অফিসে বসে সারাদিন অথবা রাতে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের সামনে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করা আমাদের অনেকেরই নিত্যদিনের রুটিন। এতে চোখের বিশ্রাম একদমই হয় না। আবার অনেক রাত পর্যন্ত জেগে সকালে উঠেই কাজে যেতে হয়। আর বাইরে যাওয়ার আগে আমাদের অনেকেরই সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করার কথা মনে থাকে না! ছুটির দিনে যেন চোখের আরাম আরও হয় না! রাত জেগে আড্ডা বা মুভি দেখেই সময় কেটে যায়। সবকিছু মিলিয়ে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল ভিজিবল হতে থাকে। আর রোজ সকালে বাইরে যাওয়ার আগে এই ডার্ক সার্কেল ঢাকার জন্য শুরু হয় মেকআপ করা। কিন্তু রোজ রোজ কি আর একই নিয়ম ভালো লাগে? ভাবছেন, মেকআপ ছাড়া এই প্রবলেমের সল্যুশন কীভাবে পাওয়া যাবে? স্কিন কেয়ার রুটিনে ন্যাচারাল কয়েকটি ইনগ্রেডিয়েন্ট যোগ করলে ডার্ক সার্কেলের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। আলাদাভাবে মেকআপ করে ডার্ক সার্কেল ঢাকতে হবে না। চলুন জেনে নেই মেকআপ ছাড়াই ডার্ক সার্কেলের ভিজিবিলিটি কমিয়ে আনার কয়েকটি ইজি ট্রিকস সম্পর্কে!
মেকআপ ছাড়াই ডার্ক সার্কেলের ভিজিবিলিটি কমিয়ে আনার উপায়
ডার্ক সার্কেল কমানোর জন্য কত প্রোডাক্টই তো আমরা ইউজ করি! কিন্তু এসব ব্যবহারে কি সব সময় ডার্ক সার্কেলের ভিজিবিলিটি কমে? এই সমস্যা কমানোর জন্য ইউজ করতে পারেন ন্যাচারাল কয়েকটি ইনগ্রেডিয়েন্ট। চলুন জেনে নেই, ন্যাচারালি ডার্ক সার্কেলের ভিজিবিলিটি কমানোর উপায়গুলো-
শসা
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য শসা যে উপকারী সেটা তো আমরা জানি। উপকারী এই সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও কে। তাই হেলথ বেনিফিট পাওয়ার পাশাপাশি চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল ঢাকার জন্যও শসা হেল্প করে। শসা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। এবার এই ঠান্ডা শসার স্লাইস কেটে চোখের উপর রাখুন। ১০ মিনিট পর চোখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত শসা ব্যবহারে চোখের চারপাশের কালোদাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি চোখেও প্রশান্তি মিলবে।
রোজ ওয়াটার
স্কিন হাইড্রেটেড রাখতে গোলাপ জল বা রোজ ওয়াটার কিন্তু খুবই হেল্পফুল। ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত এই রোজ ওয়াটার যেমন রিলাক্সিং, তেমনই চোখের ক্লান্তি দূর করতেও এটি খুব ভালো কাজ করে। আর ক্লান্তি দূর হলে ডার্ক সার্কেলও আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। রোজ ওয়াটার দিয়ে কটন প্যাড ভিজিয়ে নিয়ে ১০ মিনিট চোখের উপর লাগিয়ে রাখুন। নিয়মিত এই রুটিন ফলো করলে ডার্ক সার্কেল অল্প সময়েই মিলিয়ে যাবে।
টমেটো
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন আছে। লাইকোপেন ত্বককে সফট রাখতে এবং চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে। একটি বাটিতে টমেটোর পাল্প নিয়ে নিন। এবার কটন প্যাড বা বলের সাহায্যে ডার্ক সার্কেলের এরিয়াতে সাবধানে লাগিয়ে নিন। ১০/১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেটার রেজাল্টের জন্য সপ্তাহে ১/২ বার টমেটোর পাল্প ইউজ করুন।
টি ব্যাগ
ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য কমন একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে টি ব্যাগ। এক্ষেত্রে ব্ল্যাক বা গ্রিন টি ব্যাগ ইউজ করলে বেনিফিট বেশি পাওয়া যায়। কারণ এই চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও ট্যানিন ডার্ক সার্কেল রিমুভ করতে এবং চোখের নিচের পাফিনেস দূর করতে হেল্প করে। চা পান করা শেষে টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। এবার চোখের উপর লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য সপ্তাহে ২/৩ দিন টি ব্যাগ ইউজ করুন।
আলুর রস
আলুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে হেল্প করে এবং ত্বককে দেয় ইয়াংগার লুক। তাই ডার্ক সার্কেল দূর করতে আলুও বেশ ভালো কাজ করে। আলু গ্রেট করে রস চিপে নিন। এবার কটন প্যাড বা বলের সাহায্যে আলুর রস চোখের চারপাশে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন। যদি ডার্ক সার্কেল বেশি ভিজিবল হয় তাহলে সপ্তাহে ২/৩ বার অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
দুধ
ভিটামিন, মিনারেল ও পুষ্টিকর বিভিন্ন উপাদানের খুব ভালো উৎস দুধ। এছাড়া এতে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড। ডার্ক সার্কেল রিমুভ করতে এটি খুব ভালো কাজ করে। দুধের ব্যবহারে ডার্ক সার্কেলের প্রবলেম কমার সাথে সাথে স্কিন হয় ব্রাইট। ঠান্ডা দুধে কটন প্যাড বা কটন বল ভিজিয়ে চোখের চারপাশে এমনভাবে লাগিয়ে নিন যেন ডার্ক সার্কেল এরিয়া পুরোটুকু কভার করে। ১০/১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই রুটিন ফলো করলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ডার্ক সার্কেলের সমস্যা কমে আসবে।
আমন্ড অয়েল
আমন্ড অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে এবং হেলদি স্কিন পেতে এই অয়েল বেশ হেল্প করে। এর ব্যবহারও খুব সহজ। ঘুমানোর আগে চোখের চারপাশে আঙুল দিয়ে তেল ম্যাসাজ করে নিন। খেয়াল রাখুন অয়েল যেন স্কিনে ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করুন।
কমলার রস
কমলার রসে যেহেতু ভিটামিন এ ও সি দুটোই আছে তাই এটি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। কমলার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিয়ে তুলার বলের সাহায্যে চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এতে থাকা ভিটামিন চোখের নিচের ত্বককে ব্রাইট করতে হেল্প করবে এবং গ্লিসারিন দিবে হাইড্রেশন। কমলার রস ও গ্লিসারিনের নিয়মিত ব্যবহারে ডার্ক সার্কেল দূর হবে কয়েক সপ্তাহেই।
আরও কিছু উপায়
কোল্ড কম্প্রেস
চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল ও পাফিনেস দূর করার জন্য কোল্ড কম্প্রেস বেশ হেল্প করে। একটি পরিষ্কার কাপড়ে কয়েকটি আইস কিউব নিয়ে চোখের চারপাশে আস্তে আস্তে রাব করে নিন। যদি সরাসরি বরফ ব্যবহারে আনকমফোর্টেবল লাগে, তাহলে সুতি একটি কাপড় অথবা রুমাল ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে চোখের নিচে অ্যাপ্লাই করে নিন। সকালে ও রাতে দুইবার এভাবে অ্যাপ্লাই করলে ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দ্রুত কমে আসবে।
অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া
শরীরে লবণ ও পানির যদি সমতা না থাকে অর্থাৎ খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ থাকলে এবং পর্যাপ্ত পানি না পান করলে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। আর এর প্রভাব সবার আগে চোখের চারপাশের ত্বকে পড়ে। তাই ডার্ক সার্কেল কমাতে যতটা সম্ভব লবণ খাওয়া কমাতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
এই তো জানিয়ে দিলাম, মেকআপ ছাড়াই ডার্ক সার্কেলের ভিজিবিলিটি কমিয়ে আনার উপায় সম্পর্কে। তবে সবগুলো উপায়ই যে একসাথে ফলো করতে হবে এমন নয়। আপনার পক্ষে যেগুলো মেনে চলা সম্ভব সেগুলোই মেনটেইন করার চেষ্টা করুন। এছাড়া রাতের স্কিন কেয়ার রুটিনে ভালো মানের আই ক্রিম অ্যাড করুন। মনে রাখবেন, এক দিন বা এক সপ্তাহ রুটিন মেনে চললেই ডার্ক সার্কেল রিমুভ হবে না। এ জন্য প্রয়োজন ধৈর্য। ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট হলেও এগুলো অ্যাপ্লাই করার পাশাপাশি রেগুলার স্কিন কেয়ার করতে ভুলবেন না যেন! সেই সাথে রাতে পরিমিত ঘুম, হেলদি ডায়েট ফলো করতে হবে।
স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড যে কোনো অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ
The post মেকআপ ছাড়াই ডার্ক সার্কেলের ভিজিবিলিটি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়? appeared first on Shajgoj.