“সিরাম” – ত্বক সচেতন মানুষদের কাছে এই নামটি বেশ পরিচিত। বিউটি ট্রেন্ডে সিরাম এখন বেশ জনপ্রিয়। স্কিনের মতো হেয়ার কেয়ারেও রয়েছে নানা ধরনের সিরাম। মূলত চুলের শাইন বাড়াতে, চুল সিল্কি করতে সিরাম ব্যবহার করা হয়। আবার চুল কন্ডিশনিং করতে এবং ডিপলি ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে নানা ধরনের তেল। তাই অনেকের ধারণা সিরাম ও তেল একই জিনিস। চুলের যত্নে এই দুই জিনিসের কাজে অনেকটা মিল থাকলেও দুটো কিন্তু আসলে আলাদা। আজকের আর্টিকেলে হেয়ার সিরাম ও অয়েল এর পার্থক্য নিয়ে জানাবো বিস্তারিত।
হেয়ার সিরাম কী?
হেয়ার সিরাম সিলিকন বেইজড এক ধরনের লিকুইড যেটি অ্যামিনো অ্যাসিড ও সিরামাইড দ্বারা তৈরি। ঠান্ডা আবহাওয়া, সূর্যের তাপ, হিট স্টাইলিং টুলস এবং চুলে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করার কারণে চুল শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। চুলে কোটিং এর মতো লেগে থেকে শুষ্কতা দূর করে চুল নরম, মসৃণ ও জটমুক্ত রেখে শাইন ফিরিয়ে আনার কাজটিই করে সিরাম। এছাড়া চুলের আগা ফাটা, রুক্ষ হয়ে যাওয়া, চুল ভাঙা এই সমস্যাগুলোও সিরাম দূর করে। চুলের সমস্যা অনুযায়ী ভালো সিরাম ব্যবহার করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পার্থক্য বোঝা যায়। সিলিকন বেইজড সিরাম প্রতিদিন চুলে অ্যাপ্লাই করার প্রয়োজন নেই। এতে চুলে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হয়ে চুলের ক্ষতি হতে পারে। হেয়ার লেন্থের উপর ডিপেন্ড করে ৩/৪ ফোঁটা সিরাম অ্যাপ্লাই করাই যথেষ্ট।
সিরাম ব্যবহারের আগে করণীয়
১) সঠিক সিরাম বেছে নিন
আপনার চুলের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী সিরাম বেছে নেওয়া উচিত। চুল লম্বা করতে হেয়ার গ্রোথ সিরাম এবং চুল সিল্কি ও সফট করার জন্য বেছে নিন অ্যান্টি ফ্রিজ সিরাম।
২) চুল পরিষ্কার করে নিন
পরিষ্কার চুলে সিরাম ভালো কাজ করে। তাই সিরাম ব্যবহারের আগে চুল শ্যাম্পু করে নিন। সিরাম অন্যান্য হেয়ার প্রোডাক্ট যেমন হেয়ার স্প্রে, মুজ ইত্যাদির মতো নয়। এটি চুলকে বাইরের ডাস্ট, জার্ম থেকে রক্ষা করে। তাই পরিষ্কার চুলে ইউজ করলে চুল প্রোটেক্টেড থাকে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা সিরাম নিয়ে দুই হাতে ভালো করে ঘষুন
- এবার এটি সম্পূর্ণ চুলে ম্যাসাজ করে নিন
- সিরাম ব্যবহারের পর ভালো করে চুল আঁচড়ে নিতে হবে
- এবার ব্লো ড্রাই অথবা চুল স্ট্রেইট করে নিতে পারেন
উপকারিতা
১) চুল সফট ও সিল্কি করে
রুক্ষ, শুষ্ক চুল নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে? টেনশন না করে হেয়ার স্প্রে বা অন্য সকল হেয়ার প্রোডাক্টের পরিবর্তে হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন। দেখুন রুক্ষ ও শুষ্ক চুল কত সহজে নরম ও সিল্কি হয়ে গিয়েছে!
২) চুলে শাইন ফিরিয়ে আনে
চুলে আমরা যত কিছুই ব্যবহার করি না কেন, চুল শাইন করুক এটাই কিন্তু আমরা চাই। সিরাম এই শাইন ফিরিয়ে আনে খুব অল্প সময়ে। ডালনেস কমিয়ে শাইন ফিরিয়ে আনতে হেয়ার স্ট্র্যান্ডে ফিনিশিং টাচ হিসেবে শাইন বুস্টিং সিরাম অ্যাপ্লাই করুন।
৩) রুক্ষ চুলে পুষ্টি যোগায়
রুক্ষ শুষ্ক চুল মানেই দেখতে একদম রাফ মনে হওয়া। এমন প্রাণহীন চুলকে পুষ্টি প্রদান করে সফট ও শাইনি করতে হেয়ার সিরাম বেশ কার্যকর।
৪) চুলের জট কমায়
চুল যদি ড্যামেজ হয়ে যায় অথবা রাফনেস বেড়ে যায়, তাহলে চুলে জট লাগে। আঙুল দিয়েও সে জট সহজে ছাড়ানো যায় না। চুল সফট করতে কয়েক ড্রপ সিরাম দিন। পরিবর্তন দেখতে পাবেন নিজেই!
