পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো একটি ঘর মানুষের রুচির পরিচয় বহন করে। ঘরবাড়ি ঝকঝকে এবং পরিপাটি থাকলে মনে প্রশান্তি আসে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যটাও ভালো থাকে। কিন্তু প্রতিদিনের ব্যস্ততায় ঘরকে ঝকঝকে পরিষ্কার রাখার ধৈর্য্য অনেকেরই হয় না। ফলে ধীরে ধীরে ধুলার আস্তরণ পরে একসময় তা পরিষ্কার করাও অসাধ্য হয়ে যায়। জেনে নিন ঘরটাকে ঝকঝকে রাখার জন্য কিছু টিপস।
আয়না
ঘরে আয়না থাকলে রুমটাকে বেশ বড় দেখায়। আর তাই অনেকেই আয়না দিয়ে ঘর সাজিয়ে রাখেন। কিন্তু নিয়মিত আয়না পরিষ্কার না করার কারণে আয়নায় দাগ হয়ে যায়। ফলে ঘরটাকে বেশ অপরিচ্ছন্ন দেখায়। আয়নার এই দাগ পরিষ্কারের জন্য ভিনেগারের সাথে পানি মিশিয়ে আয়নায় স্প্রে করুন। এরপর পুরানো খবরের কাগজ ভিজিয়ে লাগিয়ে রাখুন আয়নায়। কিছুক্ষণ পর খবরের কাগজ তুলে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। আয়না ঝকঝকে হয়ে যাবে। আর খুব সহজেই আয়না পরিষ্কার করতে চাইলে সুপারশপ বা অনলাইন শপগুলোতে বেশ কিছু গ্লাস ক্লিনার পাওয়া যায়। এগুলো স্প্রে করে আয়না মুছে ফেললে নিমিষেই ঝকঝকে হয়ে যায় আয়না।
আসবাবপত্র
নিয়মিত ব্যবহারে আসবাবপত্রে ময়লা জমে যায়। বিশেষ করে সোফার হাতলে কিংবা চেয়ারের হাতলে চিটচিটে ময়লা হয়ে যায়। এই ময়লাগুলো সহজেই পরিষ্কার করতে পারবেন ফার্নিচার ক্লিনার স্প্রে করে। ফার্নিচার ক্লিনার স্প্রে করে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেললেই দাগ দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে ধুলো-ময়লা মুছে ফেলতে হবে। আর বোর্ডের ফার্নিচারগুলো কখনোই ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা উচিৎ নয়। এতে ফার্নিচারের বোর্ডের ক্ষতি হয়।
লেদারের ফার্নিচারের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের লেদার কেয়ার স্প্রে পাওয়া যায়। এগুলো আর্টিফিসিয়াল এবং অরিজিনাল দুই ধরণের লেদার ফার্নিচার পরিষ্কার করতেই ব্যবহার করা যায়। এই ধরণের স্প্রেগুলো ব্যবহার করে লেদার ফার্নিচার পরিষ্কার করলে দীর্ঘদিন লেদারের মান ভালো থাকে।
ফ্লোর
আজকাল প্রায় সব বাসাতেই টাইলস লাগানো থাকে। টাইলসের বাসা দেখতে সুন্দর দেখালেও পরিষ্কার করা বেশ ঝামেলা। কারণ টাইলসের ফাকে ফাকে ময়লা জমে কালো দাগ পরে যায়। তাই ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য ফ্লোর ক্লিনার ব্যবহার করা উচিৎ। বিশেষ করে যেসব বাসায় ছোট শিশু আছে সেখানে জীবাণু প্রতিরোধী ফ্লোর ক্লিনার ব্যবহার করা উচিৎ। এতে অনেক রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ঘরের মেঝে সবসময় শুকনো রাখার চেষ্টা করা উচিৎ। এতে মেঝে পরিষ্কার থাকার পাশাপাশি পা পিছলে দূর্ঘটনা ঘটার বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। ঘর ভালো করে মোছার জন্য কিংবা সামান্য পানি পরলে সেটা সাথে সাথেই মুছে ফেলার জন্য মপ ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে পানীয় পড়লেই হাতের কাছে থাকা মপ দিয়ে চট করে পরিষ্কার করে ফেলতে পারবেন মেঝেটা।
ওয়াশরুম
ঘরের সবচাইতে জীবাণুযুক্ত স্থানটি হলো ওয়াশরুম। বাথরুমের কমোড, হ্যান্ড স্প্রে এই স্থানগুলোকে সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখা উচিৎ। আর তাঁর জন্য নিয়মিত টয়লেট ক্লিনার এবং ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিৎ টয়লেট। এছাড়াও বেসিন, বাথটাব, সাবানদানী এই স্থানগুলোও বেশ তাড়াতাড়ি ময়লা হয়ে যায়। আর তাই সপ্তাহে অন্তত ২বার করে এই স্থানগুলো ভালো করে পরিষ্কার করা উচিৎ। অনেকেরই বাথরুমে গাছ থাকে। যদি পানির গাছ হয়ে থাকে তাহলে পানিটা নিয়মিত বদলানো উচিৎ। নিয়মিত পানি বদলে না দিলে মশা এবং পোকামাকড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সঙ্গে বাথরুমের ড্রেন দিয়ে সপ্তাহে ৩/৪ দিন ফুটন্ত গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে ঢেলে দিন। এতে বাথরুমে পোকামাকড়ের উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে।
রান্নাঘর
রান্নাঘরের কিচেন সিংকটা প্রতিদিনই রান্না শেষে একবার করে ধুয়ে ফেলুন। কিচেন সিংক ময়লা থাকলে খাবারে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। সেই সঙ্গে রান্নাঘরের হাঁড়িপাতিল, থালাবাসন পরিষ্কার করার স্পঞ্জ এবং তারজালিও কাজ শেষে ভালো করেও ধুয়ে শুকিয়ে রাখুন। না হলে এগুলোতেও প্রচুর পরিমানে জীবাণু জন্ম নেয় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই রান্নাঘরেই ময়লা ফেলার ডাস্টবিন রাখেন। রান্না ঘরে না রেখে বারান্দায় বা ঘরের বাইরে কোথাও রাখা উচিৎ ডাস্টবিন। আর যদি রান্নাঘর ছাড়া রাখার আর কোনো স্থান না থাকে তাহলে অবশ্যই ঢাকনা আছে এমন ডাস্টবিন ব্যবহার করা উচিৎ। এতে বাজে গন্ধ এবং জীবাণুর সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম থাকে।
ছবি – ক্লিনিংটিপস ডট কম ডট এইউ
লিখেছেন – নুসরাত শারমিন