আমার স্কিনটোনে কোন রঙের লিপস্টিক ভালো লাগবে? সবচেয়ে কমন প্রশ্ন! লিপস্টিকের প্রতি দুর্বলতা নেই এমন কোনো মেয়ে কি আছে? একটুখানি লিপস্টিক না পরলেই যেন নয়, হোক সে গরজিয়াস পার্টি মেকআপে অথবা প্রতিদিনের নো মেকআপ লুকে। নতুন নতুন শেড ট্রাই করতে কে না ভালবাসে! শপে ঢুঁ মেরে টেস্টার দিয়ে হাতে সোয়াচ করে কোন শেডটা মানাচ্ছে এটা দেখতে আমরা কমবেশী সবাই পছন্দ করি, আবার ফেসবুক বা ইন্সট্রাগ্রামে কোন মেকআপ লুক পছন্দ হলে লিপস্টিকের নাম আর শেড জানতে চেয়ে কমেন্ট করে বসি! এর কারণ হচ্ছে লিপস্টিকের প্রতি আমাদের ফ্যাসিনেশন, কিন্তু আমরা অনেকেই কনফিউজড থাকি যে প্রিয় রঙের কোন শেডটি নিজেকে মানাবে। কাপড়ের রং নির্বাচন করার পর ঠোঁটের রং বেছে নিতে আমরা বেশি চিন্তিত থাকি। স্কিনটোন ও লিপস্টিক নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। কাকে কোন শেডে সবচেয়ে মানাবে, চলুন চট করে জেনে নেই।
স্কিন টোনের সঙ্গে লিপস্টিকের শেড বেছে নেয়ার কি সম্পর্ক?
নিজের স্কিনের সাথে ম্যাচ করবে কি না চিন্তা না করেই যে রঙ ভালো লাগছে চোখ বুজে তাই কিনে ফেলার স্বভাব কি আপনার আছে? প্রথমদিকে আমি কিন্তু এমনই করতাম। অন্যের দেখাদেখি লিপস্টিক কিনে পরে আফসোস করেছি এমন অনেকবার হয়েছে। পরে সেগুলো ইউজ করা হতো না, কারণ আমাকে স্যুট করত না, কেমন যেন বেমানান লাগতো! কিন্তু ওই শেডগুলো আমার বড় বোনকে দারুণ মানিয়ে যেত। এটা ঠিক, লিপস্টিকের সম্পূর্ণ জৌলুসটা বের করে আনতে হলে স্কিন টোনের সাথে মানানসই শেডটাই সিলেক্ট করতে হবে! একটু উদাহরণ দেই, যেমন ফেয়ার টু মিডিয়াম স্কিনে অরেঞ্জ কালার সুন্দর ফুটে উঠলেও ট্যান বা শ্যামলা স্কিন কমপ্লেকশনে সেটা বেশি কটকটে মনে হবে।
ডীপ বেরি টাইপের কালার একটু চাপা গায়ের রঙে দারুণ মানিয়ে যায় কিন্তু ফেয়ার স্কিনে বেশী ড্রামাটিক লাগতে পারে। আপনার প্রিয় সেলিব্রিটির ঠোঁটে যে রঙটি দারুণ মানিয়েছে, বাজার ঘুরে ঘুরে সেই শেডটা খুঁজে কিনে আনার পর দেখলেন আপনাকে একদমই মানাচ্ছে না কিন্তু কালারটা ভীষণ সুন্দর। এখানেই কিন্তু স্কিন টোনের সঙ্গে লিপস্টিকের শেড বেছে নেয়ার গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে। শ্যামলা ত্বকে যেই শেডটা ন্যাচারাল ন্যুড দেখায়, ফর্সা ত্বকে তা ব্রাউন কালার বলে মনে হয়। আমরা অনেকেই জানি একই লিপস্টিক আলাদা আলাদা স্কিন টোনে বিভিন্ন রকম দেখায়। তাই স্কিনটোন ও লিপস্টিক মিলিয়ে নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্কিন টোন নির্ণয় করবো কিভাবে?
