবং ৫০ বছর বয়সের পর মাসিক বন্ধ হয় তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শে থাকেন, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর মহিলাদের মধ্যে যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • লিঙ্গভেদে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। একজন নারী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন।
  • বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারের আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা পরিবর্তন যোগ্য নয় মোটেও।

ব্রেস্ট ক্যান্সার বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ আর এতই বিশাল যে এ সম্পর্কে একবারে সব বলা সম্ভব নয়। ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে জরুরী আরো কিছু তথ্য, রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ও চিকিৎসা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানাবো পরের আরেকটি লেখায়। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

লিখেছেন- ডাঃ মারুফা আক্তার

ছবি- টুইটার.কম


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles