Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

শিশুর হাম হলে পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং এর চিকিৎসা কী?

$
0
0

বসন্তের মতো হামও খুব পরিচিত একটি অসুখ। তবে বসন্ত এখন আর দেখা না গেলেও হাম প্রায়ই দেখা যায়। এটি একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। রোগটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, তৈরি হতে পারে নানা জটিলতা। সাধারণত শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বড়রাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে হাম একটি নিরীহ রোগ। তবে পুষ্টিহীন শিশুরা হামে আক্রান্ত হলে এর পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ, এমনকি এর ফলে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আজকের আর্টিকেলে জানাবো শিশুর হাম হলে পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে।

কোন কারণগুলোর কারণে হাম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়? 

টিকা না দিলে 

শিশুকে হামের প্রতিষেধক টিকা দেয়া না থাকলে এই রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই টিকা দেয়ার ব্যাপারে অভিভাবকের সচেতন থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি। শৈশবে টিকা দেয়া না হলে বড় হওয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়।

শিশুর হাম প্রতিরোধ করতে টিকা

ভিটামিন এ এর অভাব হলে

ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুর হামে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে হামের জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই শিশুদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ যুক্ত খাবার অবশ্যই রাখুন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। তাই যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তাদের বেশি। বড়দের মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেমন- লিউকেমিয়া বা এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির হামের ঝুঁকি বেশি থাকে এবং জটিলতা বেশি দেখা দেয়।

হাম প্রাদুর্ভাবযুক্ত দেশে ট্রাভেল করলে 

আপনার যদি ট্রাভেলিং এর অভ্যাস থাকে এবং যদি এমন কোনো দেশে ঘুরতে যান যেখানে হামের প্রাদুর্ভাব বেশি, তাহলে আপনিও হামের জীবাণুর মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। শিশুরাও যদি বাবা-মায়ের সাথে এমন দেশে ভ্রমণ করতে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তারাও ঝুঁকিতে থাকে।

হামের উপসর্গ 

১) প্রথমে দুই থেকে তিন দিন তীব্র জ্বর, সর্দি-কাশি ও ক্লান্তি থাকে।

২) শরীর ম্যাজম্যাজ করে এবং ব্যথা হয়।

৩) চোখ লাল হয়ে যায়।

৪) চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

৫) হাঁচি, কাশি ও গলা ব্যথা হয়।

৬) নাক দিয়ে অনবরত পানি বা সর্দি পড়ে।

৭) খাবারে অরুচি হয়।

৮) ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে শরীরে লালচে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই ফুসকুড়ি কানের পিছন দিক থেকে শুরু করে মুখ, পেট, পিঠ, হাত-পা ও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

৯) মুখের ভেতরে গালের দিকে সাদাটে বা লালচে বৃত্তের মতো দাগ দেখা যেতে পারে। একে কপলিক স্পটও বলা হয়ে থাকে।

শিশুর হাম হলে তীব্র জ্বর আসতে পারে

হামের জটিলতা

অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশু বড় কোনো জটিলতা ছাড়াই হাম থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হামে শিশু মৃত্যুর হার ১-৩ শতাংশ। তবে জটিলতা দেখা দিলে সেটি ১৫ শতাংশে গড়াতে পারে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানপাকা, কর্নিয়ার ক্ষত, নাকে-মুখে ঘা, অপুষ্টি, সেপটিসেমিয়া (রক্তে ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়া) এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস এর মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় হাম হলে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এর ফলে সময়ের আগেই বাচ্চা হয়ে যাওয়া, অপুষ্ট শিশুর জন্ম এমনকি গর্ভপাতসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এই রোগের চিকিৎসা কী? 

১) সারা শরীরে র‍্যাশ পুরোপুরি ওঠার পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে মিলিয়ে যেতে শুরু করে। ত্বকের চামড়া উঠে যায় এবং বাদামি দাগ পড়ে যায়। প্রথম কয়েকদিন প্রচন্ড জ্বর থাকে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন, ভিটামিন-এ এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিভাইরাল মেডিসিন সেবন করা যেতে পারে।

২) হামের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না, তবে হামের কারণে অন্য কোনো ইনফেকশন যেমন- কানে বা রক্তে ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে। তবে যে মেডিসিনই দেয়া হোক না কেন অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

৩) এ সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে শিশুকে প্রচুর তরল খাবার ও পানি খাওয়ানো জরুরি।

৪) সঠিক চিকিৎসা, তরল খাবার ও প্রচুর পানি পানের মাধ্যমে ১০/১২ দিনের মধ্যেই সাধারণত হাম সেরে যায়।

৫) পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুকে র‍্যাশ মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আলাদা রাখতে হবে।

হাম হলে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার ও পানি খাওয়াতে হবে

যে বয়সে টিকা দেয়া জরুরি 

শিশুর যদি হামের টিকা না দেয়া থাকে এবং পূর্বে কখনো তার হাম না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে শিশুর হামে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% বেশি থাকে। সময়মতো অর্থাৎ শিশুর নয় মাস পূর্ণ হলে এবং ১৫ মাসে হামের টিকা দেওয়া জরুরি। আগে একবার হামের টিকা দেওয়া হতো। কিন্তু একবার টিকা দিলে প্রায় ৯৩% সফলতার সম্ভাবনা থাকে। তবে দুই ডোজ দিলে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭% হয়। তাই দুই ডোজ টিকা দেওয়া জরুরি। আবার টিকা দেওয়ার পদ্ধতিতে ভুল থাকলে কিংবা সরকারি অনুমোদনহীন কোনো হাসপাতাল থেকে টিকা দিলেও এর কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। তবে টিকা দেওয়ার পরও হাম হয়ে গেলে এ নিয়ে খুব চিন্তিত হবেন না। এর চিকিৎসা বা জটিলতা সাধারণ হামের মতোই। যেসব নারীর টিকা নেওয়া হয়েছে বা যারা হামে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, তাদের শিশুরা সাধারণত জন্মের প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত হাম থেকে সুরক্ষিত থাকে।

হাম সাধারণত অল্প সময়েই সেরে যায়। তবে এ রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকা জরুরি এবং অবশ্যই সময়মতো টিকা নিতে হবে। শিশুদের মতো বড়রাও হামে আক্রান্ত হতে পারে। ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

The post শিশুর হাম হলে পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং এর চিকিৎসা কী? appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles