ব্রণ সমস্যায় কমবেশি সবাই ভুগে থাকেন। কারো কারো অনেক বেশি ব্রণ হয় আবার কারো বছরে একটা দুটো। কপালে, থুঁতনিতে, নাকে কিংবা গালে সব স্থানের পিম্পলই আপনার শরীরের আভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রতিফলন। কোন স্থানে পিম্পল হয়েছে সেটা দেখেই আপনি অনুমাণ করতে পারবেন আপনার শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে এবং সেটা সমাধান করে ব্রণ কমিয়ে ফেলতে পারবেন সহজেই। সেই সঙ্গে শরীরের ব্যাপারেও সচেতন হতে পারবেন। তাহলে জেনে নেয়া যাক ফেস ম্যাপিং এর মাধ্যমে।
কপালের ব্রণ
আপনার যদি নিয়মিত কপালে ব্রণ ওঠার সমস্যা থাকে তাহলে জেনে নিন যে আপনার মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করার সময় হয়েছে। অতিরিক্তি মিষ্টি খাবার খাওয়া, শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারে অ্যালার্জি, হজমে সমস্যা কিংবা শারীরিক পরিশ্রমের অভাবের কারণে কপালে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হাটুন কিংবা হালকা কোনো ব্যায়াম করুন। সেই সঙ্গে মিষ্টি, চকলেট, কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া কমিয়ে দিন। প্রচুর পানি পান করুন এবং খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখুন। প্রয়োজনে আপনার শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের ব্র্যান্ডও পরিবর্তন করতে পারেন। ধীরে ধীরে কপালের ব্রণ কমে যাবে আপনার।
ঠোঁটের পাশের ব্রণ
কারো কারো ঠোঁটের আশে পাশে অনেক ব্রণ হয়। এক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার কিংবা খুব ঝাল খাবার নিয়মিত খাওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে খাবার তালিকায় ফাইবার বাড়াতে হবে এবং প্রচুর তাজা ফল-মূল ও সবজি খেতে হবে। সেই সঙ্গে ঝাল এবং ভাজাপোড়া খাবার কমিয়ে কম মশলাযুক্ত খাবার খেতে হবে। এতেও না কমলে পেটে সার্কুলার মোশনে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করুন প্রতিদিন। এতে ঠোঁটের আশেপাশের ব্রণ কমে যাবে।
গালের ব্রণ
যাদের গালের ব্রণের সমস্যা আছে তাদেরকে পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এবং খাবারের ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হতে হবে। জাঙ্ক ফুড এবং টক ও বেশি লবণযুক্ত খাবার কমিয়ে সবুজ শাক, সবজি, ফল ইত্যাদি খাওয়া বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ খোলা বাতাসে হাটার অভ্যাস করতে হবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পরিহার করে প্রতিদিনের রুটিনমতো তাড়াতাড়ি ঘুমানো ও ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। কারণ রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত লিভার অনেক বেশি এক্টিভ থাকে। ফলে এই সময়টাতে ঘুমানো উচিত। আর দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত লিভারের কার্যক্ষমতা কম থাকে তাই এই সময়টাতে ভারী কাজগুলো করা উচিত। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে অন্তত ১৫ মিনিট বিরতি নিন। চেষ্টা করুন ক্লাসের বা অফিসের টিফিনে বাসা থেকে তৈরি করা খাবার নিয়ে যাওয়ার। এতে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
টেম্পল ব্রণ
আপনার যদি টেম্পল ব্রণের সমস্যা হয় তাহলে বুঝবেন এর পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। অতিরিক্ত মেকাপ করা, মেকাপ ঠিকমতো পরিষ্কার না করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই এই সমস্যার মূল কারণ। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে তরমুজ, শসা, পেপে, লাউ, চালকুমড়া ইত্যাদি পানিযুক্ত ফল ও তরকারী খাওয়ার অভ্যাস করুন।
চোখের আশেপাশের ব্রণ
চোখের আশেপাশের ব্রণ হয় মূলত পানি কম খাওয়ার কারণে। চোখের আশেপাশের ব্রণ কমানোর জন্য প্রচুর পানি পান করুন, হালকা ব্যায়াম করুন এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন। সেই সঙ্গে অবশ্যই কোল্ড ড্রিঙ্ক, অ্যালকোহল এবং অতিরিক্ত চা-কফি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
নাকের ব্রণ
যদি নাকের উপর ব্রণ হয় তাহলে বুঝে নিন হজমে সমস্যা, রক্ত সঞ্চালণে ব্যাঘাত কিংবা সঠিক পুষ্টি উপাদানের অভাব হয়েছে শরীরে। প্রতিদিন একটি করে কলা কিংবা আপেল খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর শাক-সবজি গ্রহণ করুন। সেই সঙ্গে নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট হাটুন। এতে নাকের ব্রণের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন আপনি।
আই ব্রো এর মাঝের ব্রণ
আপনার যদি দুই পাশের আই ব্রো এর মাঝে ব্রণ দেখা দেয় তাহলে বুঝে নিন আপনি ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন এবং আপনার পরিমিত ঘুম হচ্ছে না। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ঘুমের সময়টার হেরফের করবেন না, ধুমপান এবং অ্যালকোহল বর্জন করুন এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে ৩ ঘন্টা আগেই খাওয়ার কাজ সেরে ফেলুন। আই ব্রোয়ের মাঝের স্থানটাতে মাঝে মাঝে পরিষ্কার হাতে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে এবং ব্রণের সমস্যা কমবে।
থুঁতনির ব্রণ
ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেকেরই টুকটাক খাওয়ার অভ্যাস আছে। অনেকে আবার রাতে ভারী খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পরেন। যাদের এই অভ্যাস আছে সাধারণত তাদের থুঁতনিতে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার হরমোনাল ইমব্যালেন্স কিংবা কিডনির সমস্যার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। থুঁতনিতে ব্রণ হলে হরমোন ব্যালেন্স ঠিক আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করিয়ে নিন। প্রতিদিন ৮/১০ গ্লাস পানি পান করুন এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাটুন।
ছবি – সিবিসি ডট সিএ
লিখেছেন – নুসরাত শারমিন