আমার জীবনের এক নম্বর প্রায়োরিটি কি এ প্রশ্নটি যদি এ মুহূর্তে করে, উত্তর দিতে এক মুহূর্ত দেরি হবেনা : ইটস মাই ফিজিকাল ফিটনেস।
হতাশার কালো মেঘ খুব নির্মমভাবে যখন ঘিরে ধরেছিল, চারদিক থেকে এলোকেশী ঝড় যখন একের পর এক আমার স্বপ্নগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল, তখন ভাবছিলাম, কীভাবে পাল্টা আঘাত হানা যায়?
চিন্তা করে দেখলাম, to take back the control over my life, the first thing I have to do is to take control of my own body, my physique.
প্রাক্তন বিএমএ ক্যাডেট, আর্মি কমান্ডোদের কাছে কাউন্টার টেররিজম ট্রেনিং পাওয়া মাসরুফ হোসেনের ওজন দাঁড়িয়েছিল একশ কেজির উপর। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি এক সময়ের এ্যাথলেটিক দেহ আয়নায় দেখলে মনে হত, এ ব্যাটা জীবনেও দু পা হাঁটেনি। সুশি, ইয়াকিনিকু, পিজা, পাস্তা, চীজকেক আর কোকের উপর থাকতে থাকতে দেহটাকে মন্দির থেকে কবে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছি, বুঝতেই পারিনি। সিঁড়ি দিয়ে হাঁটলেই সারমেয়ের মত জিভ বেরিয়ে যেত, প্যান্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে থাকত থলথলে মেদ, গলার নিচে ডাবল চিন- বয়েস ত্রিশের বদলে মনে হত তেতাল্লিশ।
ঠিক এ সময় ঠিক করলাম, এনাফ ইজ এনাফ। আমার মন বাস করে আমার দেহে, কাজেই মন ঠিক করতে দেহ ঠিক করতে হবে শুরুতেই। জানুয়ারির ছয় তারিখ থেকে নীচের পদক্ষেপগুলো নিলাম:
(১) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে সবার আগে ঝেঁটিয়ে চিনি আর মিষ্টিজাতীয় সব বিদায় করলাম। চীজকেক, চকলেট পাই, ডেইরি মিল্ক চকলেট, প্যাস্ট্রি, কোক, পেপসি- সবকিছু।
(২) সাদা কার্বোহাইড্রেট পুরো বাদ। ভাত, পাস্তা, পাঁউরুটি,নুডুলস- সম্পূর্ণ বন্ধ।
(৩) ডিনার বা লাঞ্চে পেট ভরতাম প্রচুর পরিমান সালাদ ( লেটুস পাতা, শশা, টমেটো কুচি), সাথে ইচ্ছে মত চিকেন অথবা ফিশ খেতাম। চিকেন বা মাছ সম্পূর্ণ তেল ছাড়া রান্না- ওরকম না পেলে ঝোল থেকে তুলে লেবু চিপে তারপর খেতাম। সালাদ ড্রেসিং সাথে থাকত অল্প পরিমানে, স্বাদের জন্য।
(৪) সকালের নাস্তা ঘুম থেকে উঠেই খেয়ে নিতাম। নন স্কিম দুধের ভেতর ওটমিল, কলা আর আপেল দিয়ে ব্লেন্ডারে মিশিয়ে দুই গ্লাস খেলে দুপুর পর্যন্ত ক্ষুধা লাগত না।
(৫) নাস্তা হিসেবে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ আর ডিনারের ফাঁকে খেতাম দুটো করে সেদ্ধ ডিম ( কুসুম সহ পুরো) অথবা একটা করে আপেল।
(৬) সারাদিনে পানি খেতাম দুই থেকে তিন লিটার এর বেশি ( দশ- পনের গ্লাস)।
(৭) ঘুমাতাম ছয় ঘন্টা থেকে আট ঘন্টা।
(৮) সপ্তাহে ছয় দিন প্রতিদিন আধঘন্টা থেকে এক ঘন্টা শরীর ঘামাতাম। দৌড়, ক্রাভ মাগা (Krav Maga), ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, স্ট্রেংথ ট্রেনিং- যখন যেটা ভাল লাগত। তবে যাই করতাম, দর দর করে ঘাম বের না হওয়া পর্যন্ত থামতাম না।
(৯) প্রতিদিন যা করি, তা একটা খাতায় লিখে রাখতাম। কতক্ষন ঘুমিয়েছি, কি খেয়েছি, কি ব্যায়াম করেছি, সব সংক্ষেপে লেখা থাকত। যখন যেটাতে পারফরম্যান্স একটু খারাপ হত, পরের দিন সেটায় নজর দিতাম।
(১০) জাংক ফুড, ফাস্ট ফুড হারাম করে দিয়েছিলাম। নো বার্গার, নো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, নাথিং। বরং মাঝে মাঝে গরুর মাংসের কাবাব (steak) খেতাম, তিন কোনা যে পনির পাওয়া যায় ওগুলো খেতাম। পরিমিত পরিমাণ ফ্যাট খেলে ক্ষতি নেই।
প্রথম মাসে এই নিয়মগুলো পুরো ধার্মিকভাবে মেনে চলার পর দেখলাম, চার সপ্তাহে ধুম করে দশ কেজি ওজন উধাও! পরের চার সপ্তাহে আরো চার কেজি – মোট চোদ্দ কেজি কমল আট সপ্তাহেই। শুধু তাই না, আমার সারাদিন ফুরফুরে লাগা শুরু করল, পড়াশোনায় মন বসানো সহজ হয়ে গেল, এক পা দু পা করে হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করলাম, বিশাল বিশাল সব সমস্যা চোখে চোখ রেখে সামাল দিলাম।
All of them were possible because I decided to become physically fit, literally.
আপনাদের সহযোদ্ধা হিসেবে আমি চাই আপনারাও এভাবে নিজেদের জীবনের হারানো নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনুন, তাড়া করুন নিজের স্বপ্নকে।
এবার কিছু বেসিক গাইডলাইন দেই:
এক) আমি যে নীতিমালা অনুসরণ করেছি তা হচ্ছে Gary Taubes ( Good Calorie Bad Calorie), Michael Matthews ( Bigger, Leaner, Stronger) এবং Arnold Schwarznegar ( Modern Encyclopedia of Bodybuilding) থেকে পাওয়া পদ্ধতিগুলোর সংমিশ্রণে Trial and Error এর মাধ্যমে ঠিক করা। ফিজিকাল ফিটনেসে “ওয়ান সাইজ ফিটস অল” বলে কিছু নেই। আপনার জন্যে কোনটা কাজে আসবে সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। মূল কথা হচ্ছে শক্ত হাতে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং লেগে থাকা। শরীর অমূল্য সম্পদ, এর যত্ন নিলে এ আপনার যত্ন নেবে। বারাক ওবামা নিয়মিত বাস্কেটবল খেলেন, রবিঠাকুর কুস্তি লড়তেন, বঙ্গবন্ধু ফুটবল খেলতেন। আপনার কিসের অজুহাত শরীরের যত্ন না নেবার?!
দুই) যে ছবিটা দেখছেন ওটা দু মাস আগে আমার ভুঁড়ির ছবি। এই কুৎসিৎ, থলথলে বস্তুটি দেখে হাসি আর বমি দুটোই পাচ্ছে, তাইনা? এবার চিন্তা করুন, মাত্র আট সপ্তাহে ও জিনিস আমি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি- স্রেফ ইচ্ছাশক্তির জোরে। এ লেখা পড়ে আপনারাও শুরু করে দিন, আজ থেকেই! কোন সাহায্য লাগলে এই গরীব তো আছেই! আজকেই শুরু করুন, ছবি তুলুন, দুই মাস পরে দেখুন!
তিন) ফিজিকাল ফিটনেস এক বা দুমাস নয়, সারাজীবন ধরে রাখার জিনিশ। আমাদের শরীর একটা যন্ত্রের মতই, যত এর যত্ন নেবেন ততদিন এটা ভাল সার্ভিস দেবে। আমাদের বাঙালি খাদ্যাভ্যাস সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর গুলোর একটি। যদি বাঁচতে চান, নিজেকে পাল্টান। আর এই পাল্টানো শুরু হোক এই লেখা পাঠের মাধ্যমেই।
চার) স্বপ্ন দেখি, ভেতো আর দুর্বল বাঙালির অপবাদ দূর হবে, বাংলাদেশের তরুন তরুনীদের সুঠাম দেহ সারাবিশ্বের ঈর্ষার বস্তু হবে। সুশীখোর, জলহস্তীর মানব সংস্করণ মাসরুফ যদি দু মাসে পাল্টাতে পারে, আপনিও পারবেন।
গেট সেট গো!!!
ছবি এবং লিখেছেন - মাসরুফ হোসেন
চলবে………