সারাদিনের সকল কাজ শেষ করে যখন আমরা ঘরে ফিরি কিংবা যারা ঘরের হাজারটা কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিতে বসি, তখন আমাদের শরীরও কিন্তু রিলাক্সিং মোডে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে আমরা যখন ঘুমাতে যাই তখন আমাদের স্কিন সেলগুলো নিজ থেকে ত্বককে রিপেয়ার করা শুরু করে। এজন্যই আমরা রাতের বেলার ঘুমকে বিউটি স্লিপ বলে থাকি। কিন্তু যদি আমরা আমাদের ত্বকের বিশেষ করে মুখের ত্বকের যত্ন না নেই তাহলে ত্বক নিশ্বাস নিতে পারে না, ফলে ধীরে ধীরে আমাদের ত্বক হয়ে পড়ে নিস্তেজ ও মলিন। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী স্কিন কেয়ার করতে হবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট টাইম স্কিন কেয়ারের রয়েছে কিছু ধাপ। আজকে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করবো।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট টাইম স্কিন কেয়ার
শুষ্ক ত্বক
ড্রাই স্কিনে হওয়ার কারণে ত্বক খুব তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যায়। ত্বকে বলিরেখা বা রিংকেল দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে ত্বকের স্কিন ঝুলেও যায়। তাই ড্রাই স্কিনের দরকার তার প্রয়োজন অনুযায়ী যত্নের।
ড্রাই স্কিনকে সব সময় হাইড্রেটেড রাখা উচিত। তাই ক্লেনজার হিসেবে অয়েল বেসড ক্লেনজার দিয়ে ডিপ ক্লেনজিং করে তারপর পরে খুব মাইল্ড সালফেট ফ্রি ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিস্কার করে নিতে হবে। হানি বেসড ক্লেনজার হলে সবচেয়ে ভালো হয়, কারণ এ ধরনের ক্লেনজার ড্রাই স্কিনকে খুব ভালোভাবে নারিশ করে।
ত্বক ক্লিন করা তো হলো! এরপরে আসে টোনিং এর পালা। টোনিং এর ক্ষেত্রে ভালো হাইড্রেটিং টোনার ইউজ করতে হবে, যাতে স্কিন ভালোভাবে রিহাইড্রেট হতে পারে, একই সাথে মুখের পোরসগুলোকে টাইটেনিং করবে এবং পরের ধাপের জন্য স্কিনটাকে প্রিপেয়ার করবে।
ড্রাই কিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ময়েশ্চারাইজিং। ত্বকে পর্যাপ্ত ময়েশ্চারের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে যদি আমরা ভালো মানের একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি তাহলে ঘুম থেকে উঠে আমরা হাইড্রেডেট একটি সুন্দর স্কিন পেতে পারি।
কম্বিনেশন স্কিন
কম্বিনেশন স্কিন নিয়ে আমাদের প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়। কেননা, ত্বকের কোনো অংশ ড্রাই আবার কোনো অংশ অয়েলি হয়ে থাকে। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস কেনার আগে তাই খুব কেয়ারফুলি প্রোডাক্ট বাছাই করতে হবে।
সানস্ক্রিন কিংবা মেকআপ ব্যবহার করলে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে ডাবল ক্লেনজিং করতে হবে। প্রথমে যথারীতি অয়েল বেজড ক্লেনজার ও পড়ে মাইল্ড একটি ওয়াটার বেসড ক্লেনজার ব্যবহার করতে হবে। জেল ওয়াশ বা ফোমিং ক্লেনজারগুলো এক্ষেত্রে ভালো কাজ দেয়।
টোনিং এর ক্ষেত্রে আপনি প্রাকৃতিক হোমমেইড টোনারও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- গোলাপ জল, জিঞ্জার মিন্ট টোনার। এতে স্কিন থাকবে হাইড্রেটেড এবং সতেজ ফিল হবে।
কম্বিনেশন স্কিনের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অ্যালোভেরা জেল খুব কার্যকর। আপনি চাইলে বাজার থেকে কেনা অ্যালোভেরা থেকে জেল সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল কিছুক্ষণ লাগিয়ে অপেক্ষা করে, এরপর একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খুব লাইট একটা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলেই শেষ আপনার নাইট টাইম স্কিন কেয়ার।
অয়েলি স্কিন
অয়েলি স্কিনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, এ ধরনের স্কিন সব সময় খুব তেলতেলে থাকে, যা খুব সহজেই ধুলাবালি শুষে নিয়ে মুখের পোরসগুলো ক্লগড করে দেয়। তাই অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে স্কিনকে সবসময় ক্লিন রাখা খুব জরুরী।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ডাবল ক্লেনজিং আবশ্যক। অয়েলি স্কিনে অনেকেরই অয়েল বেজড ক্লেনজার স্যুট করেনা। তাই একটি সেইফ অপশন হচ্ছে মিসেলার ওয়াটার। মিসেলার ওয়াটার দিয়ে প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করে তারপর ওয়াটার বেসড ক্লেনজার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। আর অয়েলি স্কিনে যেহেতু একনে সমস্যা বেশি হয় সেহেতু স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত ক্লেনজার ত্বকের জন্য ভালো একটি অপশন।
টোনার আপনার ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই যেকোন ত্বকের ক্ষেত্রেই টোনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। অয়েলি স্কিনের জন্য খুবই ভালো মানের টোনার রয়েছে মার্কেটে। যা ব্যবহারে ত্বক হয় মসৃণ ও ফ্রেশ।
টোনিং এর পর আসে ময়েশ্চারাইজিং। অয়েলি স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয় খুবই লাইট ওয়েট এবং ওয়াটার বেইজড ফর্মুলাযুক্ত। ময়েশ্চারাইজার ভারী হলে অয়েলি স্কিন আরও তেলতেলে হয়ে যায় কিংবা একনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনি রাতে নিয়মিত ক্লেনজিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং এর পাশাপাশি স্কিনের প্রয়োজন অনুযায়ী সিরাম বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন নিয়ম করে। যেমন- স্পট ট্রিটমেন্ট কিংবা পিম্পলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিরাম, বা ভিটামিন সি অথবা নিয়াসিনামাইড। যেহেতু প্রত্যেকের ত্বক ও স্কিন ইস্যু ভিন্ন তাই আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্কিন কেয়ার রুটিনকে সাজিয়ে নিতে পারে।
এই তো গেল ত্বকের জন্য। কিন্তু চোখ এবং ঠোঁটের যত্ন কী করবেন ভাবছেন? চলুন তাহলে জেনে নেই।
চোখের যত্ন
চোখ আমাদের ত্বকের যেকোনো অংশের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাই চোখের যত্নও হবে একটু আলাদা। ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, চোখের যত্নে আপনি আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক উপায়ে চাইল একটি কটন প্যাডে আলু কিংবা শসার রসকে কোটন প্যাডে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে পারেন। এতে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর হবে এবং রিল্যাক্সড ফিল করবেন।
ঠোঁটের যত্ন
ঠোঁটের যত্নে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লিপবাম। আর ক্লেনজিং এর সময় সপ্তাহে ১/২ বার চিনির সাথে মধু মিশিয়ে হালকা এক্সফলিয়েট করতে পারেন। এতে ঠোঁটের ডেডসেল দূর হবে এবংঠোঁট হবে মসৃণ।
কীভাবে যত্ন নিবেন সেটাতো জানা হলো, কিন্তু কখন এই কাজটি করবেন? ঠিক বিছানায় শুয়ে পড়বার আগে?
একদম না! অনেকেই এই ভুলটি করে থাকি। এক্ষেত্রে স্কিন কেয়ারে যা যা ব্যবহার করেছিলেন, তার প্রায় সবটাই বালিশে লেগে যাবে। তাই নাইট টাইম স্কিন কেয়ার করবেন বিছানায় যাওয়ার ঠিক বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট আগে। ততক্ষণে আপনার ত্বক স্কিনের কেয়ারের সব কিছু ভেতরে এবসরভ করে নিবে।
তাহলে তো জেনে গেলেন, কীভাবে রাতের বেলায় মুখের ত্বকের যত্ন নেবেন। আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেক্টিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।
The post ত্বকের ধরন সাজিয়ে নিন আপনার নাইট টাইম স্কিন কেয়ার রুটিন appeared first on Shajgoj.