শিশুরা মনের দিক থেকে যেমন কোমল, তেমনি কোমল তাদের ত্বক। আর এই কোমল ত্বকের বাড়ন্ত শিশুদের ত্বকের যত্ন হওয়া উচিৎ একটু বাড়তি ভাবেই। শিশুদের ত্বক প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বকের চেয়ে বেশি অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়। আর্দ্রতা, তাপমাত্রা কিংবা পরিবেশের পরিবর্তন এইসব কিছুতেই শিশুদের ত্বকের উপরও প্রভাব বেশি পড়ে। তাই অনেক সময় এসব পরিবর্তনের ফলে অ্যালার্জি, সংক্রমণ, র্যাশ জ্বালা-পোড়া সহ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় ত্বকে।
অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ন্ত শিশুদের ত্বকের যত্নেও আমরা বড়দের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। প্রাপ্তবয়স্কদের ও শিশুদের ত্বক যেহেতু আলাদা, তাই তাদের স্কিনকেয়ারের প্রোডাক্টও হওয়া উচিৎ ভিন্ন। শুধুমাত্র ত্বকের জন্য নিরাপদ প্রোডাক্টই শিশুদের ত্বকের জন্য ব্যবহার করা উচিত। আজকের লেখাটি বাড়ন্ত শিশুদের ত্বকের যত্ন নিয়েই। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক।
পরিষ্কার করা
বাড়ন্ত শিশু অর্থাৎ যখন থেকেই শিশুরা হাঁটতে শিখে তখন থেকেই শুরু হয় তাদের দুরন্তপনা। আর ২ বছর থেকে ৮ বছর পর্যন্ত সব শিশুরাই কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর তাই তাদের পরিষ্কার রাখাটাও অনেক কষ্টের কাজ। এ সময় শিশুদের দুষ্টুমি, খেলাধুলা, বাইরে যাওয়া সহ সবকিছুতেই আগ্রহ বেশি থাকে। তাই রোগ-জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে। কিন্তু এর জন্য খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপে বাঁধা দেয়া যাবে না। খেলা শেষে ও বাহির থেকে ফেরার পর অবশ্যই হাত-পা পরিষ্কার করিয়ে দিন। খেলার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘেমে গেলে বা গরম লাগলে ভারী কাপড়ের বদলে পাতলা কাপড় ব্যবহার করুন।
গোসলের সময়
বাচ্চারা অনেক সময় গোসল করতে চায়না। কিন্তু বাড়ন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় শিশুর ত্বকের উপযোগী মাইল্ড সোপ ব্যবহার করতে হবে। সাবান ব্যবহার না করলে বডিওয়াশ বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে পারেন। গোসল শেষে নরম কাপড়ের তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে গা মুছে দিতে হবে। শক্ত কাপড়ের তোয়ালে দিয়ে মুছলে শরীরে লালভাব দেখা দিতে পারে।
পাউডার লাগানো
ভেজা ত্বকে পাউডার লাগানো উচিৎ নয়। তাই গোসলের পর গা শুকানো জন্য পর্যাপ্ত অপেক্ষা করতে হবে। শিশুদের জন্য অবশ্যই বেবি ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা উচিত, যা কোমল ত্বকের কোনো ক্ষতি না করে।
ময়েশ্চারাইজ করা
শিশুদের ত্বকের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শিশুর ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখা। অনেক সময় শিশুদের ত্বক ড্রাই হওয়ার কারণে ত্বক ফাটা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই গোসলের পরে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ত্বকের আর্দ্রতাকে লক করতে হয়। এতে শিশুর ত্বক থাকে কোমল ও হাইড্রেটেড। এক্ষেত্রে অবশ্যই বেবি ক্রিম অথবা লোশন ব্যবহার করতে হবে।
পণ্য নির্বাচন
শিশুদের ত্বক কোমল হওয়াতে হালকা বেবি সোপ, টিয়ার–ফ্রি শ্যাম্পু এবং মাইল্ড লোশনের মতো বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। যেকোনো সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এড়াতে শিশুর ত্বকে নতুন কোনো পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। প্রোডাক্টগুলো ব্যবহারের পর শিশুর প্রকাশ করা প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে সচেতন হোন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নিন।
ডায়পার র্যাশ
বাড়ন্ত বয়সেও কিন্তু বাচ্চাদের ডায়পার র্যাশ দেখা দেয়। দেখা যায়, খেলাধুলার সময় অতিরিক্ত ঘামের থেকেই র্যাশ হয়। এছাড়া ডায়পার খুব বেশি টাইট হয় বা যদি শিশুটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ডায়পারের প্রতি অ্যালার্জিযুক্ত হয়, অথবা যদি শিশু দীর্ঘকাল ধরে নোংরা ডায়পার পরে থাকে, তবে একটি ডায়পার র্যাশের কারণ হতে পারে। র্যাশ এবং ত্বকের সংক্রমণ এড়াতে শিশু ডায়পার নোংরা করার পরপরই ডায়পার পরিবর্তন করে ফেলা ভালো। ভালো শোষক এবং নরম ডায়াপার নির্বাচন করুন। আর যদি কোন কারণে র্যাশ না কমে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো।
ত্বকের সমস্যা
অনেক সময় নির্দিষ্ট কোনো ইনগ্রিডিয়েন্টস ব্যবহারে কিংবা কাপড় থেকেও শিশুদের র্যাশ হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণেই শিশুদের একজিমা বা এটোপিক ডার্মাটাইটিস হয়, এর ফলে ত্বকে র্যাশ হয়। একজিমায় ত্বক শুকনো, চুলকানি হয়, ফুলে ওঠে এবং কখনও কখনও লাল প্যাচও হতে পারে। একজিমা নিরাময় করা কঠিন। কারণ, এটি পারিবারিক সূত্রেও হয়ে থাকে। শিশুদের ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে হবে।
ম্যাসাজ
ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখি, আমাদের নানী-দাদিরা ছোট বাচ্চাদের তেল মালিশ করছে। আসলে এই মালিশটি শিশুর শারিরিক বৃদ্ধিতে অনেক কার্যকরী। এই ম্যাসাজের জন্য নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল বেছে নেওয়া যেতে পারে। পুষ্টি পেতে এবং ময়েশ্চারাইজড করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে সুগন্ধিযুক্ত তেল এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ অনেক শিশুদের বিশেষ কোনো সুগন্ধে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। অনেকেই আবার সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে। সরিষার তেল শিশুর জন্য একেবারেই ভালো নয়। শিশুদের ত্বক পাতলা হওয়ায় অনেক সময় তা অস্বস্তিকর অনুভূতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রোদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা
শিশুদের ত্বক পাতলা হওয়ায় রোদে বের হওয়ার সময় শিশুকে উপযুক্ত লম্বা হাতাওয়ালা পোশাক, বড় প্যান্ট, টুপি দিয়ে ঢেকে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। শিশু সান সেন্সেটিভ হলে বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
সুতির পোশাক
শিশুদের ত্বকের ভাঁজগুলোতে ঘামের কারণে গরমে ঘামাচি ও র্যাশ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেক্ষেত্রে শিশুর পোশাক নরম, ঘাম শোষণকারী এবং আরামদায়ক হওয়ায় উচিত। ঢিলেঢালা সুতির পোশাকগুলো পরানোই ভাল। সিন্থেটিক কাপড় ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। এগুলো বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
কোমল ডিটারজেন্ট
নতুন কেনা শিশুর পোশাক এবং চাদর ব্যবহারের আগে সব সময় ধুয়ে নেয়া উচিত। এগুলো দেখতে পরিষ্কার মনে হতে পারে, তবে এগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য মৃদু, সুগন্ধিমুক্ত কোমল ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত।
এই ছিল বাড়ন্ত শিশুদের ত্বকের যত্নের প্রয়োজনীয় সব তথ্য। আশা করছি, আপনাদের ভালো লেগেছে।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের পাশাপাশি শিশুদের স্কিন কেয়ারের অথেনক্টিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ
The post বাড়ন্ত শিশুদের ত্বকের যত্ন হোক একটু বাড়তি! appeared first on Shajgoj.