Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

জামদানী- বাংলার মসলিন,বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার গৌরব

$
0
0

দু,এক ঘড়ি ছাড়া জটা

শেষে কাড়িয়ে তানা গাঁথা সানা।

সান পেতে শাড়ীর ঘটা।।

হয় যদি তব তার কানা ঘরে গুটিয়ে লব

শেষে দিব আলগা খেই পুরে

এক নজরে দেখাব সেটা

শেষে রোয়া গেঁথে নাচলিতে

জুড়ে ফেলব তানটা।

অসাধারণ কারিগরি নিপুণতা এবং নান্দনিক বয়ন নকশার “জামদানী” আমাদের তাঁতশিল্পের এক উজ্জ্বলতম উদাহরণ। মসলিনের পর বহির্বিশ্বে আমাদের বয়নশিল্পের গৌরব ধরে রেখেছে এই জামদানী। এমন কোন বাঙালি মেয়ে বোধ করি খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যার আলমিরাতে অন্তত পক্ষে একটি জামদানী শাড়ী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জামদানীর সম্পর্কে কিছু তথ্য।

জামদানীঃ
জামদানী কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত এক ধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীন কালের মসলিনের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানী শাড়ী বাঙালি নারীদের অতি জনপ্রিয় বস্ত্র।

নামকরনঃ
‘জামদানী’ নামের উৎপত্তি অনেকটাই অজানা। একটি মত অনুসারে ‘জামদানী’ ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি ‘জামা’ অর্থ কাপড়, আর ‘দানি’ অর্থ বুটি। সে অর্থে জামদানী অর্থ বুটিদার কাপড়।

আরেকটি মতে, ফার্সি ভাষায় ‘জাম’ এক প্রকার উৎকৃষ্ট মদের নাম এবং ‘দানি’ অর্থ পেয়ালা, যা খুবই শিল্পমণ্ডিত। অনেকের ধারণা, দুটো পন্যের উৎকর্ষতার কারণে রুপক অর্থে একই নাম ব্যবহৃত হয়েছে।

ইতিহাসঃ খ্রিষ্টপূর্ব ষোড়শ সতকের ইতিহাসে দেখা যায়, চন্দ্রগুপ্তের সভায় গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস দেখেছিলেন ফুলেল সৌকর্যের এক অসাধারণ মসলিন। ধারণা করা হয়, মেগাস্থিনিস যে মসলিন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সেটি আসলে জামদানী।

ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড দিল্লি গ্রন্থে জর্জ ওয়াটের ধারণা, জামদানী ডিজাইনের নমুনাগুলো নিঃসন্দেহে ইরানি শিল্প থেকে গৃহীত।

বৈশিষ্ট্যঃ
মসলিন ও জামদানী বস্ত্রে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সেদিক দিক থেকে, জামদানী মসলিনেরই একটি প্রজাতি। কিন্তু মসলিন থেকে জামদানির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর পাড় ও জমিনে বিভিন্ন রঙের অপেক্ষাকৃত মোটা সুতায় বুননের মাধ্যমে অসংখ্য দৃশ্য ও কারুকাজ।

জামদানী শিল্প অদ্বিতীয় মূলত দুটি কারণে।

প্রথমত, এর রয়েছে বৈশিষ্ট্যমূলক জ্যামিতিক প্যাটার্নের ধারাবাহিকতা। যা ইরানি প্রভাবে প্রভাবিত।
দ্বিতীয়ত, এর মোটিফ, যা বুননের সময়েই কাপড়ে খুব সুন্দর ভাবে গেঁথে যায়।

জামদানী শাড়ীর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর সুনির্দিষ্ট মোটিফ, অত্যন্ত সহজসরল কয়েকটি বাঁশের খণ্ডের সমন্বয়ে তাঁত, সাধারণ সুতা, সিল্ক ও জড়ি ইত্যাদি উপকরণ এবং তাঁতিদের স্মৃতিতে ধারণ করা কবিতার ছন্দে হাতে তোলা নকশার বয়ন পদ্ধতির কৌশল।

প্রাকৃতিক রুপ ও ছন্দের জ্যামিতিক রুপায়নে হাজার বছরের বিবর্তিত মোটিফ হচ্ছে জামদানী নক্সার মূল প্রাণশক্তি, যা দিয়ে আজো জামদানী শিল্পকে তার ব্যক্তিত্বে শনাক্ত করা যায়।

জামদানী পাড় ও আঁচলের নকশাঃ
জামদানীর জমিনের নকশা মূলত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত এবং তা হল বুটা, জাল ও তেছরি। এর মধ্যে জনপ্রিয় হল- শাপলা ফুল, সিঙ্গারা, বেলপাতা, ফড়িং ফুল, শঙ্খমতি ।

corola
করলা পাড়

kolka
কলকা পাড়

জামদানী শাড়ীর প্রকারভেদঃ
জামদানী শাড়ি ২ প্রকার।

১। হাফসিল্ক জামদানীঃ যার আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় রেশমের আর লম্বালম্বি সুতাগুলো হয় সুতার।

২। ফুল কটন জামদানিঃ যা পুরোপুরি তুলার তৈরি সুতায় তৈরি হয়।

ব্যবহারঃ
জামদানী শাড়ি ব্যবহারে চাই বিশেষ যত্ন। শাড়ি পরার পর অবশ্যই ভালো ভাবে বাতাসে শুকিয়ে তুলে রাখতে হবে, এছাড়াও অনেক দিন পড়ে থাকলে সাদা ছোপ পড়ে আপনার শখের জামদানী নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ২/১ মাস পর পরই শাড়ি বের করে বাতাসে শুকিয়ে নিয়ে রাখতে পারেন।কয়েক বার পরা হলে ড্রাইওয়াশ করে নেয়া উচিত।

কোথায় পাবেনঃ
এখন প্রায় সব ডিজাইনার হাউস যেমন- আড়ং, রঙ, ড্রেসিডেল, জয়ীতা, টাংগাইল শাড়ি কুটির অনেক ভালো ভালো কালেকশন রাখে জামদানীর। চাইলে বিয়ের জামদানীও খুঁজে নিতে পারেন এখান থেকে। আর সবচেয়ে ভালো হয় রুপগঞ্জ অথবা সোনারগাঁও এর জামদানীপল্লীতে যেতে পারলে। অসংখ্য রঙ আর ডিজাইন থেকে একেবারে মনের মত জামদানীটি নিয়ে আসতে পারবেন। চাইলে অর্ডার দিয়েও নিজের পছন্দ মত জামদানী তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন। দরদাম করে বেছে কিনতে পারলে ঢাকার চেয়ে অনেক কম দামে জামদানী পেয়ে যাবেন সেখানে। তবে সেক্ষেত্রে একটু সাবধান হতে হবে। অথবা জামদানী সম্পর্কে ভালো বোঝে এমন কাউকে সাথে নেবেন। নকল জামদানীর পিছনে দেখবেন কাটা কাটা সুতা, নিখুঁত নয়। আর আসল জামদানীর উল্টো দিকের ডিজাইনগুলো নিখুঁত হয়।

জামদানী আমাদের গর্ব, আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ। তাই জামদানীকে পয়লা বৈশাখের জন্য তুলে না রেখে বিয়েতেও পড়ুন, প্রিয়জনকে উপহার দিন। হয়ে উঠুন সবার মধ্যে অনন্যা।

লিখেছেনঃ মাহবুবা বীথি
তথ্যসূত্রঃ
১। ‘আমাদের প্রাচীন শিল্প’, তোফায়েল আহমেদ।

২। ‘জামদানি’, মোহাম্মাদ সাইদুর।

৩। জামদানী, উইকিপিডিয়া।

৪। ছবিঃ ঢাকাই জামদানী নকশার একাল সেকাল, অনার্য তাপস, Book পকেট, বাংলা আন্তরজাল পত্রিকা, ক্লিক বিডি


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles