Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

$
0
0

‘মেঘ বলেছে যাব যাব, রাত বলেছে যাই,

সাগর বলে কূল মিলেছে, আমি তো আর নাই!’

শুভ্র মেঘের পিছুপিছু ছুটে যেতে কার না ইচ্ছে করে। মেঘের ভেলায় হারিয়ে যেতে, আকাশের মেঘদের সাথে কথা বলতে চায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কংক্রিটের এই শহরে মেঘেদের নাগাল পাওয়া দায়। তবে মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে এবং মেঘের ভেলায় ভেসে যেতে চাইলে আমাদের দেশেই রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা একটি স্থান। যেখানে আপনি শুধু মেঘের দেখাই পাবেন না বরং প্রকৃতির সকল অপরূপ মহিমার নাগাল পাবেন একসাথে। বলছিলাম মেঘের রাজ্য খ্যাত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম সাজেক ভ্যালির কথা। সাজেক ভ্যালিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী সৌন্দর্যে ঘেরা স্থান বলা হয়। বলা হবেই বা না কেনো! প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য যেন একস্থানে চলে এসেছে। সাজেক ভ্যালি সবচেয়ে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়নও। চলুন জেনে নেই কিভাবে যাবেন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে।

মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি পরিচিতি

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত। এটি মিজোরাম সীমান্তের উত্তরে অবস্থিত সর্ববৃহৎ একটি ইউনিয়ন। এর আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গকিলোমিটার। সাজেক ভ্যালির উত্তর-দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা ও লংগদু এবং পূর্ব-পশ্চিমে ভারতের মিজোরাম ও খাগড়াছড়ি অবস্থিত। রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে সাজেক ভ্যালি পৌঁছাতে হয়। তবে রাঙ্গামাটি হয়ে যেতে চাইলে নৌপথে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কাপ্তাই হয়ে হাঁটাপথে সাজেক পৌঁছাতে হবে।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে সাজেক যেতে চাইলে এর দূরত্ব হবে ৪৫-৫০ কিলোমিটার। দীঘিনালা থেকে সাজেক যাওয়ার পথে আর্মি ক্যাম্প পরে। আর্মি ক্যাম্প অথবা ১০নং বাঘাইহাট পুলিশ ক্যাম্প থেকে সাজেক যাওয়ার অনুমতি নিতে হয়। সাজেকের সবচেয়ে প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া পৌঁছানোর আগে কাসালং ব্রিজকাসালং নদী পাড়ি দিতে হবে। রুইলুই পাড়া সমতলভূমি থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এ থেকেই সাজেকের মনোরম পাহাড়ের শুরু।

রুইলুই পাড়া সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে প্রবীণতম একটি গ্রাম। এটি ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আদিবাসীদের মধ্যে লুসাই, পাংকুয়া এবং ত্রিপুরা উল্ল্যেখযোগ্য হলেও রুইলুই পাড়ার গোড়াপত্তন হয় লুসাইদের হাতেই। রুইলুই পাড়ার প্রধান লাল থাংগা লুসাই। রুইলুই পাড়া থেকে অল্প দূরেই অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। তবে সাজেক এবং রুইলুই পাড়ার মাঝে কমলক ঝর্ণা নামে একটি ঝর্ণা আছে। কমলক ঝর্ণাটি স্থানীয়দের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা কিংবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামেও পরিচিত। এটি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষনীয় একটি ঝর্ণা। কংলক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে শেষ গ্রাম। এই গ্রামটির প্রধানও লুসাই সম্প্রদায়। কংলক পাড়ার প্রধানের নাম চৌমিংথাই লুসাই। কংলাক পাড়াও সমতলভূমি হতে বেশ উপরে অবস্থিত। তবে এর উচ্চতা মাপা হয়নি আজও। কংলাক পাড়া সাজেক ভ্যালির শেষপ্রান্তে অবস্থিত বলে এর উপর থেকে ভারতের লুসাই পাহাড়সহ অন্যান্য পাহাড়গুলো খুব সহজেই দেখা যায়।

এই গ্রামের পরপরই সাজেক বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত এবং এটিই শেষ ক্যাম্প বলে নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে যাওয়ার অনুমতি সবসময় পাওয়া যায় না। তবে যদি সেখানে যাওয়া যায় তবে অবশ্যই লুসাই পাহাড় দেখে আসা উচিত। কেননা সেখান থেকেই কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি। সেখানে রয়েছে প্রকৃতির এক অপরূপ মায়াবী সৌন্দর্য যা আপনি কখনোই মিস করতে চাইবেন না। সাজেক ভ্যালি থেকে এর শেষ গ্রাম কংলাক পাড়ার মাঝে রয়েছে হাজাছড়া ঝর্ণা এবং এটিও পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ফেরার পথে দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার পরে। এদের রয়েছে মায়াবী এক ঝর্ণা ও সবুজ গাছগাছালীর মিশ্রণ। তাই প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যেতে চাইলে এই দু’টি স্থান অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যেতে চাইলে হানিফ, শ্যামলীসহ আরও কিছু পরিবহণের বাস আছে যা দিয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত যেতে পারেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫২০-৫৫০ টাকা। সরাসরি সাজেক পৌঁছাতে চাইলে দীঘিনালা যেতে পারেন শান্তি পরিবহণের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫৮০-৬০০ টাকা করে। এছাড়াও কিছুকিছু এসি এবং ননএসি বাস আছে যা দিয়ে সাজেক পৌঁছা যায়। মানুষ সংখ্যায় বেশী হলে ঢাকা থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যেতে পারেন। কিংবা বিআরটিসি এবং সেন্টমার্টিন পরিবহণের কিছু এসি বাসও ভাড়া করে যেতে পারেন। খাগড়াছড়ি কিংবা দীঘিনালায় পৌঁছে সেখানকার কিছু জীপগাড়ী আছে যা ভাড়া করে সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন সাজেক ভ্যালি।

সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো এইসকল জীপ গাড়ীগুলোকে স্থানীয়রা চাঁন্দের গাড়ী নামে চিনে। এই জীপগাড়ী অথবা চাঁন্দের গাড়ী ভাড়া করে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালী। একদিনের বেশী থেকে সাজেক ভ্যালি ঘুরতে চাইলে ভাড়া কিছুটা বেশী লাগে এই জীপ গাড়ীগুলোর। এই গাড়ী গুলোতে খুব সহজেই ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ বসতে পারে। তবে লোকসংখ্যা যদি কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সিএনজি ভাড়া করতে পারেন। সিএনজির ভাড়া তুলনামূলক একটু বেশী পরে। তাই চাইলে আপনারা বাস কিংবা মোটর সাইকেল ভাড়া করতে পারবেন। মোটর সাইকেল পাহাড়ী এলাকায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ তাই এটা ভাড়া না করাই ভালো। সাজেক ভ্যালি একদিনে ঘুরতে চাইলে অবশ্যই সন্ধ্যার আগে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। কেননা বন্য পরিবেশ হওয়ায় যায়গাটি সন্ধ্যার পর বেশ অন্ধকার হয়ে যায়।

কোথায় থাকবেন

সাজেক ভ্যালিতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি উন্নতমানের রিসোর্ট রয়েছে। তবে রিসোর্টে থাকতে চাইলে আপনাকে গুনতে হবে বেশ মোটা অংকের টাকা। রিসোর্টের পাশাপাশি বেশকিছু হোটেলও রয়েছে। তবে সেগুলো বেশী উন্নত নয়। তাছাড়া খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় বেশ কয়েকটি পর্যটন মোটেল রয়েছে এবং এদের মান বেশ ভালো। তবে দীঘিনালার কয়েকটি গেস্ট হাউজ আছে যেগুলো বেশ আকর্ষনীয়। চাইলে আপনি এগুলাতেও থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

রিসোর্ট, মোটেল কিংবা গেস্ট হাউজে থাকলে সেখানেই উন্নতমানের খাবারের সুবিধা থাকে। এছাড়া সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে চাইলে পানখাই পাড়া নামক স্থানে গিয়েও খেয়ে আসা যায়। এর পাশেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। তাই সেখানে খেতে গেলে এই স্থানটিও ঘুরে আসা যায়। তাছাড়া আদিবাসীদের সাথে বসে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে রুইলুইকংলক পাড়ায় চলে যেতে পারেন। সেখানে আগে থেকে তাদের বলে দিলে তারাই আপনাকে তৈরী করে দিবে আপনার চাহিদামতো খাবার।

সাজেক ভ্যালিতে চোখে পরে মেঘের সাদার সাথে অরণ্যের সবুজের এক অপরূপ সংমিশ্রণ। তিন তিনটি হেলিপ্যাড থাকায় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপরূপ সব সৌন্দর্য খুব সহজেই দেখা যায়।
কবির ভাষায়-

‘সাঁঝের বেলা শেষে, নীল আকাশ জুড়ে ঝলঝল করে জ্বলে তারার দল

মেঘলা আকাশ স্বপ্ন বুনে, নিয়ে এক চোখে রোদ আর অন্য চোখে জল!’

ঠিক এইরকমই সাজেক ভ্যালির আবহাওয়া। কখনও গরম আবার কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি। এই বৃষ্টির পরপরই আবার একরাশ মেঘের দল সাজেককে বানিয়ে দেয় সাদা উপত্যকা। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আজই ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন এবং ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি থেকে।

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ;টুররম.কম;স্টিমিট.কম

The post ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles