মেকআপ কেউ করে প্রয়োজনে আবার কেউ করে শখে। প্রয়োজন কিংবা শখ যাই হোক না কেনো মেকআপ নারীদের এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। সকালে অফিস থেকে শুরু করে রাতের পার্টি পর্যন্ত মেকআপ করতে হয় নারীদের। আর এই মেকআপ সহজ করার জন্য নানা ব্র্যান্ড নানা উপকরণের সম্ভার সাজিয়ে রেখেছেন। এত ব্র্যান্ড, এত উপকরণ এই সবকিছুর লক্ষ্য একটাই-নিজেকে সুন্দর করে তোলা। এত শত মেকআপের উপাদানের মধ্যে কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো ছাড়া মেকআপ অসম্ভব। মেকআপকে সুন্দর করতে এই উপকরণগুলো প্রয়োজন। প্রাইমার এমন একটি উপাদান, যা আপনার মেকআপকে করে তুলবে নিখুঁত এবং সুন্দর। প্রাইমার নামটা অনেকে শুনলেও এর ব্যবহার, প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনেকের কাছে ঘোলাটে ধারণা রয়েছে। আজকের এই ফিচারটি সব ধারণা পরিষ্কার করে দিবে। তাহলে দেখে নিন এবার…
প্রাইমার ব্যবহার নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা
প্রাইমার আসলে কী?
প্রাইমার-এর নামতো সবার জানা। কিন্তু এই প্রাইমারটা কী? প্রাইমার আপনার ত্বক এবং মেকআপের মধ্যে একটি লেয়ার তৈরি করে। এটি ত্বককে সরাসরি মেকআপ ব্যবহার থেকে রক্ষা করে। ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য মেকআপের আগে প্রাইমার ব্যবহার করে থাকেন। এটি ত্বকের ইন্স্যুরেন্স হিসাবে কাজ করে। শুধু কী তাই? মুখের বেইজ মৃসণ এবং ত্বকের বিভিন্ন দাগ লুকাতে প্রাইমার ব্যবহার করা হয়। বেশ কিছু বছর ধরে মেকআপ প্রেমীদের কাছে প্রাইমার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুধু ত্বকের জন্য নয়, ঠোঁট এবং চোখের জন্য রয়েছে আলাদা প্রাইমার।
অনেক সময়ই দেখা যায় আই শ্যাডো দেয়ার পর এর ঠিক কালারটা চোখে ফুটে উঠছে না। সেক্ষেত্রে আই প্রাইমার ব্যবহার করুন। এটি আই শ্যাডো আরো কালারফুল করে তোলে এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হয় আর লিপ প্রাইমারও ঠিক একই কাজে ব্যবহার করা হয় যাতে ঠোঁটে লিপস্টিকের আসল কালারটা ফুটে উঠে।
প্রাইমার ব্যবহার করতে কিভাবে বাছাই করবেন?
কোন প্রাইমারটি আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী সেটি নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধা দেখা দেয়। কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন প্রাইমারটি আপনার জন্য পারফেক্ট। তাহলে প্রশ্ন-উত্তর দেখে নেয়া যাক!
১) কী কারণে প্রাইমার ব্যবহার করবেন?
আপনি কি ত্বকের বলিরেখা বা রিংকেল ঢাকার জন্য প্রাইমার ব্যবহার করতে চান? নাকি ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করার জন্য প্রাইমার ব্যবহার করতে চান? ব্রণের সমস্যা অথবা স্কিন টোন (skin tone) ঠিক করতে প্রাইমার ব্যবহার করতে চান? এই প্রশ্নগুলোর উওর পেতে প্রাইমারের লেভেলটা পড়ে নিন। ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন পছন্দের প্রাইমারটি।
২) ত্বকের ধরন কোনটি?
আপনি শুষ্ক, তৈলাক্ত নাকি নরমাল ত্বকের অধিকারী? প্রাইমার ব্যবহার করার জন্য তা কেনার আগে অব্যশই নিজের ত্বকের ধরন সম্পর্কে জেনে নিন। তারপর ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাইমার পছন্দ করুন। তৈলাক্তের ত্বকের জন্য ম্যাটিফাইং অথবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (salicylic acid) বেইজড প্রাইমার পছন্দ করা উচিত। শুষ্ক ত্বকের জন্য জেল বেইজড প্রাইমার ইউজ করতে পারেন।
আপনি যদি ব্রণপ্রবণ অথবা সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারিণী হয়ে থাকেন, তবে ওয়াটার বেইজড প্রাইমার আপনার জন্য। সিলিকন বেইজড প্রাইমার ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারিণীরা ব্র্যান্ডের যেকোনো প্রাইমার ইউজ করতে পারেন। কিছুটা বয়স্ক ত্বকের জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ প্রাইমার ব্যবহার করাই ভালো।
৩) ফাউন্ডেশনের সাথে প্রাইমারের সামঞ্জস্য
ফাউন্ডেশন এবং প্রাইমার অব্যশই যেন একই বেইজের হয়। যদি ফাউন্ডেশ ওয়াটার বেইজড হয়, তবে ওয়াটার বেইজড প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে। প্রাইমার কেনার সময় হাতে একটু প্রাইমার লাগিয়ে নিন, তার উপর ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে আপনি আপনার ত্বকের জন্য পারফেক্ট প্রাইমারটি সহজে বেছে নিতে পারবেন।
প্রাইমারে ব্যবহারের পূর্বে করণীয়
১) প্রাইমার ব্যবহারের পূর্বে ত্বক অব্যশই পরিষ্কার করা প্রয়োজন। যেকোনো লাইট ক্লিনজার দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিন।
২) প্রাইমার ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে না। তাই মুখ ধোয়ার পর অব্যশই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ময়শ্চারাইজার আপনার ত্বককে নরম কোমল করে তুলবে। ময়শ্চারাইজার ভালো করে মিশে যাওয়ার পর ত্বকে প্রাইমার ব্যবহার করবেন।
প্রাইমার ব্যবহারের নিয়ম
১. অল্প পরিমাণে প্রাইমার নিয়ে মুখের বিভিন্ন অংশে লাগিয়ে নিন। এবার আঙ্গুল দিয়ে ম্যাসাজ করে ত্বকে লাগান। একইভাবে কপাল এবং ঘাড়ে প্রাইমার ম্যাসাজ করে লাগান।
২. আপনি হালকা করে ঠোঁটেও প্রাইমার লাগাতে পারেন। এটি লিপস্টিক দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী করতে সাহায্য করবে।
৩. প্রাইমার শুকানোর পর ত্বকে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। সঠিকভাবে প্রাইমার ব্যবহার করলে ফাউন্ডেশন কম ব্যবহার করা যায়। আপনি নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
প্রাইমার ব্যবহার নিয়ে কিছু টিপস
১) প্রাইমার আঙ্গুল দিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে, এতে ত্বকের টোনের সাথে ভালোভাবে মানিয়ে যাবে।
২) প্রাইমার ব্যবহারের আগে অব্যশই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৩) আপনার যদি নির্জীব মলিন ত্বক হয়, তবে টিনটেড প্রাইমার ( tinted primer) ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে একটি গ্লো এনে দিবে।
তাহলে জেনে নিলেনতো প্রাইমার কিভাবে, কখন ব্যবহার করতে হবে! এবার মেকআপ হবে পারফেক্টলি! মেকআপ করার সময় প্রাইমার নিয়ে আর কোনো দ্বিধাই থাকলো না!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; পিনটারেস্ট.কম ; ইমেজেসবাজার.কম
The post প্রাইমার ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে কতটা জানেন? appeared first on Shajgoj.