বাজারে অনেক রকম সান প্রোটেকশন পাওয়া যায়। ত্বক, বয়স ও কার্যকারীতা ভেদে একেক জনের জন্য একেক রকম সান প্রোটেকশন প্রয়োজন হয়। আমরা সবাই জানি রোদ আমাদের ত্বকের জন্য কতটা ক্ষতিকর, টানা দীর্ঘ সময়ের রোদের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। কাজেই সান প্রোটেকশনকে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া, ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ঠিকমত সান প্রোটেকশন ব্যবহার না করা। আপনারা অনেকেই হয়ত সানস্ক্রিন, সানব্লক, ব্রড স্পেক্ট্রাম, SPF, PA শব্দগুলোর সাথে পরিচিত আছেন। আপনার সান প্রোটেকশনের গায়ে কোন লেখাটি কি বুঝায় চলুন জেনে নিই।
সানস্ক্রিন
কেমিক্যাল সান প্রোটেকশনকে সানস্ক্রিন বলা হয় এবং এরা মূলত UVB রশ্মিকে ব্লক করে। সানস্ক্রিন হালকা ও ট্রান্সপারেন্ট হয়ে থাকে বলে অল্প সুরক্ষা ও মেক আপের নিচে বেশি উপযোগী। তবে আজকাল কিছু সানস্ক্রিনেও UVA ব্লক করার উপাদান থাকে।
সানব্লক
সানব্লক হচ্ছে ফিজিকাল সান প্রোটেকশন। এরা মূলত প্রধান উপাদান হিসেবে জিংক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইডের মত মিনারেল ব্যবহার করে থাকে এবং UVA ও UVB দুই রশ্মির সাথেই মোকাবেলা করতে সক্ষম। এরা সাধারণত সানস্ক্রিনের তুলনায় বেশি সাদা, ভারি ও ভিসিবল হয়ে থাকে। সানব্লক ব্যবহারে অনেকেই ‘হোয়াইট কাস্ট’ এর সমস্যায় ভুগে থাকেন। সানব্লকের টেক্সচারটাই এমন। তবে রোদ থেকে বাঁচাতে এটিই সর্বাধিক কার্যকর।
ব্রড স্পেক্ট্রাম
আমরা তো সবাই জানি সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি UVA ও UVB আমাদের ত্বকের জন্য সমান ক্ষতিকর। আমাদের ত্বকের সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য দুটো রশ্মিই ব্লক করা প্রয়োজন। কোন সান প্রইটেকশনের গায়ে ব্রড স্পেক্ট্রাম লেখা থাকার মানে হল সেটি UVA ও UVB উভয় থেকেই ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে পারে। তাই সান প্রোটেকশন কেনার আগে প্রোডাক্টের গায়ে ‘ব্রড স্পেক্ট্রাম’ দেখে কিনুন।
SPF:
SPF (Sun Protection Factor) হল কোন সান প্রোটেকশন কত সময় ধরে আপনার ত্বককে ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে তার পরিমাপ। ত্বকের সুরক্ষার জন্য সর্বনিম্ন SPF৩০ ব্যবহার করা উচিত, এটি ৯৭% সুরক্ষা দিতে পারে এবং (৩০*১০=) ৩০০ মিনিট সুরক্ষা দেয়। যদিও কোন সান প্রোটেকশনই ১-২ ঘণ্টার বেশিক্ষণ কার্যকর থাকে না। SPF৪৫ ৯৮% সুরক্ষা দেয়। তবে SPF যাই হোক না কেন প্রতি ২-৩ ঘন্টা পর পর অবশ্যই পুনঃব্যবহার করুন।
PA:
এশিয়ান সান প্রোটেকশনগুলোতে সাধারণত PA+, PA++, PA+++ লেখা দেখা যায়। এটাও SPF এর মতই একটি ফ্যাক্টর যা প্রোটেকশনের মাত্রা নির্ধারণ করে। যার গায়ে ‘+’ চিহ্ন যত বেশি সেটি তত বেশি UVA ও বেশিক্ষণ ধরে সুরক্ষা দিতে পারে। PPD ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে এদেরকে শ্রেনীভেদ করা হয়।
PA+: এর PPD ফ্যাক্টর ২-৪ ঘণ্টা, সবচেয়ে কম সুরক্ষা দেয়, বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে ব্যবহারোপোযোগী।
PA++: এর PPD ফ্যাক্টর ৪-৮ ঘণ্টা, মোটামুটি সুরক্ষা দেয়, বেশ কিছু সময় রোদে থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে।
PA+++: এর PPD ফ্যাক্টর ৮ থেকেও বেশি, বর্তমানে এটিই সর্বাধিক সুরক্ষা দিয়ে থাকে। যাদের অধিক সময় রোদে কাজ করতে হয় তাদের জন্য ভাল।
যা না জানলেই নয়-
- রোদে বেরুবার অন্তত ২০-৩০ মিনিট পূর্বে সান প্রোটেকশন ব্যবহার করতে হবে।
- প্রতি ২-২.৫ ঘন্টা পরপর পুরনো সান প্রোটেকশন ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করতে হবে।
- বাতির নিচে ও রান্নার সময় সান প্রোটেকশন ব্যবহার করা জরুরী।
- বাড়িতে থাকাকালেও সান প্রোটেকশন বাদ দেয়া যাবে না।
- পুরো মুখে একটি কয়েন পরিমাণ সান প্রোটেকশনই যথেষ্ট।
- শুধুই মুখেই নয় হাত, পা, গলা, ঘাড় যা কিছুই রোদের কবলে পড়তে পারে সে সব জায়গায় সান প্রোটেকশন ব্যবহার করতে হবে।
- বাড়ি ফিরে মেক-আপ রিমুভার/ক্লিনজিং মিল্ক/অলিভ ওয়েল/বেবি ওয়েলের সাহায্যে সান প্রোটেকশন পরিষ্কার করা; নয়ত পোর ব্লক হয়ে যেতে পারে।
- সান প্রোটেকশনের বোতলে মেয়াদোত্তীর্ন তারিখ, যার যার উপযোগী SPF(ব্যক্তিগতভাবে আমি SPF৫০ পছন্দ করি), ব্রড স্পেক্ট্রাম, PA+++, নন-কমেডোজেনিক এবং বর্ষাকালে ও সুইমিং এর সময় ওয়াটারপ্রুফ লেখা দেখে কিনুন।
- অবশ্যই আসল পণ্য কিনুন।
আশা করি সবার ভাল লেগেছে। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনায় আজ এ পর্যন্তই।
ছবি – ডেইলিবার্ন.কম
লিখেছেন – রোজা স্বর্ণা