চুল নারীর অহংকার। আদিকাল থেকেই নারী সমাজে চুল বিখ্যাত। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তাই চেষ্টার কমতি নেই নারীকুলের। সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে কালো, ঘন ও লম্বা চুল বিলুপ্তপ্রায়। খুব কম মেয়েদেরই লম্বা ও ঘন চুল আছে বর্তমানে। সুন্দর ও আকর্ষনীয় চুলের স্বপ্ন দেখেন প্রতিটি নারীই। কিন্তু অনেক যত্ন, এই প্যাক সেই প্যাক, নানা রকম তেল মালিশ করেও সুবিধা করতে পারছেন না অনেকেই। তবে কি চেষ্টায়ই রয়েছে ত্রুটি? না। চেষ্টা আপনি ঠিকই করছেন। কিন্তু সেই চেষ্টাটিতেই রয়েছে গলদ। চুলের ব্যপারে আমরা বেশ সচেতন হলেও না জেনেই বেশ কিছু ভুল করে ফেলছি। যার ফলে অচিরেই ঝরে পরছে চুল এবং এর মাঝে সবচেয়ে বড় ভূল হচ্ছে ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়া এর ফলে চুলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
আমরা অনেকেই রাতে গোসল করি। সারাদিনের কাজ ও নানান ঝক্কি ঝামেলার কারণে দিনে ভালোমতো গোসল করার সময় হয় না আমাদের। তাই রাতকেই গোসলের জন্য বেছে নেই আমরা। শুধু গোসল করেই ক্ষান্ত হই না। সেই ভেজা চুলে আবার ঘুমিয়েও পড়ি। অনেকে আবার দিনের বেলাতেও গোসলের পর চুল ভালোমতো না শুকিয়েই ঘুমিয়ে পড়ছি। এখানেই করছি সবচেয়ে বড় ভুল। ভেজা চুলে ঘুমানোর রয়েছে নানান অপকারিতা। তাহলে চলুন জেনে নেই ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়া এবং এর ফলে চুলের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে।
ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়া সম্পর্কে ৫টি অপকারিতা
কালো চুলের মেঘের মতো ঢেউ চেনালে
স্পর্শ দিলে, ভেজা মাটির গোপন যতনে
সামনে যেদিন দাঁড়ালে খোঁপা খুলে
সেদিন জেনেছিলাম রূপের অন্য এক মানে
চলুন জেনে নেই ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়লে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
১) চুলে জট হয় বেশি
ভেজা চুলে জট হয় বেশি। চুল ভেজা অবস্থাতে ঘুমিয়ে পড়লে চুলে প্রচুর ঝট বেঁধে যায়। ঘুমের মাঝে এপাশ ওপাশ ফেরার কারণে চুলে ঘষা লাগে বেশি। এর ফলে খুব সহজেই চুলে জট হয়। এবং এতে চুল ঝরে যায়।
২) চুল পড়ার হার বাড়ে
ভেজা চুলে ঘুমানোর ফলে চুলে যে জট হয় তা ছাড়াতে গেলে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ চুল ঝরে যায়। রোজ একই পদ্ধতিতে চুলের জট বাঁধলে খুব সহজেই আপনার চুল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কেননা ভেজা চুলে ঘুমালে চুলের ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও চুলের গোঁড়া নরম হয়ে যায়। এতে চুল পড়ার হার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৩) চুলের কোমলতা নষ্ট হয়ে যায়
সচরাচর ভেজা চুলে ঘুমালে আমরা চুল খোলা রেখেই ঘুমাই। এবং স্বভাবমতো চুলের গোড়ায় পানি জমে থাকে। এর ফলে চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায়। বালিশে ঘষা লাগার কারণে চুল হারিয়ে ফেলে তার কোমলতা। যারা চুলের রুক্ষতা নিয়ে চিন্তিত তারা অবশ্যই এই ভুলটি করছেন। ভেজা চুলে ঘুমানোর কিছুদিন পর খেয়াল করবেন আপনার চুল আপনাআপনিই অনেক বদলে গেছে। এবং নষ্ট গেছে চুলের কোমলতা।
৪) ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়া থেকে চুলে ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে
ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ছত্রাক সৃষ্টির জন্য আদর্শ। যেকোনো ভেজা স্থানে অর্থাৎ আলো বাতাসহীন স্থানে খুব সহজেই ছত্রাক বংশবিস্তার করে। ভেজা চুলে ঘুমানোর ফলে অনেকক্ষণ চুলের গোড়ায় কোন আলো বাতাস লাগে না। চুলের ত্বক থাকে স্যাঁতস্যাঁতে। তখনই ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা যায়। কেননা ভেজা ও আদ্রর্তাপূর্ণ স্থানে ছত্রাক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা চূড়ান্ত। ভেজা চুলে ঘুমানোর ফলে মাথার ত্বকে ছত্রাক জন্ম নেয়, যা চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ছত্রাকের পাশাপাশি তখন খুশকির সমস্যাটিও ধরা পরে। ভেজা চুল খুশকি জন্মানোর জন্য আদর্শ। ভেজা চুলে ঘুমিয়ে যাওয়ার ফলে চুলের ত্বক যারপর নাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও খুশকির সৃষ্টি করে। ভেজা চুলে ত্বকের রক্ত চলাচলেও বাধাগ্রস্থ হয়। তখন চুলের গোঁড়া নরম হয়ে যায়। এবং চুল ঝরে যায়। মাঝেমাঝে চুল ভেঙ্গেও যায়। এবং ঘর্ষনের কারণে চুলের আগা ফেটে যায়। তাই চাইলেও তখন চুল লম্বা করা যায় না।
৫) দূর্গন্ধ হয়
ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়লে চুলের গোড়ার পানি অনেকক্ষণ ধরে চুলের গোড়াতেই রয়ে যায়। এবং বালিশে মাথা রেখে ঘুমানোর ফলে প্রাকৃতিক ভাবেই চুলের ত্বক ঘেমে যায়। তখন চুলের ত্বকের ঘাম ও পানি একত্রিত হয়ে বাজে গন্ধের সৃষ্টি করে। যারা প্রায়ই চুলে বাজে গন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগেন, তারা খেয়াল করে দেখবেন নিশ্চয়ই আপনারা ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়ছেন। তা না হলে সহজে চুলে বাজে গন্ধ হয় না। ভেজা ত্বক ঘেমে গেলে সেখানে উকুনের সৃষ্টি করে। যা চুলের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর।
ভেজা চুলে ঘুমানোর রয়েছে নানান রকম অপকারিতা। সারাদিন চুলের যত্ন নিয়ে রাতে যদি ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে দিন শেষে আপনার চুলের যত্নের ফলাফল হবে শূন্য। তা যে করেই হোক, গোসলের পর ভালো ভাবে চুল শুকিয়ে নেয়ার অভ্যাস তৈরি করুন এবং ফিরে পান সুন্দর, ঘন, কালো ও ঝলমলে চুল।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ
The post ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়া | জেনে নিন ৫টি অপকারিতা সম্পর্কে! appeared first on Shajgoj.