রুনাকে ছোটবেলা থেকে আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে কম কথা শুনতে হয় নি তার কালো গায়ের রঙের জন্য। এমনকি তার বাবা মায়েরও চিন্তার শেষ নেই কালো মেয়েকে কিভাবে বিয়ে দিবে এই ভেবে। আমাদের সমাজে বিবাহযোগ্য মেয়েদের সকল গুণ ঢাকা পরে যায় কালো রঙের আড়ালে। এ সমাজে কৃষ্ণকলির কালো হরিণ চোখের কদর খুব কম মানুষই করে। আর এই সুযোগকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে রং ফর্সাকারি ক্রিমের বাজার। এদের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে অনেক ক্রেতা। এই সব ক্রিমের বিজ্ঞাপন দেখলে মনে হয় যোগ্যতা নয় গায়ের ফর্সা রং-ই সফলতার চাবিকাঠি। কিন্তু এই সব রঙ ফরসাকারী ক্রিম সত্যিই কি উপকারি?
কলেজ পড়ুয়া তরুণী কিছুদিন থেকে রঙ ফর্সাকারি ক্রিম ব্যবহার করছে। প্রথমে সবাই খুব প্রশংসা করলেও ধীরে ধীরে ফেইস করে ব্রন ও মুখের জ্বালা-পোড়া। রং ফর্সাকারি ক্রিম লাগিয়ে হিতে বিপরীত হওয়ার পর যখন ডাক্তারের কাছে গেলেন, চিকিত্সকের বুঝতে অসুবিধে হয় নি, সমস্যার সূত্রপাত কোথায়। চলুন তবে জেনে নেই রং ফর্সাকারি ক্রিম সম্পর্কে বিস্তারিত!
রং ফর্সাকারি ক্রিম কিভাবে কাজ করে?
আমাদের শরীরে যে মেলানিন নামক যে উপাদান রয়েছে, রং ফর্সাকারি ক্রিম শরীরের সেই মেলানিন নামক উপাদান তৈরী হওয়া কমিয়ে দেয়। মেলানিনই শরীরের রং কালো ও ফর্সা হবার জন্য দায়ী। এই মেলানিনই ক্ষতিকর সূর্যের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই ক্রিমগুলো ব্যবহার করলে প্রথম দিকে সত্যিই মুখের রং উজ্জ্বল হয়৷ কিন্তু কিছু দিন পরেই বোঝা যায়, এর মধ্যে থাকা বিটামেথাজোন, ক্লোবিটাজোল, মমিটাজোন প্রভৃতি স্টেরয়েড এবং হাইড্রোকুইনোন, রেটিমাইড অ্যাসিড ইত্যাদির জেরে কী মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে মুখের!
কী ক্ষতি করে এই রং ফর্সাকারি ক্রিম?
রং ফর্সাকারি ক্রিমে স্টেরয়েড, পারদ এমন সব উপাদান ব্যবহার করার ফলে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। চলুন দেখে নেই স্টেরয়েড ব্যবহারে যেসব ক্ষতি হয় তা হলো-
১) ত্বকে অনেক ব্রন ও শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়।
২) স্কিন পাতলা হয়ে যায় ফলে রোদে গেলে মুখ লাল হয়ে যায় আর মুখ জ্বালাপোড়া করে।
৩) ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামণ দেখা দেয়।
৪) ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করে দিলে গায়ের রং আগে থেকে কালো হয়ে যায়।
৫) ক্ষত সারানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়।
এই সব ক্রিমে ব্যবহৃত পারদ শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।
আর পারদ ব্যবহারে যে সকল ক্ষতি হয়-
১) কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
২) মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
৩) স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
৪) ফর্সা হওয়ার ক্রিমে অ্যাকটিভ কার্বন ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেক ক্ষেত্রে এই রং ফর্সাকারি ক্রিমের ব্যবহার থেকে ক্যান্সারও হয়ে থাকে।
ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা রাখতে নিয়মিত যে টিপসগুলো অনুসরণীয়
১) ত্বকের যত্নে এই সব রং ফর্সাকারি ক্রিম ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করাই উত্তম। আর এই উপাদানগুলো সবসময় আপনার ঘরে হাতের কাছেই থাকে। কী সেগুলো? হ্যাঁ, আপনি হলুদ, মসুরের ডাল, শসা, কলা ইত্যাদি ত্বকের যত্নে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
২) প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাবেন।
৩) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন।
৪) আর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাবেন ও দুশ্চিন্তা কম করবেন।
গায়ের ফর্সা রং সৌন্দর্যের মাপকাঠি নয়। মনের সৌন্দর্যই আসল। সবসময় বিশ্বাস রাখুন নিজের যোগ্যতায়। এ বিশ্বাস ধরা দিবে সাফল্য হয়ে। মিস ইউনিভার্স ২০১৯ মিস দক্ষিণ আফ্রিকা জোজিবিনি তুনঝি কিন্তু তথাকথিত সুন্দরী না হয়েও নিজের যোগ্যতা আর আত্মবিশ্বাসের জোরেই সফল হয়েছেন। সব সময় ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম; হারবাল স্পা থাইল্যান্ড.কম
The post রং ফর্সাকারি ক্রিম কিভাবে কাজ করে ও কী ক্ষতি করে? appeared first on Shajgoj.