বেশ কয়েক বছর আগেও দেখা যেত মেয়েরা এই মোটা বেণী করে বাইরে যাচ্ছে। আর আমাদের মা খালাদের তো সব সময়ই দেখে এসেছি লম্বা বেণীতে বা বিশাল খোঁপায় নিজেদের সাজাতে। কিন্তু সময় পাল্টেছে। চারিদিকের দূষণ, ব্যস্ত জীবন যাত্রায় যত্নের অভাব, নানা রকম চুলের সাজ করতে গিয়ে কেমিক্যালের ব্যবহার করতে করতে অনেকেই যে সমস্যায় পড়েছেন চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে। আগে হয়তো ঠিকই ঘন চুল ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। অনেকের আবার কোন অসুস্থতার কারণে চুল পড়ে পাতলা হয়ে গিয়েছে। তাই চুল সাজাতে গেলেই এখন দরকার পড়ে আর্টিফিশিয়াল হেয়ার এর। অথবা কেউ কেউ আবার অনেক টাকা খরচ করে দামি শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ট্রাই করেই যাচ্ছেন, কিন্তু আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না। আজ তাই বলব বেশ কিছু জিনিসের কথা যেগুলো রয়েছে আপনার কাছেই, দাম ও সাধ্যের নাগালে সেই সাথে নেই কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
(১) অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার গুণের নেই কোন শেষ। চুলের যত্নে এটি অনেক বেশি কার্যকরী। ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি আপনাকে ফিরিয়ে দেবে ঘন ও উজ্জল চুল। এটি চুলের ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ময়েশ্চার যোগায়। অ্যালোভেরার জেল বের করে সরাসরি চুলে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা সময় দিন শুকাতে। তারপরে শ্যাম্পু করে নিন। এটি হেয়ার ফল কন্ট্রোল করার পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে। সেই সাথে চুল ও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। নিয়মিত করলে লক্ষণীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে অল্প কিছু দিনেই।
(২) ডিম
চুল ঘন করার পাশাপাশি আপনি যদি চুল লম্বা করতে চান তাহলে চুলের প্যাক হিসেবে ব্যবহার করুন ডিম। ডিমের এই প্যাক প্রোটিন ট্রিটমেনট হিসেবে কাজ করবে ও চুল করবে শক্ত। চুলের ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্য অনুযায়ী একটি বা দুটি ডিম ভেঙে ফেটে নিয়ে চুলে লাগান। ডিমের গন্ধ বেশি খারাপ লাগলে, সাথে কোন একটা সুগন্ধি তেল মেশাতে পারেন। পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ভালোভাবে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে ২ বার করলে মাস খানেকের মধ্যেই চুলে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসবে।
(৩) মেথি
চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার অনেক পুরনো। রান্না ঘরেই পেয়ে যাবেন চুলের যত্নের এই অসাধারণ উপকরণ। মেথি একরাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ভালোভাবে বেটে নিয়ে চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে রাখুন এক ঘণ্টার মত। তারপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল ঘন তো করবেই পাশাপাশি চুল হবে নরম ও শাইনি। সপ্তাহে মাত্র একদিন ব্যবহার করলেই এক মাসেই ফল পাবেন।
(৪) আমলকী
চুলের যত্নে আমলকীর ব্যবহার বহুবিধ। এটি চুলের গোঁড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায়, চুলের বৃদ্ধি বাড়ে, চুল সাদা হওয়া থেকে রক্ষা করে, চুলের স্বাভাবিক রঙ ঠিক রাখে, চুলকে উজ্জ্বল করে।
বাজার থেকে আমলা তেল না কিনে নিজেই ঘরে আমলা তেল তৈরি করে চুলে লাগান। এছাড়াও বাজারে আমলকীর গুঁড়া পাওয়া যায় সেটা ব্যবহার করতে পারেন চুলের প্যাকের সাথে। তবে আমলা তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
(৫) জবা ফুল
জবা ফুল চুল ঘন করার পাশাপাশি চুল অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে। জবা ফুলের পেস্ট তৈরি করে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে রাখুন। বিশ মিনিট পরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
(৬) হেনা বা মেহেদি
হেনা চুলের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ভলিউমাইজার হিসেবে কাজ করে। চায়ের লিকার, ডিম, লেবুর রস, টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিন হেনা পাউডার। ঘণ্টা খানিক এভাবেই রেখে দিন। তারপরে ব্রাশ এর সাহায্যে পুরো চুলে লাগান। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
উপরে যে উপাদানগুলোর কথা বলা হল সেগুলো চুল ঘন করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। আপনার যদি বড় ধরনের কোন শারীরিক সমস্যা না থেকে থাকে, তাহলে এই ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়মিত চর্চা করলে চুল অবশ্যই ঘন হবে। তারমানে এই না যে এক মাসেই আপনার চিকন বেণী মোটা হয়ে যাবে। ওটা শুধুমাত্র টিভি কমার্শিয়াল এই সম্ভব, বাস্তবে ঐ প্রোডাক্ট ও একমাসে কোন আহামরি পরিবর্তন করতে পারবে না। এই উপাদান গুলো ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হবে, চুল উজ্জ্বল হবে, তবে কাংখিত ঘন চুল পেতে হলে ধৈর্য ধরে এগুলো ব্যবহার করতে হবে অন্তত তিন মাস। কারন নতুন চুল গজালেও সেটা লম্বা হবার জন্য একটা মিনিমাম সময়তো লাগবে। তাই বাজারের নানান রকমের কেমিক্যাল ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদানের হাতেই ছেড়ে দিন আপনার চুল। চুল ভালো থাকবে প্রাকৃতিক যত্নে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি – বিউটিহেলথ.টিপস
লিখেছেন – মাহবুবা বীথি