আপনার স্কিন যেমনই হোক না কেনো আপনি চাইবেন আপনার ত্বক আরেকটু হেলদি, গ্লোয়িং এবং যতটা সম্ভব অয়েল ফ্রি হোক। কিন্তু চারদিকের এত দূষণ, অপরিকল্পিত ডায়েট, বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে চাইলেই সেই কাঙ্ক্ষিত ‘ড্রিম স্কিন’ পাওয়া যায় না। তাই দিনের পর দিন ত্বক তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য হারানোর পাশাপাশি ত্বকে দেখা দেয় একনে, ব্রণ, ডার্ক স্পট-সহ রিংকেল এবং ফাইন লাইন-এর মতো বিভিন্ন সমস্যা। কিন্তু আপনি কি জানেন? ত্বকের এতসব সমস্যা অসামান্য গুণের অধিকারী মধু এক নিমেষেই সমাধান করতে পারে। এটা, একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা সূর্যরশ্মি এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে ও ত্বকের সব সমস্যা দ্রুত সারিয়ে তোলে। এটি একটি আদর্শ ময়েশ্চারাইজিং এবং শোধক এজেন্ট যা ত্বকের ক্ষত নিরাময় করে কোলাজেন গঠনের মাধ্যমে। তাই আজ আপনাদের জন্য রইলো ত্বকের সৌন্দর্যে মধুর ৪ ধরনের ব্যবহার।
১. মধুর তৈরি ফেইস ওয়াশ
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ১ চা চামচ কাঁচা দুধ বা গোলাপজল
- ১ চা চামচ চন্দনের গুঁড়া
- ১ চিমটি হলুদ গুঁড়া
উপরের সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর প্যাক-টি মুখে লাগিয়ে নিচ থেকে উপরের দিকে ফেইস ওয়াশ-এর মত করে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর একটি নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এই ফেইস ওয়াশ-টি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারবেন। মধু এবং এই প্যাক-এর অন্যান্য উপকরণগুলো ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করবে এবং ত্বকের ইমপিউরিটি দূর করবে। গোলাপ জল ত্বককে করে তুলবে উজ্জ্বল ও টানটান।
২. মধু, বাদাম ও লেবুর রসের তৈরি স্ক্রাব
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ২ টেবিল চামচ মিহি গুঁড়া করা কাজুবাদাম
- ১/২ চা চামচ লেবুর রস
উপরের সবগুলো উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে একটি দানাদার মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এটি আপনার মুখের ত্বকে লাগিয়ে উপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে উপরে আলতোভাবে ও রাউন্ড মোশন-এ ম্যাসাজ করুন প্রায় ৩-৪ মিনিটের মতো। এবার হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্যাক-টি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে হবে। এই প্যাক-টিতে থাকা বাদামের গুঁড়া আপনার ত্বককে এক্সফলিয়েট করবে এবং ত্বককে পুনরায় গঠন করতে সাহায্য করবে। এতে আছে ভিটামিন ই, যা ত্বককে আরো ময়েশ্চারাইজড করে তুলবে। আর লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এর কাজ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
৩. মধু ও চন্দনের ফেইস প্যাক
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ২ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া
- ১/২ চা চামচ লেবুর রস
গোলাপ জল, মধু, চন্দনের গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর এর সাথে যোগ করুন কয়েক ড্রপ লেবুর রস। সবকিছু মিশিয়ে সুন্দর একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই প্যাক-টি মুখে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক-টি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন। প্যাক-টিতে থাকা চন্দনের গুঁড়া ত্বকের ব্রণ ও একনের প্রবণতা কমিয়ে ত্বককে দাগ মুক্ত করতে সাহায্য করে এবং ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
৪. মধু এবং ওটসের ফেস প্যাক
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ ওটসের গুঁড়া
- ১ টেবিল চামচ মধু
- গোলাপ জল
ওটস এবং মধু মিশিয়ে নিন। এবার এতে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশ্রিত করুন। সবকিছু মেশানো হয়ে গেলে আপনার মুখের ত্বকে প্যাক-টি অ্যাপ্লাই করুন এবং ১৫- ২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন। প্যাক শুকিয়ে গেলে মুখটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এই প্যাক-টি আপনি ৪-৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক-টিতে থাকা ওটস ত্বকের অমসৃণ অবস্থা সারিয়ে তোলে ত্বককে আগের চাইতে মসৃণ করে তোলে, ত্বকের নিস্তেজ ভাব দুর করে ত্বকের লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনে। এছাড়াও ওটস ব্রণযুক্ত ত্বকের যত্নে বিশেষভাবে উপকারী।
মধুর উপকারিতার কথা বলে শেষ করার মতো নয়। এটি শরীর ও ত্বকের যত্নে সমানভাবে উপকারী। আপনার প্রাত্যহিক খাবার টেবিলে মধু রাখার পাশাপাশি এটি আপনার রোজকার বিউটি রুটিনেও যোগ করতে পারেন। সব ধরনের ত্বকের যত্নে মধু অসাধারণ কাজ করে তাই আর দেরি না করে ত্বকের যে কোন সমস্যা সমাধানে মধুর তৈরি প্যাক-গুলো ব্যবহার করা শুরু করে দিন আজই।
লিখেছেন- নাইমা আক্তার
ছবি- ইমেজেসবাজার.কম