ঝকঝকে, উজ্জ্বল, মখমলের মতো ত্বক, তাও আবার বাড়িতে বসে! সোনার পাথরবাটির মতো শোনাচ্ছে? এই অসম্ভবকে সহজে সম্ভব করার উপায় নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।
ত্বকের যত্ন নেওয়া কি চাট্টিখানি কথা! মুখ পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত স্ক্রাব ব্যবহার করাতো রয়েছেই। ফেইস প্যাক, ময়েশ্চারাইজ়ার, টোনার ইত্যাদি হাজারও প্রডাক্টের ঝামেলা। অবশ্য তাতে যদি কাজের কাজ হয়, তাহলে এই পরিশ্রমটুকু করে নিতে হয়তো অনেকেই আপত্তি করবেন না। আসলে শরীরের যেমন বিভিন্ন কাজ করতে সময়ে সময়ে খাবারের দরকার হয়, তেমনই ত্বকেরও সুন্দর এবং সুস্থ থাকার জন্য খাবার, অর্থাৎ পুষ্টির প্রয়োজন। আর ত্বকের পুষ্টিতে যদি কোনও ঘাটতি না থাকে, তাহলে তার পরিচয় আপনার মুখে ফুটে উঠতে বাধ্য। নিশ্চয়ই ভাবছেন, ত্বকের উপযুক্ত খাবারগুলো কী কী? সে কথা বলতেই তো আসা। বাড়িতে বসে সহজে ত্বকের জেল্লা বাড়ানোর উপযুক্ত রেসিপি রইল সকলের জন্য।
ইনস্ট্যান্ট জেল্লার জন্য
এবার আসি তাঁদের প্রসঙ্গে, যাঁরা সাপ্তাহিক রূপচর্চায় বিশ্বাসী। এই ধরনের লোকের সংখ্যাই কিন্তু আজকাল বেশি। পাঁচ মিনিটে ত্বকের জেল্লা বাড়ানো গেলে, আর দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করতে যাবেন কেন! ত্বকে ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনতে একাধিক ফেইস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে যে ফলটা পাবেন, তা কিন্ত কখনই এই ইনস্ট্যান্ট প্যাকে আসবে না। তা দীর্ঘস্থায়ীও হবে না। তবে সময়ের অভাব থাকলে উপায় তো আর কিছু নেই।
সবার ত্বকই ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনার ত্বকের জন্য যেই প্যাকটি সঠিক ও উপযুক্ত, সেটাই বেছে নিবেন। আজ ১০টি সহজ রেসিপি শিখিয়ে দিচ্ছি। নিয়মিত এই প্যাকগুলো ব্যবহার করলে সার্বিকভাবে ত্বকের উপকারই হবে। চলুন তবে আর দেরী না করে ত্বকে ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনার টিপসগুলো শিখে নেওয়া যাক।
১) হলুদ
১/২ চা-চামচ হলুদগুঁড়ো এবং ৪ চা-চামচ বেসন পরিমাণমতো দুধ দিয়ে গুলে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখে এবং গলায় এই প্যাক লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হলুদে ত্বকের উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এই প্যাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে দু’বার এই ফেইস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
২) গাজর
গাজর ঝিরি ঝিরি করে কেটে রস বের করে নিন (অথবা ঐ মিহি কুঁচিও ব্যবহার করতে পারেন)। এতে অল্প মধু এবং সামান্য টকদই মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
গাজরে থাকে ভিটামিন এ যা ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক মসৃণ থাকে। সপ্তাহে একবার এই ফেইস প্যাক ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। একবার ব্যবহার করলেই দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
৩) অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা! ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চা-চামচ মধু এবং ১ চা-চামচ দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বক নরম থাকলে এবং ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ সঠিক থাকলে ত্বক এমনিতেই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখাবে।
৪) বেকিং সোডা
১ চা-চামচ বেকিং সোডা, ১ টি ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু এবং আধা চা-চামচ অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট এই প্যাক মুখে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই পার্থক্য দেখতে পাবেন।
ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে এবং ত্বকের পিএইচ লেভেল সঠিক রাখতে বেকিং সোডা অব্যর্থ।
৫) পাতিলেবু
১ চা-চামচ পাতিলেবুর রস এবং ১ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে সার্কুলার মোশনে ত্বকে মাসাজ করুন। খুব আলতোভাবে মাসাজ করবেন। চিনি গলে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
পাতিলেবু ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বককে পরিষ্কার রাখে এবং ট্যানও দূর করে। ফলস্বরূপ ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায়।
৬) পেঁপে
ত্বকের যত্নে পেঁপের ফেইস প্যাক দারুণ! ১ টেবিল চামচ পাকা পেঁপের সঙ্গে ২ চা-চামচ শসার রস এবং অর্ধেকট কলা চটকে মিশিয়ে মুখে লাগান। আধঘণ্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকে চটজলদি জেল্লা আনতে এই প্যাক দারুণ কার্যকরী। ভিটামিন এ এবং সি-এর অন্যতম প্রধান উৎস পেঁপে। পেঁপেতে রয়েছে বিএইচএ যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও সাহায্য করে।
৭) গ্রিন টি
১ কাপ জলে ২ চা-চামচ গ্রিন টি দিয়ে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। ২ চা-চামচ এই গ্রিন টি লিকারে ১ চা-চামচ ব্রাউন সুগার এবং আধ চা-চামচ মিল্ক ক্রিম মিশিয়ে মুখে লাগান। সার্কুলার মোশনে ঘষে ১০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
শরীরের টক্সিন দূর করতে যেমন গ্রিন টি উপকারী, তেমনই ত্বকের টক্সিন দূর করে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করতেও গ্রিন টি-র অনেক গুণাগুণ।
৮) গোলাপজল
গোলাপজল আধঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। এতে তুলো ডুবিয়ে মুখে চেপে চেপে লাগান। প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যেতে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। অথবা গোলাপজলের আইসকিউব বানিয়ে তাও ব্যবহার করতে পারেন। ভাল ফল পাবেন।
ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে গোলাপজলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এটি ত্বকে আর্দ্রতাও সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৯) কেশর
১ টেবিল চামচ দুধ ও ১ টেবিল চামচ মধুতে কয়েকটা কেশর ফেলে রাখুন কিছুক্ষণ। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ভাল ফল পেতে এই প্যাক সপ্তাহে তিন-চারবার ব্যবহার করতে পারেন।
উজ্জ্বল, লাবণ্যময় ত্বকের জন্য কেশরও খুব ভাল উপাদান। এতেও ত্বকে নিমেষে জেল্লা আসে।
১০) কমলালেবুর খোসা
১ চা-চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়োর সঙ্গে ১ চা-চামচ গোলাপজল মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
স্ক্রাব হিসেবে তো কমলালেবুর খোসার জবাব নেই। তবে ভিটামিন সি-তে পূর্ণ থাকায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও কমলালেবুর খোসা কার্যকরী।
ছবি- ফ্যাবহাউ.কম, পিন্টারেস্ট.কম, ইমেজেসবাজার.কম