প্রথমেই নিজের ত্বকের আন্ডারটোনটা চিনে নিন৷ প্রাকৃতিক আলোতে হাতটা ওপরে তুলে ধরুন এবং হাতের কব্জির ভিতরের শিরা দেখার চেষ্টা করুন। আপনার শিরার রঙ যদি নীল অথবা বেগুনি হয় তাহলে আপনার স্কিন টোন কুল টাইপ। যদি সবুজ হয়, তবে আপনার স্কিন টোন ওয়ার্ম টাইপ। আপনি যদি বুঝতে না পারেন যে আপনার শিরার রঙ বেগুনি নাকি সবুজ তাহলে আপনার স্কিন টোন সাধারণ বা নিউট্রাল প্রকৃতির। আরও অনেক পদ্ধতি আছে স্কিনটোন নির্ণয়ের। আপনাকে যদি রুপোর গয়নায়, নীল বা লাল পোশাকে বেশি মানায়, তাহলে আপনার কুল আন্ডারটোন। যদি সোনার গয়না অথবা হলুদ বা কমলায় আপনাকে বেশি মানিয়ে যায়, তা হলে আপনার ওয়ার্ম আন্ডারটোন। প্রাকৃতিক আলোতেও স্কিন টোন ভালো বোঝা যায়।
ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিকের শেড
১) লালের বিভিন্ন শেড
লাল লিপস্টিক মেয়েদের বিউটি বক্সে থাকবেই। ট্র্যাডিশনাল লুকে অথবা ইভিনিং পার্টিতে সবখানেই লাল লিপস্টিক ইজিলি মানিয়ে যায়। লাল এমনই একটা রং যা উজ্জ্বল বর্ণের মেয়েরা যেমন ক্যারি করতে পারেন, তেমনি শ্যামলারাও পড়তে পারেন নির্দ্বিধায়। লালের মধ্যেও কিন্তু শেড আছে! কেমন ধরণের লাল রঙ আমার টোনের সাথে পারফেক্ট হবে, এ নিয়ে অনেক গবেষণাও করে ফেলি আমরা! ব্রাইট রেড, অরেঞ্জ রেড, সিঁদুর লাল, নিওন অরেঞ্জ এগুলো কুল আন্ডারটোনে দারুণ মানাবে। ফর্সা স্কিনের অধিকারী হলে চোখ বুজে এই শেডগুলো বেছে নিতে পারেন। মিডিয়াম টোনের সাথে টমেটো রেড, চাপা বা শ্যামলা রঙের সাথে গাঢ় লাল বা ব্লাড রেড, মেরুন রেড রঙের লিপস্টিক খুব ভালো মানায়। স্কিনটোন ও লিপস্টিক মিলিয়ে নিলে দেখতে খুবই ভালো মানাবে।
২) গোলাপির কালেকশন
পিঙ্ক কালারের প্রতি মেয়েদের একটা অন্যরকম আকর্ষণ আছে। লিপস্টিকের পিঙ্কের শেড নিয়ে আমাদের এক্সপেরিমেন্টের শেষ নেই। ফর্সা ত্বকের আন্ডারটোন সাধারণত গোলাপি ঘেঁষা হয়, ফলে গোলাপির নানা শেড তারা অনায়াসে পরতে পারেন। বেবি পিঙ্ক, লাইট পিঙ্ক, কটনক্যান্ডি পিঙ্ক এগুলো ফেয়ার স্কিনে সবচেয়ে ভালো মানায়। হট পিঙ্ক আর ফুশিয়া কালারটা উজ্জ্বল শ্যামলাদের জন্য গুড অপশন। মিডিয়াম বা ট্যানড স্কিনে রোজি বা ডাস্টি পিঙ্ক, কোরাল, পীচ, ম্যাজেন্টা খুব ভালো লাগে। আর শ্যাম বর্ণের হলে ডীপ শেডের কালার বেছে নিন, যেমন- ওয়াইন, ডার্ক ম্যাজেন্টা, পাম (গাঢ় জাম রং) কিংবা ক্যানবেরি।
৩) ব্রাউনের সম্ভার
গরজিয়াস মেকওভারে, রাতের কোনো পার্টিতে কিংবা রেগ্যুলার গো-টু শেড হিসেবে অনেকেই ব্রাউন কালারের লিপস্টিক পছন্দ করেন। কিন্তু ব্রাউনের মধ্যেও তো কত শেড আছে, কোনটা আমাকে সবচেয়ে বেশি কমপ্লিমেন্ট করবে, এই প্রশ্ন অনেকেরই আছে। ন্যুড ব্রাউন, লাইট ব্রাউন এগুলো ফেয়ার স্কিনের সাথে খুব ভালো যায়। আর মভ, কফি ব্রাউন, ওয়ার্ম ব্রাউন এই শেডগুলো ওয়ার্ম আন্ডারটোনের জন্য বেস্ট। যারা মনে করেন শ্যামবর্ণ হলে বোধহয় বাদামি লিপস্টিকে মানাবে না, তারা চকোলেট ব্রাউন, ডীপ মভ এগুলো একবার ট্রাই করেই দেখুন।
৪) ন্যুড কালার
ইদানিং ডিউয়ি মেকআপ লুক ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, আর পারফেক্ট শেডের ন্যুড লিপস্টিক এই সাজকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলে। রেগ্যুলার ইউজের জন্যও এই রংটা অনেকেই পছন্দ করেন। স্মোকি আইলুকের সাথে রোজি-পিঙ্ক ন্যুড, ন্যাচারাল ন্যুড, বেইজ এগুলো খুব ভালো চয়েস। মিডিয়াম টোনের স্কিনের জন্য ন্যুড ব্রাউন, কোরাল ন্যুড, কেরামেল ন্যুড এগুলো রেগ্যুলার ব্যবহারযোগ্য শেড। আর ফর্সা হলে লাইট, ট্যান, পীচ-ন্যুডের এই শেডগুলো খুব সহজেই ক্যারি করতে পারেন। চাপা গায়ের রঙে ন্যুড লিপস্টিক অনেকেই পছন্দ করেন না। এটা পারসোনাল টেস্টের উপরও কিছুটা ডিপেন্ড করে। স্কিনটোন ও লিপস্টিক মিলিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন।
লিপস্টিক কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
- অনেকেই হাতে লিপস্টিক সোয়াচ করে লিপস্টিক কিনে ফেলেন। আপনার হাতে যেই কালারটা সুন্দর লাগছে, সেই রঙটা ঠোঁটে দিলে বেমানান লাগতেও পারে। কারণ হাতে আর মুখে স্কিন কালারের ডিফারেন্স থাকে। ঠোঁটে লাগিয়ে দেখে নিবেন রংটা মানাবে কি না। প্রায় সব বড় কসমেটিকস শপে টেস্টার পাবেন। ঠোঁটে লাগানোর পূর্বে টিস্যু পেপার দিয়ে লিপস্টিকটা অবশ্যই মুছে নিবেন।
- ঠোঁটের মরা চামড়ার কারণে লিপস্টিক ঠিকমত বসে না, তাই লিপ স্ক্রাব করে নিতে ভুলবেন না। আর ত্বকে যেমন বেইজ মেকআপ করে নেন, ঠিক সেভাবে লিপস্টিক দেয়ার আগে ঠোঁটেও লিপ প্রাইমার, ফাউন্ডেশন দিয়ে নিবেন, এতে করে কালারটা ভালোভাবে ফুটবে। অবশ্যই লিপজেল বা লিপবাম দিয়ে ঠোঁট ময়েশ্চারাইজড করবেন।
- যাদের স্কিন অয়েলি তারা যদি গ্লসি টাইপের লিপস্টিক ব্যবহার করেন তবে পুরো মুখেই একটা অয়েলি ভাব এসে যায়, তাই ম্যাট বা সেমি ম্যাট লিপস্টিক আপনার জন্য বেস্ট অপশন হবে। টিস্যু পেপার দিয়ে হালকা প্রেস করে নিতে পারেন। আর শুষ্ক ত্বকে ডিউয়ি বা গ্লোয়ি ভাব আনতে স্যাটিন, ক্রিমি ফর্মুলার অথবা গ্লসি লিপস্টিক সিলেক্ট করুন।
- জায়গা, সময়, বয়স, ওকেশন, পোশাক সবকিছু মিলিয়ে লিপস্টিক নির্বাচন করবেন। অন্যের কথায় বা দেখাদেখি শেড কিনে ফেলবেন না, আপনার স্কিন টোনে যেটা ফুটবে সেটাই বেছে নিন। ট্রাই না করেই বোল্ড কালারে আমাকে মানায় না বা ন্যুড কালারে আমাকে ফ্যাকাসে দেখায়, এই মনোভাব মনে গেঁথে নেয়ার কোনো মানে হয় না। কালারের সঠিক শেডটা খুঁজে নিয়ে ক্যারি করতে পারলেই হালকা থেকে ডিপ সব কালারেই আপনাকে সুন্দর লাগবে।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো লিপস্টিক কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের লিপস্টিকটি!
তো, এই ছিল লিপস্টিক শেড সমাচার। এই দিকগুলো খেয়াল করে নিলেই কিন্তু আপনি আপনার স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করে লিপস্টিক সিলেক্ট করতে পারবেন। স্কিনটোন ও লিপস্টিক ম্যাচ করলে দেখতে যেমন ভালো লাগে লুকেও একটা নতুনত্ব আসে। তাই অবশ্যই স্কিনটোন ও লিপস্টিক মিলিয়ে নিবেন।
ছবি সংগৃহীত:সাজগোজ; কালারপপ.আইকে; প্রিটিডিজাইন.কম; বেস্টবাইবিউটিসাপ্লাইমিয়ামি.কম; পিন্টারেস্ট.কম; ইমেজেসবাজার.কম
The post স্কিনটোন ও লিপস্টিক | আপনার জন্য কোন শেডটি সঠিক? appeared first on Shajgoj.