চা অনেকেরই প্রিয় একটি পানীয়। অনেকে শুধু অভ্যাসের বশেও চা পান করেন। কিন্তু এই চা-ই যদি আপনার স্ট্রেস কমাতে পারে বা ওজন কমানোর মত দারুণ সব কাজ করতে পারে তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না, কী বলেন? আর তেমনই একটি চা হলো, তুলসি গ্রিন টি। তুলসি পাতাকে পবিত্র আশীর্বাদ মনে করে পূজা করা হয় এবং এতে আছে বহুবিধ চিকিৎসা ক্ষমতা। এই পাতা টি শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন দূর করে এবং এতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং ক্যাফেইন যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম-কে এনার্জি প্রদান করে।
এবার তাহলে চলুন কিভাবে তুলসি গ্রিন টি তৈরি করতে হয় দেখে নেই-
১ম ধাপ: আপনি কতটুকু চা তৈরি করতে চান সে অনুযায়ী একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটানো হয়ে গেলে এবার পাত্রের ঢাকনা বন্ধ করে দিন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
২য় ধাপ: প্রতিটি কাপে ৪-৫ টি করে তুলসি পাতা রেখে তার মধ্যে গরম পানি ঢেলে নেড়ে নিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো তুলসি চা।
আপনি চাইলে এর সাথে মধু বা চিনি যোগ করতে পারেন। অথবা ঠান্ডা তুলসি গ্রিন টি খেতে চাইলে চা পুরোপুরি ঠাণ্ডা করে এতে ২/৩ টি আইস কিউব যোগ করতে পারেন। এর সাথে আরো যোগ করতে পারেন ২/৩ ফোঁটা লেবুর রস। চা কিভাবে খাবেন তা পুরোটাই আপনার টেস্ট-এর উপর নির্ভর।
এবার তাহলে তুলসি গ্রিন টি-এর উপকারিতাগুলো দেখে নেই-
১. ওজন কমায়
তুলসি চা মেটাবোলিজম সিস্টেম-কে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং একই সাথে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়ায়। এতে রয়েছে Catechinsis নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যা লিপিড ভাঙ্গনের জন্য প্রধানত দায়ী। এটা মোটা মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ যারা ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তুলসি চা সরাসরি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। তাই ব্যায়ামের পাশাপাশি তুলসি চা খেলে খুব দ্রুত ওজন কমবে।
২. স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে
তুলসি চা শরীরের স্বাভাবিক জৈব ফাংশন ঠিকঠাক রাখে এবং অতিরিক্ত স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে এবং দেহে অতিরিক্ত চাপ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা তৈরি করে। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, তুলসি হরমোন করটিসল-এর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরের স্ট্রেস হরমোন তৈরি করে। বলা হয়ে থাকে দেহে যখন করটিসল হরমোন উত্তেজিত হয় তখন মানুষ স্ট্রেস ফিল করে, আর তুলসি এই হরমোনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. অকাল বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ করে
অক্সিডেশন প্রসেস-কে স্লো করতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস সাহায্য করে থাকে এবং দেহকে ফ্রি রেডিকেলস-এর হাত থেকে রক্ষা করে। তুলসি গ্রিন টি এমনই সব অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস-এর ভান্ডার, যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে এবং দেহে তারুণ্য বজায় রাখে দীর্ঘদিন এবং বার্ধক্য পক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
৪. কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়
তুলসি একটি মুত্রবর্ধক যা কিডনির সমস্যায় খুবই কার্যকর। এটি একটি ভালো ডিটক্সিফায়ার যা কিডনির জন্য খুবই মুল্যবান। ইউরিক এসিড কিডনিতে পাথর জমার মূল উপাদান। এটি কিডনি দ্বারা শরীর থেকে বের হয়। তুলসি পাতা ইউরিক এসিড-কে শরীর থেকে পরিষ্কারভাবে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে যার কারণে কিডনিতে পাথর জমতে পারে না।
৫. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
অক্সিডেশন প্রসেস-এর যার কারণে দেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা টিস্যু ড্যামেজ হয়ে যায়, এগুলো ওরাল বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য খুবই ইফেক্টিভ। আর এইসব অক্সিডেশন প্রসেস-কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে তুলসি গ্রিন টি। এটি ক্যান্সার কোষকে দমন করে নতুন রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে। সূর্যালোক এবং রেডিয়েশন থেরাপি-এর কারণে যেসব টিস্যু ও কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলোকেও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে তুলসি।
তুলসি চা দেহের নানাবিধ উপকার সাধন করে। তবে তুলসি গ্রিন টি বানানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, কখনোই ফুটন্ত পানিতে তুলসি পাতা দিয়ে চা তৈরি করবেন না বা পানিতে তুলসি পাতা দিয়ে ওই পানি ফুটাবেন না তাহলে তুলসি পাতার নিজস্ব গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার মত আরো অনেক উপকার করে এই তুলসি। এটি আপনাকে স্ট্রেস ফ্রি রাখতে সাহায্য করে যার জন্য আপনি নিজেকে হালকা অনুভব করতে পারেন।
লিখেছেন- নাইমা আক্তার
ছবি- প্রোঅ্যাকটিভডিরেক্ট.কম, টিকেক.ইন, ইমেজেসবাজার.কম, কেরালাআয়ুরভেদা.বিজ