আপার বেলি ফ্যাট আমাদের জীবনের কমন একটা সমস্যা। এ সমস্যায় আমাদের উপরের পেটে চর্বি জমে কোমরের সাইজ নষ্ট করে দেয়। পেট ফুলে থাকার কারণে আমাদের কোন ড্রেসই মানানসই মনে হয়না। এ নিয়ে আমাদের বিব্রত থাকতে হয়। মেদজনিত সমস্যায় শরীরের সব অংশের তুলনায় দ্রুত আক্রান্ত হয় উপরের পেট। আর সবচেয়ে বেশী দেরীতেও ঝরে এ অংশের মেদ। শারীরিক সৌন্দর্য পুরাই নষ্ট করে দেয় এ অংশের মেদ। তাই এ নিয়ে নারী পুরুষ উভয়েরই দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অনেকের ক্ষেত্রে বংশগত সমস্যার কারণেও উপরের পেট বড় হয়। আবার হরমোন জনিত সমস্যার কারণেও উপরের পেটে মেদ জমে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের উপরের পেটের মেদ জমা থেকে বাঁচাতে পারে। চলুন জেনে নেই আপার বেলি ফ্যাট এর কারণ ও পরিত্রাণের উপায়।
যে ৫টি কারণে আপার বেলি ফ্যাট দেখা যায়
১) অস্বাস্হ্যকর খাবার
আমরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন জাঙ্ক ফুড (Junk food) যেমন ভাজাপোড়া খাবার,ফাস্টফুড ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করি। এসব খাবার বেশীরভাগই অস্বাস্থ্যকর। কারণ এগুলো আমাদের শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত জাঙ্ক ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের বিপাক তন্ত্রের ক্রিয়া হ্রাস করে এবং উপরের পেটে মেদ জমায়।
২) শারীরিক পরিশ্রম না করা
ব্যস্ততার কারণে বা আলসেমি করে আমরা শারীরিক পরিশ্রম করিনা। বাইরে বের হলে পায়ে না হেঁটে যানবাহন ব্যবহার করি। সিঁড়ি ব্যবহার না করে দ্রুত লিফটে উঠে যাই। নিয়মিত হাঁটাচলা আর ব্যায়াম আমাদের জন্য খুব জরুরি। এতে আমাদের শরীরসহ উপরের পেট মেদ মুক্ত থাকে।
৩) দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকা
আমাদের কঠিন জীবন ধারার কারণে আমরা প্রায়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। আর এ দুশ্চিন্তাই আমাদের উপরের পেটের চর্বি বাড়ায়। দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরে আ্যাড্রিনাল (Adrenaline) গ্রন্থি থেকে নিসৃত এক ধরনের হরমোন তৈরী করে, যা আমাদের যকৃত থেকে চিনি নিঃসরণ করে উপরের পেটে মেদ তৈরী করে।
৪) অনিয়মিত ঘুম
রাত জাগা,ঘুম কম হওয়া এসব কারণেও উপরের পেটে মেদ জমে।
৫) বয়স বাড়া
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসতে থাকে। তখন ত্বকের নিম্নস্তরের চর্বি হ্রাস পেতে থাকে এবং উপরের পেটে মেদ তৈরী হতে থাকে।
আপার বেলি ফ্যাট কমানোর উপায়
৫ টি উপায় অবলম্বন করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়
১) প্রচুর পানি পান করা
প্রচুর পানি পান করতে হবে। বাইরের এনার্জি ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস এগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান আমাদের শরীরে ম্যাজিকের মতো চর্বি কাটতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে অর্ধেকটা লেবু ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে উপরের পেটের মেদ কাটে। আবার আদা থেতো করে ১ গ্লাস পরিমাণ পানির সাথে সেদ্ধ করে এতে অর্ধেকটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলেও মেদ কেটে যায়। নিয়মিত এই মিশ্রণ গুলো খেলে উপরের পেটের মেদ অনেকাংশেই কেটে যাবে।
২) স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
সকালের নাস্তায় ওটস রাখতে হবে। এক বাটি ওটসের সাথে ফ্যাট ফ্রি দুধ, সাথে যেকোন ফল মিশিয়ে সকালের নাস্তা করতে হবে। প্রচুর ফলমূল খেতে হবে। ওটস আমাদের শরীরের এনার্জি বাড়ায়।
৩) হেলদি ডায়েট অনুসরণ করা
সঠিক ডায়েট অনুসরণ করলে আমাদের উপরের পেটের মেদ কমার সাথে সাথে সুন্দর ও সুগঠিত থাকবে। একবারে ভরপেট না খেয়ে দৈনিক ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খাবেন। এতে করে ঘন ঘন ক্ষুধাভাবটা কেটে যাবে আর খাওয়ার পরিমাণটাও কমে যাবে। কম তেল ও কম মশলা যুক্ত খাবার খেতে হবে। রান্নায় সয়াবিন ও সরিষার তেলের পরিবর্তে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করবেন। লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি খেতে হবে। চর্বি জাতীয় মাংস বর্জন করে মুরগীর মাংস খান। আঁশ জাতীয় খাবার ,মাছ, ডিম,শাকসবজি ও সালাদ খেতে হবে। খাওয়ার ১৫/২০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। এতে ক্ষুধাভাব কমে যাবে। খাওয়ার এক ঘন্টা পর পানি পান করতে হবে। রাতে ঘুমের ২ ঘন্টা আগে খাওয়া শেষ করবেন।
৪) আট ঘন্টা ঘুমান
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে আমাদের উপরের পেটের মেদ বাড়ে। আমাদের শরীরে ২ ধরনের হরমোন কাজ করে-
১. Ghrelin Hormone (গ্রীলিন হরমোন)।
২. Leptin Hormone (ল্যাপটিন হরমোন)।
Ghrelin হরমোন আমাদের শরীরে ক্ষুধাভাব তৈরী করে। যখন আমরা কম ঘুমাই, রাত জাগি তখন আমাদের শরীরে প্রচুর Ghrelin হরমোন তৈরী হয়। এতে আমাদের ক্ষুধাভাবও বেড়ে যায়। Leptin হরমোন জানান দেয় কখন আমাদের খাওয়া বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের শরীর থেকে Leptin হরমোন কমে যেতে থাকে। কাজেই দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুম আমাদের শরীর ফিট রাখে এবং উপরের পেটে মেদ না জমতে সাহায্য করে।
৫) সপ্তাহে ৪ দিন ব্যায়াম
উপরের পেটের চর্বি কমানোর বেস্ট সমাধান হলো ব্যায়াম। ব্যাস্ততার কারণে আমরা জিমে যেতে না পারলে ঘরে বসেই সহজ কিছু ব্যায়াম করে আমরা উপরের পেটের মেদ কমাতে পারি। যা করতে সময়ও কম লাগে এবং বাড়তি কোন উপকরণের প্রয়োজনও পড়ে না। সপ্তাহে ৪ দিন ৪৫ মিনিট করে ব্যায়াম করুন। এছাড়া সাঁতার কাটা,সাইকেল চালানো উপরের পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
আপার বেলি ফ্যাট কমাতে ব্যায়াম
নীচে কিছু ব্যায়ামের নিয়মাবলী আলোচনা করা হলো, উপরের পেটের মেদ দ্রুত কমাতে যা আপনি ঘরে বসেই করতে পারবেন
১) আরামদায়ক দূরত্বে পা ফাঁক করে মাথার পেছনে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে একবার বা দিকে ঝুঁকতে হবে, আরেকবার ডান দিকে ঝুঁকতে হবে। এভাবে ৩০ বার করুন।
২) পা দুটো সোজা করে রেখে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত নিতম্বের নিচে থাকবে। হাত দুটো নিচে রেখে পা দুটো এবার আরও উপরে তুলতে হবে। উপরে উঠানোর সময় নিশ্বাস ছাড়তে হবে এবং নিচে নামানোর সময় নিশ্বাস নিতে হবে। এভাবে ১৫ থেকে ২০ বার করতে হবে।
৩) ম্যাটের উপর হাঁটু ভাজ করে রাখুন। এবার মাথার নিচে হাত রাখুন। কোমর পর্যন্ত পুরো শরীরকে উপরের দিকে উঠান। আবার নামিয়ে আনুন। কিন্তু শরীর নামানোর সময় মাথা যেন ম্যাটের সঙ্গে লেগে না যায়, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকে। এভাবে ৩০ বার করুন।
৪) হাত মাথার নিচে রাখুন। পা ভাঁজ করে উপরের দিকে তুলুন। এবার মাথা উপরে তুলে বাম হাতের কনুই দিয়ে ডান পা ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। একই ভাবে ডান কনুই দিয়ে বাঁ পাশের পায়ে ছোঁয়াতে হবে। এভাবে ৩০ বার করুন।
৫) দুই কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। চোখ থাকবে সামনের দিকে। পায়ের আঙ্গুল ও কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে পুরো শরীরকে উপরের দিকে উঠান। দুই কনুই ও পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে প্রতিবার ১ মিনিট থাকতে হবে। এভাবে ৩ বার করুন।
নিয়মিত এ ব্যায়াম করলে ৩ মাসের মধ্যে এর সুফলতা পাবেন। সকালে খালি পেটে ৪৫ মিনিট অথবা সকালে সম্ভব না হলে সন্ধ্যা বা রাতের দিকেও করতে পারেন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর দৈনন্দিন জীবনের সুন্দর পরিবর্তন আপনাকে উপরের পেটের মেদ ঝরিয়ে করে তুলতে আকর্ষণীয় ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম
The post আপার বেলি ফ্যাট | কারণ ও পেটের মেদ কমাতে ৫টি কার্যকরী ব্যায়াম appeared first on Shajgoj.