কচি থেকে বৃদ্ধ বয়সে পদার্পণ করাই সত্য। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তন হতে থাকে খাবারের ধরন। এই বয়সে খাবারের চাহিদা কি বাড়ে না কমে সে নিয়ে দ্বিধায় থাকেন অনেকেই।
সাধারণত ৬০ বছরের বয়স সীমাকে বৃদ্ধ বয়স ধরা হয়। কিন্তু পুষ্টি গত দিক দিয়ে ৪০ বছর এর পর থেকেই বৃদ্ধ বয়স ধরা হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক, মানসিক, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর মারাত্তক প্রভাব পড়ে। যার ফলে এই বয়সে সে আস্তে আস্তে নেতিয়ে যেতে থাকে এবং নানা ধরনের রোগ এ আক্রান্ত হয়। যদিও এই প্রক্রিয়া আটকানোর ক্ষমতা কারো নেই, তবুও বৃদ্ধ বয়সে খুব সহজেই সুস্থ থাকা যায় যদি ঠিক পরিমান পুষ্টি গ্রহণ করা হয়। আসুন জেনে নিই, কী পরিমান পুষ্টি দরকার একজন বয়স্ক মানুষের।
৩৫ বছরের পর থেকে পেশী ও কলা কাজ কম করে এবং সেই সাথে (বি এম আর) হ্রাস পায়। ফলে শক্তি চাহিদা কমে যায়। কারণ এই সময় মানুষ কাজ কর্ম কম করে। তাই ওজন এর সাথে মিল রেখে প্রতিদিনের খাবার কেমন হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করতে হবে। তবে ব্যক্তি যদি মোটা হয় তবে সে ক্ষেত্রে ওজন কমানোর ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
বৃদ্ধ বয়সে ক্ষুদা হ্রাস পায়, এবং হজম শক্তি কমে আসে বলে মানুষ কম আমিষ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এসময় আমিষ এর চাহিদা সাধারন মানুষের মতই থাকে। তাই এসময় আমিষ গ্রহণ করা দরকার। সে ক্ষেত্রে মাছ ও দুধের পরিমান বেশি রাখা যেতে পারে।
শারীরিক কর্ম হ্রাস পাওয়ায় ক্যালরি চাহিদা কমে যায়। সেই সাথে কমে যায় ফ্যাট এর চাহিদা ও। ফ্যাট এর চাহিদা পুরণ করার জন্য ভেজিটেবল তেল যেমন (সয়াবিন, সূর্যমুখীর তেল, জল্পাই এর তেল) ব্যাবহার করা উচিত।
বৃদ্ধ বয়সে ক্যালসিয়াম এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ৫০+ মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি হয় খুবই এবং ক্যালসিয়ামের এর চাহিদা বাড়ে।এই বয়সে তাই হাড্ডি ক্ষয় বা অস্ট্রীয়পরোসিস রোধ করতে দরকার হয় ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি জাতীয় খাবারের। এক্ষেত্রে দুধ খুব উপকারি খাবার। এছাড়াও কিছু মিনারেলস এর চাহিদা এই বয়সে বেড়ে যায়। তার মদ্ধে রয়েছে আয়রন। এর অপর্যাপ্ততায় রক্ত শুন্যতা দেখা দিতে পারে। সোডিয়াম, জিঙ্ক, ইত্যাদি চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করতে হবে।
বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিক ভাবেই শরীর অনেক দুর্বল থাকে। তাই পর্যাপ্ত চাঞ্চল্যতা ধরে রাখার জন্য এ সময় সব ধরনের ভিটামিন বেশি পরিমান দিতে হবে। তবে এর মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন ডি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
পানির গুরুত্ব আমরা সবাই জানি। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে ২ লিটার পানি প্রতিদিন। এই পানি কিডনিকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে এবং দেহ থেকে দূষিত ও বজ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
প্রচুর পরিমানে আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে কোস্টকাঠিন্য একটি সমস্যা যা দূর করতে আঁশ এর বিকল্প নেই।
একটু নজর দিলেই আপনার বাসার সম্মানের মানুষটাকে রাখতে পারেন সুস্থ ও সুন্দর। নিজের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন, সেই মানুষটির উপরে যে কিনা এতদিন আপনার তদারকি করেছেন।
লিখেছেন – ফারিয়া ইসলাম
ছবি – ওয়ালকু.নেট