মেকাপ করতে কে না পছন্দ করে? সেটা প্রতিদিনকার মেকাপ হোক, বা পার্টি মেকাপ। দারুণ একটি মেকাপ লুক আনতে প্রয়োজন নিখুঁত বেজ মেকাপের।কিন্তু মেকাপের বেজ করতে গিয়ে অনেকেই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হন। কারো মুখে মেকাপ বসে না, কারো মেকাপ ভেসে থাকে, কারো মেকাপ ফেটে যায়। এই সমস্যাগুলো অনেকটাই এড়ানো যায়, যদি আমরা মেকাপের জন্য আমাদের স্কিনকে প্রস্তুত করে নিই।
এখন কথা হলো, কীভাবে মেকাপের জন্য স্কিনকে প্রস্তুত করবেন? এবং কোন কোন প্রোডাক্ট বেজ মেকাপের জন্য ইউজ করা হয়? মোট কথা, ফ্ললেস মেকাপ লুকের জন্য যেসব স্টেপ আপনাকে ফলো করতে হবে তা নিয়ে আজকের লেখনি।
তাহলে একেবারে প্রথম ধাপ থেকেই শুরু করা যায়। এই ধাপে আমরা স্কিনকে মেকাপের জন্য প্রস্তুত করে নিবো।
(১) ক্লিঞ্জিং
মেকাপ শুরুর আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। এজন্য আপনি আপনার ক্লিঞ্জারের সাহায্যে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। স্কিন টাইপ অনু্যায়ী ক্লিঞ্জার নির্বাচন করতে হবে। অয়েলি স্কিন হলে এমন ক্লিঞ্জার ব্যবহার করতে হবে যেটা ভালোভাবে ফেস এর অয়েল দূর করে। ড্রাই/ নরমাল স্কিন হলে ময়েশ্চারাইজিং ক্লিঞ্জার ব্যবহার করবেন। কিছু ক্লিঞ্জারের নাম – বডি শপ ভিটামিন ই ক্রিম ক্লিনজার, সিউইড পিউরিফাইং ফেসিয়াল ক্লিঞ্জার, ক্লিন এন্ড ক্লিয়ার ক্লিঞ্জিং লোশন।
(২) স্ক্রাবিং
স্কিনকে প্রস্তুত করার জন্য এই স্টেপ টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রাবিং এর মাধ্যমে ফেস এর ডেড স্কিন সেল, ব্লাকহেডস দূর করা যায়। যার ফলে ফেস অনেক বেশী মসৃন লাগে, আর মেকাপ ও ভালো বসে, ভেসে থাকে না। বাজারে অনেক ধরনের স্ক্রাবার পাওয়া যায়। কিছু স্ক্রাবের নাম -সেন্টইভস অ্যাপ্রিকট স্ক্রাব, নিউট্রোজিনা ভিজিব্লি ক্লিয়ার পিঙ্ক ডেইলি স্ক্রাব। এছাড়া ঘরেই স্ক্রাব তৈরী করে নিতে পারেন।এজন্য চালের গুড়া, মধু, লেবুর রস মিশিয়ে নিন।চালের গুড়া একদম মিহি হওয়া যাবে না। এগুলো একসাথে মিশিয়ে চোখের এড়িয়া বাদে পুরো মুখে এন্টি-ক্লোকওয়াইজ ম্যাসাজ করুন ২-৩ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৩) মাস্ক
প্রতিদিনকার মেকাপের হ্মেত্রে ফেস মাস্ক আমার কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। তবে কোনো পার্টি/ উৎবের মেকাপের আগে ফেস মাস্ক লাগিয়ে নেয়া আবশ্যক। বাজারে অনেক ধরনের ফেস মাস্ক পাওয়া যায়। এছাড়া নিজের স্কিনের ধরন অনুযায়ী ঘরেও বানিয়ে নিতে পারেন ফেস মাস্ক। যেকোনো ফেস মাস্ক মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন।
(৪) টোনিং
স্কিনে ব্যালেন্স আনার জন্য এবং মুখে বড় পোর থাকলে তা ছোট করে আনার জন্য টোনার ব্যবহার করা হয়। কটন বলে কয়েক ফোটা টোনার নিয়ে পুরো মুখ মুছে নিবেন। এর পরে মুখ ধোয়ার প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে বডি শপ টি ট্রি টোনার, বুটস ফেসিয়াল টোনার, বডি শপ অ্যালো কামিং টোনার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা নিজেই ঘরে গোলাপজলের টোনার তৈরি করে নিতে পারেন।
(৫) ময়েশ্চারাইজিং
মেকআপ স্মুদলি ফেস এ বসানো এবং মেকাপ ফেটে যাওয়া রোধ করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী। স্কিন টাইপ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম/ লোশন ব্যবহার করতে হবে। কিছু ময়েশ্চারাইজারের নাম – সেন্টইভস কোলাজেন ইলাস্টিন ময়েশ্চারাইজার, বডি শপ ভিটামিন ই ইন্টেন্স ময়েশ্চারাইজ ক্রিম, ল্যাক্টো ক্যালামাইন ময়েশ্চারাইজার, ক্লিনিক ড্রামাটিকাললি ডিফারেন্ট ময়েশ্চারাইজিং লোশন।
এখন আপনি পুরোপুরি প্রস্তুত মেকাপ করার জন্য। এই ধাপে বেজ মেকাপের প্রতিটি স্তর সংক্ষিপ্তভাবে বোঝানো হল।বেজ মেকাপের ১ম ধাপ থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হয় তাই জানবেন।
(১) প্রাইমার
ময়েশ্চারাইজার লাগানোর ৫ মিনিট পর ফেস প্রাইমার লাগিয়ে নিতে হবে। প্রাইমার খুব অল্প পরিমানে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। কিছু প্রাইমারের নাম - রিমেল ফিক্স অ্যান্ড পারফেক্ট প্রাইমার, বেনিফিট পোর ফেশনাল প্রাইমার, ইএলএফ প্রাইমার।
(২) ফাউন্ডেশন
প্রাইমার লাগানোর ৫ মিনিট পর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। ভেজা স্পঞ্জ অথবা ব্রাশের সাহায্যে ফেস এ ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে নিতে হবে। কিছু ফাউন্ডেশনের নাম – ম্যাক স্টুডিও ফিক্স ফাউন্ডেশন, মেইবিলিন ফিট মি ফাউন্ডেশন, রিমেল স্টে ম্যাট ফাউন্ডেশন।
(৩) কনসিলার
স্কিনে কালো দাগ থাকলে, ডার্ক সারকেল থাকলে কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ক্রিম হাইলাইটও করা যায় কনসিলার দিয়ে।এটিও ভেজা স্পঞ্জ/ ব্রাশের সাহায্যে ব্যবহার করতে হবে। কিছু কনসিলার নাম – এল.এ গার্ল কনসিলার, মেইবিলিন ফিট মি কনসিলার, ম্যাক প্রো লং ওয়্যার কনসিলার।
(৪) ফেস পাউডার
ফেসের ফাউন্ডেশন, কনসিলার সেট করে নেয়ার জন্য ব্রাশ/ পাফের সাহায্যে ফেস পাউডার পুরো মুখে বুলিয়ে নিতে হবে।কিছু ফেস পাউডারের নাম – রিমেল স্টে ম্যাট পাউডার, ফ্লোরমার ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই ফেস পাউডার, ম্যাক স্টুডিও ফিক্স পাউডার প্লাস ফাউন্ডেশন।
(৫) কন্টুরিং
ফেস স্লিম দেখাতে, ফেস এ শেডিং তৈরী করতে কন্টুরিং এর বিকল্প নেই। ডার্ক ব্রাউন কন্টুরিং পাউডার দিয়ে চোয়ালের নিচে, নাকের দুই পাশে, হেয়ার লাইনে, থুতনিতে কন্টুরিং করে নিতে হবে। কিছু কন্টুরিং পাউডারের নাম – বি এইচ কন্টর অ্যান্ড ব্লাশ প্যালেট, স্লিক কন্টর কিট, মেকাপ রেভ্যুলেশন আলট্রা কন্টর প্যালেট।
(৬) ব্লাশ
গালে সুন্দর আভা আনার জন্য ব্লাশ ব্যবহার করতে হবে। ব্রাশের সাহায্যে গালের উপরে ব্লাশ ব্যবহার করতে হবে এবং সেটা কন্টুরিং এর সাথে ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। কিছু ব্লাশের নাম – মেকাপ রেভ্যুলেশন সুগার অ্যান্ড স্পাইস ব্লাশ প্যালেট, স্লিক ব্লাশ, মেকাপ একাডেমী ব্লাশ।
(৭) হাইলাইটার
ফেসে গ্লো আনার জন্য ব্রাশের সাহায্যে চিক বোনে, নাকের উপরে, কপালে, ব্রো বোনের উপরে হাইলাইটিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে। কিছু হাইলাইটারের নাম – মেকাপ একাডেমী হাইলাইটার, মেকাপ রেভ্যুলেশন হাইলাইটার, ম্যাক সফট অ্যান্ড জেন্টল।
(৮) সেটিং স্প্রে
মেকাপের পাউডারী ভাব দূর করার জন্য এবং মেকাপ লং লাস্টিং করার জন্য পুরো মুখে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। কিছু সেটিং স্প্রে এর নাম – ম্যাক ফিক্স প্লাস, ইএলএফ স্টুডিও মেকাপ সেটিং স্প্রে, মেকাপ রেভ্যুলেশন অয়েল কন্ট্রোল সেটিং স্প্রে।
এই তো হয়ে গেল বেস মেকাপ।আশা করি আপনাদের কিছুটা হলেও মেকাপের আগে ত্বককে কীভাবে প্রস্তুত করবেন এবং বেস মেকাপের প্রাথমিক ধারনা দিতে পেরেছি।
ছবি – ওয়ালপেপারবেষ্ট.কম
লিখেছেন – জান্নাতুল মৌ