Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

জেনে নিন আর বেরিয়ে পড়ুন একদিনের ঝর্ণাবিলাসে!

$
0
0

ঝর্ণার দেশে একটা দিন গা ভাসিয়ে বেড়ানোর চিন্তা যাদের, তাদের জন্য ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকছে এই লেখায়। বর্ষার ঢল থাকতে থাকতেই ঘুরে আসুন ঝিরি-ঝর্ণার কাছে। জল থইথই ঝর্ণায় ভিজে শীতল হওয়ার এটাই তো সময়!

একদিনের ভ্রমণে চট্টগ্রামের মিরসরাই দারুণ একটি জায়গা। যাতায়াত ব্যবস্থা  ভালো হবার কারণে এই অঞ্চলটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ। পাহাড়ের গায়ে গায়ে, বুনো পথের শেষে ঝর্ণার দল দাঁড়িয়ে আছে যেখানে, সেখানে নিজের সব ক্লান্তি ধুয়ে নিতে চলে যান একবার সময় করে। ওখানকার পথঘাটের খবর থাকছে এখানে, জেনে নিন আর বেরিয়ে পড়ুন ঝর্ণাবিলাসে। খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ট্রেইলের ঝর্ণার দল, তাদের দেখে আসুন এইবার।

মিরসরাইয়ের বাসে চেপে নিজের শহর ছাড়বেন রাত করে। রাতের যাত্রাও কম রোমাঞ্চকর নয়। হাইওয়ের অন্ধকারের মাঝে যানবাহনের আলো, ক্লান্ত শরীরকে অনেকটাই চনমনে করে দিতে যথেষ্ট। পরের দিনটা যেহেতু পুরোই পথে কাটবে তাই রাতে ঘুমিয়ে নেয়া উচিত। বুনোপথে হাঁটতে গিয়ে ঘুমে ঢলে পড়বেন না যেনো!

বাস আপনাকে নামিয়ে দেবে মিরসরাই বাসস্ট্যান্ডে। এলাকাটা বাজারের কাছেই। খাবারের হোটেল পাবেন, নাস্তার পালা সেরে নিন ওখানে। ফিরতি টিকেট কেটে রাখুন সকালেই। অবশ্যই রাতের বাসের টিকেট করবেন। আলো ফোটার আগেই মিরসরাই পৌঁছে গেলে কাছাকাছি কোন চা-দোকানে অপেক্ষা করুন। গাইড ঠিক করে রাখতে পারেন আগেই, ওখানে চেনা কেউ থেকে থাকলে তার মাধ্যমে করতে পারেন কাজটা। কিংবা ওখানে গিয়ে স্থানীয় কাউকে সাথে নিয়ে নেবেন।

পেটে খাবার চালান দিয়ে আর সময় নষ্ট না করে ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে পা বাড়ান। বাজারের কাছেই লেগুনা পাবেন, যা আপনাকে নিয়ে যাবে খৈয়াছড়ার বাড়ির দুয়ারে। লেগুনা থেকে নেমে একটু ভেতরে আবার সিএনজি দেখবেন, তাতে চেপে বসুন। ঝর্ণার আরো কাছাকাছি নিয়ে যাবে সিএনজি আপনাকে। হাঁটাপথ শুরু হবে গ্রামের অনেকটা ভেতরে। আঁকাবাঁকা মেঠোপথের স্বাদ পেয়ে যাবেন ঝর্ণায় পৌঁছানোর আগে। আধা ঘন্টার বেশি লাগবে না খৈয়াছড়ার দেখা পেতে। এই ঝর্ণায় যাবার পথে ঝিরি পড়বে না খুব বেশি, ঝিরিপথের মজা ভরপুর পাবেন নাপিত্তাছড়ায়।

খৈয়াছড়ার প্রথম দর্শন একরাশ মুগ্ধতা দিয়ে যাবে। সেই অনুভূতি কাটিয়ে জলদি জলদি পানিতে নেমে পড়ুন। পরের গন্তব্যে সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে যে! খৈয়াছড়ায় যতো সকালে পৌঁছাতে পারবেন ততো ভালো, ঝর্ণা ফাঁকা থাকবে। বেলা গড়ানোর সাথে মানুষের দলও ঢল নামায়। সাতখানা ধাপ আছে এই ঝর্ণার। যতোগুলো দেখতে চান, পাহাড় বেয়ে উঠতে পারেন যতো ধাপ, দেখে আসবেন। শরীর পরিশ্রান্ত হবে কিন্তু ভালো লাগা বাড়বে আরো অনেক।

এই ঝর্ণার যেতে যে গ্রামখানা পেরোবেন, তাতেই মিলবে খাবারের দোকান। যাবার বেলা ফরমায়েশ দিয়ে গেলে ফিরে এসে খাবার তৈরি পাবেন। ঝর্ণা থেকে ফেরার পথে দুপুরের খাবার সারতে পারবেন ভাত-তরকারি দিয়ে। অমন পরিবেশে বসে সামান্য কিছু খেয়েও তৃপ্তি হবে। তারপর খানিক জিরিয়ে নিন। এরপরে খৈয়াছড়ার বাড়ি থেকে ফেরার পালা। ফিরে আসুন একই ভাবে, বড় রাস্তায় এসে আবার লেগুনার জন্য অপেক্ষায় থাকুন। এবার গন্তব্য নাপিত্তাছড়া।

নয়দুয়ারী আসবেন লেগুনায় করে। নেমেই গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করবেন। ট্রেইলটা দারুণ, পাহাড়ে চড়া, ঝিরির স্রোত ঠেলে এগোনো সবকিছুর স্বাদ পাইয়ে দেবে। চারটি ঝর্ণা মিলবে এই ট্রেইলে। টিপরাখুম, কুপিকাটাখুম, নাপিত্তাছড়া আর বাঘবিয়ানী। খেয়াল রাখবেন, চারটা ঝর্ণা সময় নিয়ে ভালো মতন ঘুরতে চাইলে যেতে হবে যতো জলদি সম্ভব। ঝিরির স্রোতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে খুব, মন চাইবে ঝর্ণায় গা ডুবিয়ে সময় ভুলে যেতে কিন্তু তা করলে তো হবে না। ফেরার তাড়া থাকা চাই। সন্ধ্যা নামার আগেই গ্রামের পথে ফিরে আসতে হবে। ফিরে চাইলে গ্রামের ঝুপড়ি দোকানেই চা-পর্ব মিটিয়ে নিন। তখনও পাহাড় থাকবে চোখের সামনে, দূরের হাতছানি হয়ে। সেই পাহাড়ের বুকে লুকিয়ে থাকা ঝর্ণায় খানিক আগেই দাপিয়ে এসেছেন। অদ্ভুত ঘোরলাগা ভাবনারা সব এসে জড়ো হবে মনের ভেতর।

ঘোর না কাটতেই নিজের ঠিকানায় পা বাড়ানো লাগবে। আবার সেই রাতের বাস, হলুদ আলো লুটিয়ে পড়া অন্ধকার হাইওয়ে, সারাদিনের ক্লান্ত শরীর আর অজস্র মুগ্ধতার ঘোর মনে নিয়ে ফিরে আসুন নিজের শহরে।

ছবি – ৫০০পিএক্স
লিখেছেন –  মুমতাহীনা মাহবুব


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles