দীর্ঘদিনের “ভালো লাগে না” রোগীদের নিয়ে কিছু কথা বলতে যাচ্ছি। প্রথম লাইনেই কপালে ভাঁজ পড়লো কি? একটু যেনো খটোমটো লাগছে জিনিষটা। আসলেও কিন্তু তাই। জিনিষটা খানিকটা নয়, বরং বেশ অনেকটাই খটোমটো।
ভালো লাগে না, এটা কেমন রোগ বাপু, আবার সেইসব রোগীদের নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে! এমনটাই ভাবছেন? তবে কিনা, এই কেমন কেমন লাগিয়ে দেয়া জিনিষটা খুব একটা এড়িয়ে যাবার মতন নয়। বরং খুব জটিল হয়ে উঠতে পারে যদি না সময় থাকতে সচেতন হওয়া যায়। কাজেই কপালে ভাঁজ না ফেলে জেনে নিন তো, নিজের অজান্তে আপনিও এই আজব রোগের রোগী হয়ে যাচ্ছেন কিনা।
সাদা চোখে খুব সাদামাটা লাগা এই জিনিষখানা আপনার নিজের নিজের জীবন এবং আপনার কাছের মানুষদের জীবনেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ভয়াবহ দিকটা হচ্ছে যে আপনি বা আপনারা এই ক্ষতিটা টেরই পাচ্ছেন না। তাই আজব আজব ঠেকলেও একটু মাথা ঘামাতে হবে বৈকি।
আচ্ছা, ভালো লাগে না বিষয়টা আসলে কী? এটা ঠিক কেমন অবস্থা? সত্যিই এটা মনের কোন অসুখ? প্রশ্নগুলো অনেকের মনেই আসবে। সব উত্তর আমাদের পক্ষে ঠিক ঠিক বের করে ফেলা সম্ভব নয়, তবে একটু বুঝে নেয়ার চেষ্টা তো করাই যায়। আজকে সেটাই করি বরং।
খুব নির্দিষ্ট করে এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করা মুশকিল। মনরোগ বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী সমাধান দিতে পারবেন। তবে ডাক্তারের কাছে তো আমরা তখনই যাবো যখন আমাদের অসুখ হবে। তার আগে তো নয়, তাইনা? তাই বলতে চাচ্ছি, অসুখটা হবার আগেই সামলে নিন। এমনিতেই মনের অসুখ নিয়ে আমাদের সমাজে নানা রকম হাসিঠাট্টা প্রচলিত আছে। সেই পর্যন্ত ব্যাপারটাকে গড়িয়ে নিয়ে কী কাজ বলুন? আর যেকোন বিষয়েই কিন্তু ঝামেলা পাকিয়ে মেটানোর চেয়ে ঝামেলা সম্পর্কে আগেভাগে সাবধান হওয়া ভালো।
কখন তবে বুঝবেন যে আপনার এই “ভালো লাগে না” বিষয়টা ঝামেলার দিকে যেতে পারে?
হ্যাঁ, খুব বাড়াবাড়ি না হলে এই জিনিষটা মোটেও কোন সমস্যা না, রোগ তো নয়ই। তবে যদি নিয়মিত সবকিছুতেই এই ভালো না লাগার উপস্থিতি থেকে থাকে, তবে এটা বাড়াবাড়ি আর সেক্ষেত্রে এটা অবশ্যই একটা সমস্যা।
যেকোন বিষয়েই ভালো না লাগার অংশটুকু প্রাধান্য পাচ্ছে। একটা বিষয় ভালো লাগলেও তার কিছু কিছু দিক আমাদের বাজে লাগতেই পারে, সেটা স্বাভাবিক। তবে ওই অল্প একটু বাজে লাগার দিকটাই মাথায় রয়ে গেলো। মনে হতে থাকবে পুরোটা বিষয়ই কেমন কম ভালো হয়ে লাগছে। মন খারাপ হবে বা মেজাজ বিগড়ে যা্বে তখন। এই যে, ভালো লাগে না পর্বের শুরু কিন্তু হলো বলে! এই ব্যাপারটা মাথায় থাকবে আর থেকে থেকেই জানান দিয়ে যাবে, আপনার ভালো লাগছে না। প্রায় সময়ই এমনটা ঘটছে, অহরহ এমন অবস্থা দেখছেন আপনি, তাহলে কিন্তু আপনার একটু বোঝা উচিত আপনি ঠিক কেমন অবস্থায় আছেন।
কোন কাজের শুরুতে বা মাঝে এসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। হয়তো কাজটা আপনার অনেক আগ্রহেই শুরু হয়েছে, আপনার খুশির জন্যই হতে যাচ্ছে কিন্তু এখন আপনি নিজেই পিছু হটছেন। মন দিতে পারছেন না। কাজটাই মজা লাগছে না আর। সহযোগীরা চেষ্টাও করছে আপনার মাঝে আগ্রহ ফিরিয়ে আনার কিন্তু আপনি একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নিজেই বুঝছেন না আপনার আসলে কী হয়েছে। ভালো লাগে না অবস্থাটা তবে জেঁকে বসেছে, খেয়াল রাখবেন।
প্রিয়জনের খুশির কথা ভেবেও কখনো নিজের ভালো না লাগাটা এড়িয়ে যেতে পারছেন না, নিজের অসুবিধা ভুলে গিয়ে,এই দিকটা পুরো বাদ দিয়ে বন্ধুদের আনন্দেও থাকছেন না প্রায় সময়ই, তবে সমস্যাটা মাত্রা ছাড়াচ্ছে মানতে হবে।কাজেই সমস্যাকে মাত্রা ছাড়াতে না দিয়ে সমস্যাটা ছাড়ার কথা ভাবুন। সময় থাকতেই উপায় খুঁজুন।
দীর্ঘদিনের টানা ভালো লাগে না মতন অবস্থা ধীরেধীরে আপনাকে এক রকম সমস্যার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। অসুখ বলে না মানলেও এটা অসুবিধা তো বটেই। মাঝেসাঝে একটা প্রিয় জিনিষও আমাদের ভালো না লাগতে পারে। মন খারাপের সময়টায় প্রিয় খাবারও বিস্বাদ ঠেকতে পারে। খুব দুশ্চিন্তার সময়ে কখনো বন্ধুর হাসিঠাট্টাও অসহ্য লেগে যেতে পারে।এগুলো খুব বেশি সাধারণ ও স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই বলে একটানা বহুদিন, অনেক অনেকটা সময় আপনি এই ভালো না লাগার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেটা কেমন করে খুব স্বাভাবিক হবে?
এসব ভালো লাগে না অবস্থাগুলো যখন অহরহ হচ্ছে, অনেক বেশিদিন যাবৎ চলছে আর যখন হচ্ছে খুব প্রবল মাত্রায় আপনি টের পাচ্ছেন, তখন জেনে নিন যে আপনি একটা সমস্যার মাঝে আছেন।
সমস্যা নিয়ে তো কথা হলো, সমাধান তবে কী? এটা সম্ভবত পুরোটাই যার সমস্যা তার হাতে। আপনি নিজেই নিজেকে বের করে আনবেন এই আজব অবস্থা থেকে। কারণ দেখুন, সমস্যাটার উৎপত্তি গোড়া থেকেই আপনার মনে অথবা মগজে। বিষয়টা প্রায় সবটুকুই আপনার ভেতরে তৈরি হয়ে আপনাকে প্রভাবিত করছে। এই প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করার কৌশল আপনারই বের করা লাগবে। যতোটা সম্ভব সজাগ থেকে এই ভালো লাগে না এর পোকাটা তাড়িয়ে রাখতে হবে আপনার। আপনি যখন সচেতন থাকবেন, খুব ভালো লাগার মতন কিছু একটা বিষয় নিয়ে তখন আগেই খেয়াল থাকবে যে ওই পোকাটা মাথার ভেতর ঘ্যানরঘ্যানর করতে শুরু করতে পারে। তাই ভালো লাগছে না এই ভাবটা এলেও কিছুতেই আপনি পাত্তা দেবেন না।
নিজেকে বলবেন, এইটা সেই দুষ্টু মাছি, একে তাড়িয়ে দাও! নিজেকে নিজে বোঝাতে না পারলে মন আরো খারাপ করে বসবেন না। কাছের কেউ একজন যে আপনাকে খুব ভালো বোঝাতে পারে, যে আপনাকে ভালো বুঝতে পারে, তেমন কারো কাছে যাবেন। তাকে বলবেন, এই অবস্থাটা কাটিয়ে উঠতে আপনি তার সাহায্য চাচ্ছেন। বেছে নিন সেই মানুষকে যার কথায় আপনি প্রভাবিত হন।
সব কথার শেষ কথা, নিজের মাঝে এতো “ভালো লাগে না” পুষে রেখে কাজ নেই। সব ভালো না লাগাদের ঝেড়ে বিদায় দিন, আমাদের জীবনটা তো এতোটাও খারাপ না! নিজেকে ভালো রাখুন সবার আগে, তবেই তো ভালো থাকবে আপনার পৃথিবী।
ছবি - ফটোগ্রাফারস.ক্যানভেরা.কম
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব