অতিরিক্ত চুল তখনই পড়ে যখন আপনার স্ক্যাল্প ও চুলের কোষে কোন সমস্যা থাকে। এটা পুষ্টির অভাবেও হতে পারে, অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহারের জন্যও হতে পারে, আবার শারীরিক জিন-এর কোন প্রব্লেমের জন্যও হতে পারে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় আমরা যত হেলদি খাবারই খাই না কেন, শারীরিক সকল ঘাটতি পূরণ হয় না। সেজন্য প্রয়োজন চুলের বিশেষ যত্ন নেওয়া। তাছারাও আমাদের দেশের আবহাওয়া ও ধুলাবালির অবস্থা নিয়ে তো আর বলার কিছুই নেই।
এক্সপার্ট অপিনিয়ন (Expert opinion) অনুযায়ী প্রতিদিন ১০০টা চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর থেকে বেশি হলে তখন চুলের বিশেষ যত্ন নেওয়া আবশ্যক।
প্রকৃতিই আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে যা দিয়ে আমরা আমাদের নানান শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে পারি। কিন্তু কোনটা কিসের জন্য কিভাবে কাজ করে ও উপকারী, সেটাই মূলত জানা থাকতে হবে।
তাই আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম খুবই বিশেষ একটি প্রাকৃতিক উপাদানের ট্রিটমেন্ট টিপস যা আপনার চুল পড়া বন্ধ করবে ও চুলকে অনেক হেলদি ও সুন্দর করে তুলবে।
এই প্রাকৃতিক ট্রিটমেন্ট-টা হল শুধুমাত্র অ্যালোভেরা ও নারিকেলের দুধের যাদু। এই দুটো উপাদানের নাম শুনেই তো বুঝা যাচ্ছে যে চুলের জন্য এটা কতটা বেশি পরিমাণে কার্যকরী হবে। এই দুটোর কম্বিনেশন-এ রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড, আর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা আপনার চুলের ন্যাচারাল পি.এইচ (Ph) ব্যালেন্সকে ধরে রাখবে।
তাছাড়া রুক্ষতা ও ভঙ্গুর হয়া থেকে রক্ষা করবে, একদম ভেতর থেকে স্বাস্থ্যোজ্জল করে তুলবে, চুলকে অনেক হাইড্রেট করবে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে, চুলে অনেক পুষ্টি যোগাবে। চুলের আরও যত নানাবিধ সমস্যা আছে, যেমন খুশকি, সেটাও দূর হয়ে যাবে। এটা ডিপ কন্ডিশনার ও হেয়ার মাস্ক হিসেবে কাজ করবে।
ট্রিটমেন্ট-টি তৈরি করার পদ্ধতি
১) অ্যালোভেরা জেল ৫ টেবিল চামচ (৭৫ গ্রাম)। চামচ দিয়ে ভেতরের জেল বের করে নিতে পারেন বা চাইলে কিনেও নিতে পারেন।
২) নারিকেলের দুধ ১/২ কাপ (১২৫ মিলি-পরিমাণটি নির্ভর করবে চুলের লম্বা ও ঘনত্বের উপর। উল্লেখিত পরিমাণ আপনার চুলে কম হলে তা বুঝে পরিমাণটি বুঝে নিবেন)
৩) একটি ব্লেন্ডার-এ নারিকেলের দুধ ও অ্যালোভেরা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ব্লেন্ড করে স্মুথ একটি ক্রিম তৈরি করে ফেলুন।
চুলে লাগানোর পদ্ধতি
আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত খুব ভালো করে সবা জায়গায় লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, এরপর মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চমৎকার একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন চুলে।
এভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে চুল পড়া একদম কমে যাবে। আর যাদের চুল পড়ার সমস্যা নেই তারা ডিপ কন্ডিশনিং-এর জন্য সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করলেই হবে।
অ্যালোভেরার গুণাগুণ
চুলের যত্নের জন্য অ্যালোভেরা হচ্ছে একটি বেস্ট চয়েজ। যত রকম হেলদি প্রোডাক্ট আমরা কিনে থাকি সব গুলোতে যত গুনাগুণ আছে, তা এই অ্যালোভেরা একাই কভার করে দিতে পারে। শুধু তাই-ই নয়, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি কমপ্লেক্স এবং ২০ ধরনের মিনারেলস যা আপনার চুলের বৃদ্ধির জন্য অনেক প্রয়োজন। আরও চুলে অনেক শক্তি যোগায়, সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় করে চুলের দুর্বলতা দূর করে। এতে স্বল্প পরিমাণ ভিটামিন ই-ও রয়েছে, যা অ্যান্টি-এজিং-এর প্রোটেকশন করে।
স্ক্যাল্প-এ ব্যবহার করলে চুলের তৈলাক্ত ভাবকে ব্যালেন্স করে, চুলের ন্যাচারাল তেল তৈরির কোষকে কোন ক্ষতি করা ছাড়াই, চুলকে অনেক আদ্র ও মোলায়েম করে, চুলে চকচকে ভাবটি আনে। যেহেতু এতো অ্যান্টি-ফাঙ্গাল তাই খুশকি ও স্ক্যাল্প-এর অন্যান্য ইনফেকশন দূর করে।
নারিকেলের দুধের গুণাগুণ
নারিকেলের দুধ একটি ভেজিটেবল প্রোডাক্ট যা দুর্বল চুলের জন্য খুবই উপকারী এবং চুল পড়া কমায় কারণ এতে আছে অ্যামিনো এসিড ও হেলদি ফ্যাট। রোদের তাপ ও ব্যবহৃত কেমিক্যাল-গুলোও প্রতিরোধ করে।
তাই, দেখা যাচ্ছে যে এই দুটোর কম্বিনেশন খুবই দারুণ একটি ডিপ-কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট হিসেবে কাজ করবে যা আপনি ঘরে বসেই খুব সহজেই করতে পারবেন, পার্লারে গিয়ে চুলের জন্য অযথা টাকা নষ্ট করার আর প্রয়োজন হবে না। খুব সহজেই চুলের সব সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন, বিশেষ করে চুল পরার সমস্যা তো সমাধান হবে সবার আগে।
ছবি- ইমেজেসবাজার.কম, সুপার.ইউএ, ইহাউ.কম