এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব এই শব্দ দুটির সাথে পরিচিত আমরা কম বেশি সবাই। তবে স্কিন কেয়ার রুটিনে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক হলেও এটি ব্যবহার করার আগে চিন্তায় পড়ে যাই আমরা অনেকেই। ত্বক নিয়ে আমাদের বিপাকের শেষ নেই! প্রোডাক্ট ব্যবহার করছি ভাল মানের, নিয়ম মেনেই তারপরও কিন্তু স্কিনে দেখা দেয় নানা সাইড ইফেক্ট, যেমন ইচিং এর সমস্যা, ত্বকে জ্বালাপোড়া করা, লাল লাল হয়ে যাওয়া, হুট করেই পিম্পল বা র্যাশের মত সমস্যা দেখা দেয়া। তখন অনেকেই আমরা শুধু মাত্র প্রোডাক্টটিকে দোষারোপ করতে থাকি। কিন্তু আসলেই কি ব্যপারটি এই রকম? তা কিন্তু নয়। ঠিক তেমন ভাবে এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবিং এই ব্যাপারটি নিয়েও আমরা না বুঝেই অনেক ভুলভাল ভেবে বসে থাকি। তাই আজকে আমরা জেনে নিব, ত্বকে এক্সফলিয়েট করার আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে।
এক্সফলিয়েট কেন করবো?
ত্বকের ধরণ যেমনই হোক সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহার করা আবশ্যক। কেন?
১) এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব এর প্রথম কাজই হলো, আমাদের স্কিনে যে পুরানো মৃত কোষ রয়েছে তা পরিষ্কার করে ফেলা। এতে আমাদের স্কিন আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত দেখায়।
২) আমরা অনেকেই স্কিন কেয়ার বা মেকআপের অনেক সামগ্রী ব্যবহার করতে যেয়ে কমপ্লেইন করি, সেগুলো ঠিক মত বসছেনা! তাইনা? এর একটি কারণ কিন্তু এই মৃত কোষ ত্বকে থেকে যাওয়া। তাই এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহার করার ফলে স্কিন কেয়ারের প্রোডাক্ট বিশেষ করে মেকআপ রিলেটেড প্রোডাক্ট খুব সহজেই বসে যায় ফেইসে।
৩) যাদের ওপেন পোরস এর সমস্যা রয়েছে, নিয়মিত এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব ব্যবহার করার ফলে তাও অনেকটাই মিনিমাইজ হয়ে আসবে।
এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব নিয়ে ৫টি ভ্রান্ত ধারণা গুলো কী কী?
ত্বকের যত্নে এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহারের ব্যাসিক কিছু বিষয় তো জেনে নিলাম। এখন চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক, এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহার করা নিয়ে প্রচলিত কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে।
১) এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবিং করলেই আমার ব্রণের সমস্যা বেড়ে যাবে!
এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবিং করলেই ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়, ধারণাটি একদমই ভুল! তবে হ্যাঁ! এখানেও একই কথা বলবো তা হলো, আগেই বলেছি আমাদের প্রত্যেকের স্কিন টাইপ আলদা। তাই স্কিনের সমস্যাগুলোও কিন্তু হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন। পাশাপাশি আমাদের একেক জনের স্কিন একেক উপাদানের সংস্পর্শে আসলে সেনসিটিভ হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে যাদের স্কিন অয়েলি তাদের পিম্পল জাতীয় সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। তাই তাদের এমন সব উপাদান বেছে প্রোডাক্ট বাছাই করে নিতে হবে যেটি ব্যবহারে স্কিনে কোনো সাইড এফেক্ট যেন না দেখা দেয়। যেমন- অয়েলি স্কিনের জন্যে, ফিজিক্যাল এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবের চেয়ে কেমিক্যাল স্ক্রাব, অর্থাৎ যা ত্বকের জন্য কোমল। একনে প্রোন ত্বকের ক্ষেত্রে গ্লাইকলিক এসিড বা স্যালিসাইলিক এসিড আছে, এমন স্ক্রাব ব্যবহার করা ভালো।
২) আমার ড্রাই স্কিন এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহারে আরও ড্রাই হয়ে যাবে!
আগেই বলেছি, স্কিন টাইপ যেমনই হোক এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহার করা সকলের জন্যেই প্রয়োজন। ড্রাই স্কিন এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব ব্যবহারে আরও ড্রাই হয়ে যাবে এবং আরও প্রবলেম বাড়তে থাকবে এ ধারণাটিও কিন্তু সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ! ড্রাই স্কিন এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব ব্যবহার করার সাথে সাথেই ত্বকের ধরণ অনুযায়ী পছন্দমত একটি ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই অ্যাপ্লাই করতে হবে। আমাদের সবার ত্বকের ডেড সেল বা মৃত কোষ জমে থাকে। স্কিন টাইপ যেমনই হোক, এই ডেডসেল বা মৃত কোষ সবার জন্যেই পরিষ্কার রাখাটা জরুরী। না হলে এ থেকে পরে র্যাশ, পিম্পলের মত সমস্যা দেখা দেয়। ড্রাই স্কিনের জন্যেও সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ বার এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহার করা উচিৎ।
৩) এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবিং করলেই আমার সেনসিটিভ স্কিনে সাইড এফেক্ট দেখা দিবে!
যেকোন স্কিন টাইপেই বুঝে শুনে দেখে প্রোডাক্ট বাছাই করতে হয়। তবে যাদের সেনসিটিভ স্কিন তাদের জন্যে এটির কোন বিকল্প নেই। প্রোডাক্ট কেনার সময় এমনভাবে বাছাই করতে হবে যেন এতে থাকা উপাদানগুলো সেনসিটিভ স্কিনের জন্যে স্যুটেবল হয়। না বুঝে প্রোডাক্ট বাছাই করে তা দিয়ে এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবিং করলে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে। তবে এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব করলেই যে এমন হবে এ ধারণাটি কিন্তু একদমই ভুল। সেক্ষত্রে অবশ্যই আপনার স্কিন যে উপাদানগুলোতে রিঅ্যাক্ট করে ঐ উপাদানগুলো ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে দেখলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ফ্রুট বা প্ল্যান্ট এনজাইম আছে এমন একটি ক্লিনজার সপ্তাহে এক কী দুইবার ব্যবহার করতে পারেন স্ক্রাব হিসেবে। অবশ্যই অতিরিক্ত স্ক্রাবিং করা যাবে না।
৪) ভাল রেজাল্টের জন্যে আমি এক্সফলিয়েট ব্যবহার রাতেই প্রেফার করি!
এমন কোন কথা নেই যে, এক্সফলিয়েটর শুধু রাতেই ব্যবহার করতে হবে! আপনার প্রয়োজন এবং সুবিধা অনুযায়ী ডে কেয়ার রুটিন বা নাইট কেয়ার রুটিনের যেকোন পার্টে এক্সফলিয়েটর যুক্ত করতে পারেন। তবে এক দিনে দুইবার কখনোই ত্বকে এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব করতে যাবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। এবং অবশ্যই একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না!
৫) এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব চোখের আশেপাশেও করলে কালচে ভাব কমে যাবে!
এটি একই সাথে যেমন ভ্রান্ত ধারণা তেমনি ত্বকের জন্যে ভীষণ রকম ক্ষতিকর! এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব কখনই চোখের এরিয়াতে করতে যাবেন না। আমাদের চোখের এরিয়াতে ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব ব্যবহার করলে ভাল রেজাল্টের জায়গায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
এইতো! জেনে নিলাম এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাবিং নিয়ে আমাদের মাঝে প্রচলিত কিন্তু খুবই কমন কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে। আসলে কোনো প্রোডাক্টই আমাদের আশানুরূপ রেজাল্ট দিবেনা যদিনা আমরা ব্যবহারের আগে নিজেদের স্কিন এবং প্রোডাক্ট এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো না জেনে নেই। ফেইসওয়াশ বা ময়েশ্চারাইজার এই শব্দগুলো শুনতে যেমন সহজ লাগে, স্ক্রাব বা এক্সফলিয়েট করতে হবে শুনতে কিন্তু ততটা সহজ মনে হয়না। কিন্তু ব্যাপারগুলো যদি আমরা একটু বুঝে শুনে ব্যবহার শুরু করি। তাই জনের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী স্কিন কেয়ারের যাবতীয় ব্যাপারগুলো শুরুতেই আমাদের বুঝে নিয়ে স্কিন কেয়ার শুরু করতে হবে। পাশাপাশি প্রোডাক্টের কোয়ালিটিও যাচাই করে নিতে ভুলবেন না যেন!
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেক্টিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।
The post এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব নিয়ে আপনার এই ৫টি ভ্রান্ত ধারণা নেই তো? appeared first on Shajgoj.