গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙ্গা সম্পর্কে সঠিক ধারণা আমাদের অনেকেরই নেই। সাধারণত অ্যামনিওটিক মেমব্রেন রাপচার (amniotic membrane rupture) হয় লেবার পেইন ওঠার পর, কোনো কারণে যদি এর আগেই মেমব্রেন রাপচার হয়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড (amniotic fluid) বা গর্ভস্থ পানি বের হয়ে যায় তবে তাকে প্রিম্যাচিউর রাপচার অফ মেমব্রেন (premature rupture of membranes) বলে। এটি গর্ভাবস্থায় একটি কমন প্রবলেম। অনেক মায়েরা বিষয়টি নিয়ে শংকিত থাকেন দেখা যায় কোনো কারণে যদি মাসিকের রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের হয় তবে বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীরা ধরে নেন এটা বাচ্চার পানি অর্থাৎ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ সময় অনেক কারণেই এমন সিক্রেশন হতে পারে, যেমন ইউরিন বা প্রস্রাব যদি বের হয় তা হলেও একে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর মতোই মনে হতে পারে। প্রেগনেন্ট অবস্থায় ভ্যাজাইনাল সিক্রেশন (vaginal secretion) অনেক বেড়ে যায়, যার ফলে মাঝে মাঝে এই নরমাল সিক্রেশনকেও অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ভেবে ভুল হতে পারে। তবে জানলেনতো গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙ্গা আসলে কী। চলুন এবার তবে জেনে নেই গর্ভাবস্থায় এই মেম্ব্রেন রাপচার কিভাবে ডায়াগনোসিস করা সম্ভব ও কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত!
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা ডায়াগনোসিস ও সতর্কতা
কিভাবে সঠিক ডায়াগনোসিস সম্ভব?
ভালোভাবে হিস্ট্রি নিয়ে আমরা কিছুটা আইডিয়া করতে পারি আসলেই মেমব্রেন রাপচার হয়েছে কি-না। মেমব্রেন রাপচার হলে সাধারণত একসাথে অনেক পানি বের হবে এবং পেটিকোট ভিজে যাবে এছাড়া স্পেকুলাম এক্সামিনেশন (speculum examination) এর মাধ্যমে জরায়ুর মুখ সরাসরি দেখে কনফার্ম করা যায় এবং কিছু ইনভেস্টিগেশন করেও বোঝা যায় এটা সত্যিই অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কিনা। অনেক মায়েদের ধারণা আল্ট্রাসনোগ্রাম এর মাধ্যমে এর ডায়াগনোসিস সম্ভব। আসলে আল্ট্রাসনোগ্রাম শুধুমাত্র বলতে পারবে তার অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কতটা আছে ফ্লুইড যদি কম থাকে, তবে সেটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে আর তাই মেমব্রেন রাপচার হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে কনফার্ম হওয়া যাবে না।
ফলাফল কী হতে পারে?
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যদি পানি ভাঙ্গার ঘটনা হয়ে থাকে তবে সাধারণত অ্যাবরশন (abortion) হিসেবেই ধরা হয়। আর যদি বাচ্চা ম্যাচিউর হতে কিছু দিন বাকি থাকে, তবে রোগীকে হাসপাতালে বেড রেস্টে রেখে বাচ্চার ম্যাচ্যুরিটি পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় তবে এর মধ্যে যদি লেবার পেইন (labor pain) অথবা ইনফেকশনের (infection) কোন লক্ষণ দেখা যায় তবে সেই প্রেগনেন্সি (pregnancy) আর কন্টিনিউ করা সম্ভব হয় না। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পানি ভাঙলে মাকে ২৪ ঘন্টার অবজারভেশনে রাখা হয়। ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে লেবার পেইন উঠে যায়। যদি লেবার পেইন না থাকে তবে ওষুধের মাধ্যমে ইন্ডাকশন লেবার পেইন (induction labor pain) শুরু করা করাও সম্ভব।
সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড রাপচার পানি ভাঙ্গা একটি ইমারজেন্সি সমস্যা। কারণ এই মেমব্রেন গর্ভস্থ বাচ্চাকে বাইরের জীবাণু থেকে রক্ষা করে। তাই মেমব্রেন রাপচার হলে রোগীকে জীবাণুমুক্ত প্যাড ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়। অ্যান্টি-বায়োটিক শুরু করা হয় ও একই সাথে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এবং ইউরিন পরীক্ষা করে দেখা হয় যে কোন ইনফেকশনের লক্ষণ আছে কিনা। কারণ বিভিন্ন ইনফেকশনের কারণেও মেমব্রেন রাপচার হতে পারে। তাই পানি ভাঙ্গার লক্ষণ দেখা দিলে গর্ভবতীদের উচিত অনতিবিলম্বে তার নিকটস্থ ডাক্তারকে অভিহিত করা।
তাহলে জেনে নিলেনতো গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা সম্পর্কে। আশা করি গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারে আসবে এই লেখা। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ডাঃ নুসরাত জাহান
অ্যাসোসিয়েট কন্সালটেন্ট অবস-গাইনী
ইমপেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম।
ছবি- সংগৃহীত: সেলকোডস.ইউএস; মেডক্লিক.অর্গ
The post গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙ্গা সম্পর্কে কতটুকু জানেন? appeared first on Shajgoj.