৫) হেয়ার ড্যামেজ রিপেয়ার করে
বিভিন্ন কেমিক্যাল প্রোডাক্টস, কালার, হেয়ার স্টাইলিং-এর হিট টুলস ব্যবহারের কারণে চুলের যে ক্ষতি হয় সেটি ঠিক করতে সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সিরাম চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
হেয়ার অয়েল
প্রাচীন সময় থেকে চুল ভালো রাখতে তেল দেওয়া হতো। হেয়ার অয়েল বা তেল হলো চুলের কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে সিল্কি ও সফট করে। হেয়ার স্ট্র্যান্ডে পেনিট্রেট করা, চুল মসৃণ করা এবং ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করা- তেলের কাজ মূলত এগুলোই। কার্লি কিংবা স্ট্রেইট- আপনার চুলের ধরন যেমনই হোক না কেন, শুষ্ক চুলকে হাইড্রেটেড রাখতে তেল বেশ কার্যকর। হেয়ার ব্রেকেজ, ড্যামেজ, চুলের আগা ফাটা, ফ্রিজিনেস এমন অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হেয়ার অয়েল।
চুলের যত্নে কয়েক ধরনের তেল
কোকোনাট অয়েল- চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে
আরগান অয়েল- চুল স্মুথ ও শাইনি করে
অলিভ অয়েল- চুলের টেক্সচার ও গ্রোথ ইমপ্রুভ করে
আমন্ড অয়েল– ড্যানড্রাফ দূর করে এবং হেয়ার হেলথ ইমপ্রুভ করে
জোজোবা অয়েল- ডাল ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ার করে
অ্যাভোকাডো অয়েল- হেয়ার ব্রেকেজ প্রিভেন্ট করতে হেল্প করে
তেল ও সিরাম কি এক?
না, হেয়ার সিরাম ও অয়েল এক নয়। হেয়ার সিরাম এমন একটি প্রোডাক্ট যেটি চুলকে স্মুথ ও শাইনি করে। আর হেয়ার অয়েল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সাহায্য করে। তেল ও সিরামের ব্যবহার এবং কাজ দুটোই ভিন্ন। তাই একটি অপরটির বিকল্প হতে পারে না।
হেয়ার সিরাম ও অয়েল কি একসাথে ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, দুটো একসাথে ব্যবহার করতে পারবেন। চুল ধোয়ার পর টাওয়াল দিয়ে চুলের পানি শুকিয়ে নিয়ে অল্প পরিমাণে সিরাম চুলে লাগিয়ে নিন। এবার ময়েশ্চার লক করার জন্য কয়েক ফোঁটা তেল অ্যাপ্লাই করে নিন। বাইরে যাওয়ার সময় নন স্টিকি তেল অ্যাপ্লাই করা ভালো। এতে চুলে চিটচিটে ফিল হবে না। যেদিন চুলে শ্যাম্পু করতে পারবেন না সেদিন অল্প পরিমাণে তেল অথবা সিরাম চুলে অ্যাপ্লাই করতে পারেন। এটি নিষ্প্রাণ চুলকে প্রাণবন্ত করে তুলবে।
রেগুলার হেয়ার কেয়ারে আমরা অয়েল ইউজ করি। আর চুলের এক্সট্রা কেয়ারের জন্য ইউজ করা হয় সিরাম। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিরাম যেমন- হেয়ার রিপেয়ারিং, হিট প্রোটেক্টিং, নারিশিং ও হেয়ার ম্যানেজিং সিরাম পাওয়া যায়। চুলের সমস্যা ও ধরন বুঝে বেছে নিন আপনারটি। হেয়ার প্রোডাক্ট কেনার জন্য সাজগোজ আমার ভরসার জায়গা। অথেনটিক হেয়ার, স্কিন ও মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার জন্য অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের চারটি আউটলেট- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবিঃ সাজগোজ
The post হেয়ার সিরাম ও অয়েল | কেন একটি অন্যটি থেকে আলাদা? appeared first on Shajgoj.