Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার |অতিরিক্ত সচেতনতা ওসিডি রোগ নয়তো?

$
0
0

রিমার মা সব কিছু নিয়েই অনেক বেশি সচেতন। কোনো কাজেই একচুল গাফলতি হয়ে যাক তা চান না। তাই এককাজ বারবার চেক করেন। কিন্তু মাঝেমাঝে এই ব্যাপারটি নিয়ে এত বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পরেন যে তা আর স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে না। রিমা তার মায়ের এই স্বভাবটি সম্পর্কে গল্পে গল্পে তার এক ডাক্তার বন্ধুর সামনে বলছিল একদিন। তখন তার বন্ধু বলেছিল যে, এটা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (obsessive-compulsive disorder)-ও হতে পারে। একে সংক্ষেপে ওসিডি (OCD) বলা হয়। আসুন এবার ওসিডি কী, কাদের হয়, কেন হয় আর এই সমস্যা হলে কী করতে হবে তাই দেখে নেই!

অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার  নিয়ে যাবতীয় তথ্যসমূহ

ওসিডি কী?

ওসিডি - shajgoj.com

কোন কিছু দুইবার চেক করা একটি নরমাল বিহেইভিয়ার। যেমন ধরুন, গেটের তালা লক করেছেন কিনা সেটা চেক করা কিংবা বাইরের রুমের লাইট নিভিয়েছেন কিনা সেটা যাচাই করা। কিন্তু আপনি দরজা লক করেছেন কিনা কিংবা লাইট নিভিয়েছেন কিনা এমন ঘটনা যদি ২০ বার বা ৩০ বারের মতো মনে সন্দেহ জাগায়, তখন এটাকে নরমাল বলা যায় না। এটি চিন্তাবাতিকগ্রস্থ ও বাধ্যতাধর্মী আচরণের (শুচিবাই) একটি উদ্বেগজনিত রোগ। সারা বিশ্বে প্রতি ৫০ জনে ১ জন জীবনের কোনো না কোনো সময় এই রোগে ভোগে। এই রোগে আক্রান্ত মানুষেরা সামাজিক ও ব্যাক্তিগতভাবে খুবই দুশ্চিন্তায় ভোগে।

একটু ব্যাখ্যা

ধরা যাক কারো মনে হলো, তার হাতে বা গায়ে ময়লা লেগে আছে। যদিও তিনি ভালো করেই জানেন কোথাও ময়লা নেই, তরপরও চিন্তাটি বারবার আসতে থাকে এবং তিনি বারবার হাত ধুতে যান। এমনকি বারবার সাবান ব্যবহার করতে থাকেন। এখানে ময়লার চিন্তাটি হলো ‘অবসেশন’, আর হাত ধোয়া হবে ‘কম্পালশান’। এ দুটি মিলিয়েই রোগটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার’ বা ‘ওসিডি’ যাকে বাংলায় ‘শুচিবাই’ বলা হয়।

কাদের হয় ও কেন হয়?

ওসিডি আক্রান্ত - shajgoj.com

সাধারনত টিনএজ গ্রুপ থেকেই এই রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সেই শুরু হতে পারে। ছেলে-মেয়ে সমানভাবেই আক্রান্ত হয়। এটি একটি মাইনর মেন্টাল ডিসঅর্ডার। এতে কিন্তু ভোগান্তি কামনায়। অনেক মানসিক রোগের মতোই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কারণ এখনো জানা যায় নি। তবে জেনেটিক, বায়োলজিক্যাল এবং এনভায়রনমেন্টাল কিছু কিছু কারণেও এই রোগ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।যাঁদের পরিবারিকভাবে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পাঁচগুণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে – মস্তিষ্কের স্নায়ু-রাসায়নিক সেরোটোনিন বা গ্লুটামেট-এর বিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ থেকেও ওসিডি হতে পারে।

ওসিডি রোগের লক্ষণ কী কী? 

১) অবসেসিভ থটস

অবসেসিভ থটস বা আবেশিক চিন্তা ভাবনায় রোগী মথিত হয়। রোগীর মনের ভিতর একই বাক্য বা গানের সুর বারবার তার অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভেসে আসে, কোনোভাবেই তিনি তার থেকে বের হতে পারেন না।

২) অমূলক ভয়

ওসিডির লক্ষণ অমূলক ভয় - shajgoj.com

রোগীর মধ্যে জটিল কিছু রোগ সম্পর্কে ভয়-মিশ্রিত চিন্তা বারবার দেখা দেয়। তিনি ভয় পেতে থাকেন। তাঁর হয়তো ক্যানসার, এইডস বা সিফিলিস হবে। যদিও এসব তাঁর অমূলক ভয়।

৩) অশ্লীল চিন্তা

অশ্লীল চিন্তা অনিচ্ছাসত্ত্বেও এদের মনে বাসা বাঁধে।

৪) কাজ করেও না করা ভাবা

চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে কিছুক্ষণ পরে মনে হয়, চিঠি বোধহয় ফেলা হয় নি। একই কাজ বারংবার করেও ভাবে যে সে তা করে নি।

৫) একই কাজ বারংবার করা

ওসিডির লক্ষণ অহেতুক বারবার হাত ধোঁয়া - shajgoj.com

এই রোগী সংশয় ও সন্দেহের বশে বাধ্য হয়ে একই কাজ বারংবার করে। বাড়ীর বাইরে বেরনোর সময় হয়তো লাইট-ফ্যান বন্ধ করেছে – কিন্তু কিছু দূর গিয়ে তাদের মনে হয় আলো বা পাখা বন্ধ করা হয় নি। আবার বাড়িতে ফিরে এসে পরীক্ষা করে দেখে।

ওসিডি-এর চিকিৎসা আছে কি ?

অন্যান্য শারীরিক রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার মাধ্যমে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ঠিক তেমনি এই ওসিডি রোগটিও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

চিকিৎসা সাধারণত দুই প্রকার। সে দুটি হলো-

১. সাইকোলজিক্যাল

২. ফার্মাকোলজিক্যাল

১) সাইকোলজিক্যাল

ওসিডর জন্য কগনেটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি - shajgoj.com

দুই ধরনের চিকিৎসা একসাথে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে ‘কগনেটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি’ খুব উপকারী। এখানে রোগীর ভুল চিন্তাগুলোর উপর কাজ করা হয়। বিশেষ করে নেগেটিভ থট, কোর বিলিভ এগুলির পূণর্গঠন করার চেষ্টা করা হয়।

২) ফার্মাকোলজিক্যাল

ওসিডি রোগীর ওষুধ - shajgoj.com

এবার আসি, ফারমাকো থেরাপি বা মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা। প্রবাদ আছে কথায় চিড়া ভিজে না। তাই রোগীরা কিছু মেডিসিন প্রত্যাশা করে। বাস্তবিকভাবেই কিছু অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট শুচিবায়ু রোগীদের খুব কাজে আসে। ওসিডি রোগীদের একইসাথে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এবং ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার থাকতে পারে। বিশেষ করে ফ্লোক্সেটিন, সারট্রালিন, সিটালোপ্রাম,  অ্যাসিটোপ্রোলামিন, ফ্লোভোক্সেমিন অত্যন্ত কার্যকর ঔষধ। ক্লোমিপ্রামিন, ইমিপ্রামিন এক সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল।

কী ধরনের খাবার ওসিডি রোগীদের জন্যে নিষিদ্ধ?

১) চিনি জাতীয় খাবার

চিনি জাতীয় খাবার ওসিডি রোগীর জন্য নিষিদ্ধ - shajgoj.com

সুগারিফুড ওসিডি রোগীদের জন্যে ক্ষতিকর। সুগারি ড্রিঙ্ক, সোডা, ক্যান্ডি, অন্যান্য মিষ্টি এই রোগীদের খাওয়া বারণ। এতে উৎকণ্ঠা আর প্যানিক অ্যাটাক বাড়তে পারে।

২) কফি

এই রোগীদের কফি অ্যালকোহল খাওয়া একদম নিষেধ। দু’-এক কাপ চা চলতে পারে।

৩) ফল

সব ধরনের ফল ওসিডি রোগীদের জন্যে ভালো।

৪) প্রসেসড ফুড

ওসিডি যেহেতু সবচেয়ে কঠিন ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস, এই রোগীদের খাদ্য তালিকায় প্রসেসড মিট ও ফিশ আর মিষ্টিযুক্ত ডেজার্ট রাখবেন না। এতে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বাড়তে পারে। অন্যান্য প্রসেসডফুড-ও এদের খাদ্যতালিকা থেকে বর্জন করতে পারেন।

ওসিডি রোগীদের জন্যে কিছু পরামর্শ

১. নিয়মিত রিল্যাক্সেশন টেকনিক অভ্যাস করুন। যোগাসন, প্রাণায়াম, মাইণ্ডফুল মেডিটেশন, ডিপ-ব্রিদিং এক্সারসাইজ এই রোগীদের স্ট্রেস ও টেনশন কমানোর জন্যে কার্যকরী।

ওসিডি রোগে যোগাসন - shajgoj.com

২. পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম চর্চা করতে হবে। অবশ্যই বর্জন করতে হবে অ্যালকোহল আর নিকোটিন।

৩. ওসিডি সাপোর্ট-গ্রুপ-এর সদস্য যারা, তাদের পরামর্শ মেনে দিন যাপন করলে রোগের মারাত্মক কর্ম তাড়না থেকে রেহাই মিলবে।

যদি কমপক্ষে ৬ মাস সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করা যায়, তবে অনেকে একেবারেই ভালো হয়। কারো কারো বহুদিন পর রোগটি ফিরে আসতে পারে। কেউ কেউ বারবার আক্রান্ত হয় এবং তাদের চিকিৎসা নিয়েই স্বাভাবিক থাকতে হবে। এই রোগীদের কিছু আচরণ দেখে অনেকে এদের উন্মাদভাবে। এটি একটি বড় অন্যায় কাজ। তাই আসুন ওসিডি সম্পর্কে জানি এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করি।

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম

The post অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার | অতিরিক্ত সচেতনতা ওসিডি রোগ নয়তো? appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles