আমরা যারা একনে কিংবা ব্রণ নিয়ে ভুগছি, তাদের ত্বকে বরাবরই দরকার বাড়তি যত্ন। আর এই যত্নের জন্য প্রথম ধাপেই দরকার পড়ে ভালো মানের একটি ফেইস ওয়াশ। কিন্তু দেখা যায়, একনে প্রোন বা সেনসিটিভ ত্বকের জন্য যে ক্লেনজার বা ফেইসওয়াশ সাজেস্ট করা হয়, সেগুলোর প্রাইজ অনেকটাই বেশি। আর স্পেশাল এই ফেইস ওয়াশগুলো ব্যবহারের ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় বাজেটের কারণে ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনা। যার ফলে ত্বকের এই ব্রণ কিংবা একনে সমস্যা থেকেই যায়। যারা ত্বকে ব্রণ কিংবা একনে সমস্যায় ভুগছেন, পাশাপাশি বাজেট ফ্রেন্ডলি একটি ফেইস ওয়াশ খুঁজছেন তাদের জন্যই আজকের রিভিউ। আমি বেশ কিছুদিন ধরে এই ফেইস ওয়াশটি ব্যবহার করছি এবং আমার মনে হলো, যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য রিভিউ লেখাটা মাস্ট! আর এই ফেইস ওয়াশটি হচ্ছে ‘রাজকন্যা একনে ফাইটিং ফেসিয়াল ওয়াশ উইথ জোজোবা বিডস’। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
কী কী ইনগ্রিডিয়েন্টস আছে এই ফেইস ওয়াশে?
‘রাজকন্যা একনে ফাইটিং ফেসিয়াল ওয়াশ উইথ জোজোবা বিডস’ নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে একনে বা ব্রণ দূর করার জন্য কার্যকরী সব উপাদান আছে এতে। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বিশেষ কিছু উপাদান হচ্ছে –
- গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট
- সিন্টেলা এশিয়াটিকা অর্থাৎ থানকুনি পাতা
- জোজোবা বিডস বা দানা
- সোডিয়াম ক্লোরাইড
- পটাসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড
ফেইস ওয়াশটির কার্যকারিতা
১। ত্বককে ব্রণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে
ফেইসওয়াশটিতে আছে Centella Asiatica বা CICA, এই Centella Asiatica-ই হলো থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম। থানকুনি পাতায় রয়েছে এসিয়াটোকসাইড, যা কোলাজেন বাড়িয়ে তোলে। এর হিলিং প্রোপার্টি ঘা বা কাঁটা ছেড়া ও জখম সারিয়ে দেয়। এতে আরও আছে অ্যামাইনো এসিড এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রোপার্টি। আর এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টি আমাদের ত্বককে ব্রণের জীবাণুর সাথে ফাইট করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি একনে ইনফ্লেমেশনকে কমিয়ে ত্বকের একনে স্কার দূর করে এবং আমাদের স্কিন ব্যারিয়ারকে স্ট্রং করতে সাহায্য করে। আর এই ফেইসওয়াশটি আমাদের ত্বকের ন্যাচারাল ময়েশ্চারকে ধরে রেখে ত্বককে করে ব্রণ মুক্ত।
২। ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে
ফেইস ওয়াশের প্রধান কাজ হলো ত্বক থেকে বাহিরের ধুলাবালি আর ময়লা পরিষ্কার করা। যখন ত্বকের ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার না হয় তখন স্কিনের পোরস ক্লগড হয়ে ব্রণের সৃষ্টি হয়। আর এই ফেইসওয়াশটি আমাদের ত্বককে করে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। যার ফলে ত্বকের পোরস ক্লগড হয়না এবং ব্রণ হওয়ার আশংকা থাকেনা।
৩। ত্বককে রাখে হাইড্রেটেড এবং সুদিং ইফেক্ট দেয়
ফেইস ওয়াশটিতে আছে সিন্টেলা এশিয়াটিকা অর্থাৎ থানকুনি পাতার নির্যাস, যা ত্বকে সুদিং ইফেক্ট দেয়। আর এটি এমাইনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি উৎস,যা স্কিনে হাইড্রেশন লেভেল ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে।
৪। ত্বকের সিবাম প্রোডাকশন বা অয়েল কনট্রোল করে
আমাদের ত্বকে অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশনের কারণে ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই ফেইসওয়াশের অন্যতম ইনগ্রিডিয়েন্ট হচ্ছে গ্রীন টি, আর এতে আছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং EGCG, যেটা স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন কমায়। অর্থাৎ ত্বকের অতিরিক্ত অয়েলি-ভাব কনট্রোল করে। যার ফলে ত্বক থাকে ব্রণ মুক্ত।
৫। ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে
ফেইসওয়াশটিতে থাকা উপাদানগুলো ত্বকের ব্লেমিশ বা দাগ দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের প্রবণতা কমার পাশাপাশি ত্বকের দাগও ধীরে ধীরে কমে যায়।
৬। ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে
এই ফেইস ওয়াশটিতে আছে জোজোবা বিডস, যা ত্বকে খুবই আলতোভাবে এক্সফোলিয়েট করে ত্বকের ডেড সেল দূর করতে কাজ করে। অনেক সময় আমরা ত্বকের জন্য যে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার তা আমাদের ত্বকের জন্য একটু বেশি শক্ত দানাযুক্ত হয়ে থাকে, যা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু এই ফেইসওয়াশটিতে থাকা বিডসগুলো খুবই জেন্টেল। খুবই সফটলি ত্বকের ডেডসেলকে দূর করে।
স্মেল এবং টেকশ্চার কেমন?
যেকোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে আমার মতো অনেকেরই সেটার স্মেল নিয়ে একটা বড় চিন্তা থাকে। আর আমি যেহেতু অনলাইন থেকে কিনেছি আমারও এই বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু প্রোডাক্টটি ব্যবহারের পর সবচেয়ে যে জিনিসটি ভালো লেগছে তা হলো ফেইস ওয়াশটির স্মেল। এতে খুবই রিফ্রেশিং একটি কিউকাম্বার স্মেল আছে, যা আমার সবচেয়ে ভালো লেগছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা বাহির থেকে এসে যখন ফেইসওয়াশটি ব্যবহার করি, তখন খুবই সুদিং একটি ইফেক্ট পাই।
এবার বলি ফেইসওয়াশটির টেকশ্চার নিয়ে। ফেইসওয়াশটির খুবই লাইট ওয়েট এবং জেল টাইপ। ট্রান্সপারেন্ট কালারের এই জেল টাইপ ফেইসওয়াশটিতে থাকা জোজোবা বিডসগুলো খুবই সুন্দর লাগে দেখতেও।
যা যা আমার ভালো লেগেছে
১। ফেইসওয়াটির স্মেল আমার খুবই ভালো লেগছে। যারা মাইল্ড রিফ্রেশিং ফ্লেভার পছন্দ করেন তাদের খুবই ভালো লাগবে আশা করছি।
২। আমার ত্বকে কিছু অ্যাক্টিভ একনে ছিল, ফেইসওয়াশটি ব্যবহারের পর সেগুলো ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে এবং নতুন কোনো পিম্পল হয়নি।
৩। এই ফেইসওয়াশটি আমার ত্বককে মোটেও ড্রাই কিংবা শুষ্ক করেনি। বরং মুখ ধোয়ার পরেও ব্যবহারের পরেও ত্বক ছিল হাইড্রেটেড। আমি আগে অনেকগুলো একনে ফেইসওয়াশ ব্যবহার করেছি, যা আমার ত্বককে খুবই ড্রাই করে ফেলেছিল। কিন্তু
৪। আর এই ফেইস ওয়াশটির যে দিকটির ব্যাপারে না বললেই নয় সেটা হচ্ছে এর দাম। কার্যকারিতা অনুযায়ী এর দাম অনুযায়ী খুবই রিজেনেবল মনে হয়েছে আমার কাছে।
পরিমাণ ও দাম
এই ফেইসওয়াশটিতে ১০০ মিলি পরিমাণ প্রোডাক্ট আছে। যা সহজেই অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। আর এর দাম মাত্র ১৮৫ টাকা। যা প্রোডাক্টটির উপকারিতা এবং পরিমাণ অনুযায়ী খুবই রিজনেবল।
কোন ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী?
ফেইস ওয়াশটির নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে একনে প্রোন স্কিনের জন্য এটি বিশেষ ভাবে তৈরি। যাদের ত্বক অয়েলি টু কম্বিনেশন তাদের খুবই ভালো স্যুট করবে এই ফেইস ওয়াশটি। ফেইস ওয়াশটি যেহেতু অয়েল কনট্রোল করে ড্রাই স্কিনে ব্যবহারের পর ভালো মানের একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
এই ছিল আজকের রিভিউ। আশা করছি, ব্রণযুক্ত কিংবা একনে প্রোন স্কিনের সকলেই এর ব্যবহারে উপকৃত হবেন। স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।
The post ত্বকে ব্রণ কিংবা একনে কমবে দারুণ একটি ফেইস ওয়াশে! appeared first on Shajgoj.