কোন ভুমিকায় না গিয়ে সোজা ওজন নিয়ন্ত্রণের সহজ পন্থায় চলে যাচ্ছি …
(১) খেতে বসবেন ছোট প্লেট/বাটিতে। কারণ আপনি যখন ছোট সাইজের প্লেট বা বাটি নিয়ে বসবেন, তখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই নেয়ার জায়গার অভাবে খাবার টা পরিমাণে কম তুলবেন। আমাদের অনেকের ই মীনা কার্টুনে দেখানো পাহাড়ের মত উঁচু করে প্লেটে খাবার তোলার বদভ্যাস আছে। কাজেই প্লেট বা বাটির সাইজই যখন ছোট্ট, তখন ইচ্ছে করলেও এই অকাজ টা আর করতে পারবেন না।
(২) রাত ৮ টার পর কোন ভারী খাবার নয়। রাতের ডিনার অবশ্যই রাত ৮ টার আগে সেরে ফেলবেন। এরপর যদি খুব বেশি ক্ষিধে ভাব হয় তাহলে সর্বোচ্চ এক গ্লাস দুধ অথবা ৬-৭ টা কাঠবাদাম/কাজুবাদাম খেতে পারেন।
(৩) প্রতি বেলায় খাবার আগে ২ গ্লাস পানি মাস্ট। পানি আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এটা তো আমরা সবাই-ই কমবেশি জানি। প্রতিবেলায় খাবার আগে ২ গ্লাস পানি খেলে আপনার পেট বেশ অনেকটাই ভরে যাবে, ভয়াবহ আকারে ক্ষুধা লাগাটা নিবৃত হবে। ফলে আপনার হুড়মুড়িয়ে অনেক কিছু খেয়ে ফেলার ইচ্ছে থাকলে ও আপনি খেতে পারবেন না। আর বোনাস হিসেবে এই পানি খাওয়ার কারণে ইউরিন ইনফেকশন দূর হওয়া থেকে নিয়ে শুরু করে শরীরের সব ফাংশনই ভালো থাকছে। পানি তো স্কিনকে ও পরিষ্কার রাখে। কাজেই খাওয়ার আগে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিন।
(৪) প্রসেসড খাবারকে Ta Ta Bye Bye । যেকোন প্রসেসড খাবার কে কষ্ট হলেও বিদায় জানান। রেডিমেড ফ্রোজেন চিকেন পপকর্ণ, সিংগারা, সমুচা, কেচাপ, এমনকি ইনস্ট্যান্ট নুডলস কেও বাই বাই জানিয়ে দেয়াটাই ভালো। আপনি বাসায় যদি বিকল্পভাবে নিজের মতো করে ঐ ফ্রোজেন প্রসেসড খাবারটাকে অনেক কম খরচে এবং হেলদি প্রসিডিউরে তৈরি করতে পারেন তাহলে অযথা কেন ওসব কিনে খেতে যাবেন?
(৫) রান্নাঘরের তেলটা বদলান।এটা কিন্তু বেশ ভালো একটা পদ্ধতি। ধরুন আপনি যদি রান্নায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করেন,তাহলে সামনের মাসে মাসের বাজার করতে গেলে ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের জায়গায় ৫ লিটার অলিভ অয়েল/ সানফ্লাওয়ার অয়েল/ রাইস ব্র্যান অয়েল কিনে ফেলেন। ওসব তেল কিনতে খরচ আপনার অবশ্যই বেশি হবে। কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে ঐসব তেল সয়াবিনের চেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং যেহেতু আপনি বেশি টাকা দিয়ে কিনছেন তো আপনি অবশ্যই সেই টাকার দুঃখে হলেও রান্নায় আগে যে পরিমাণ তেল ব্যবহার করতেন তারচেয়ে অনেক কম পরিমাণে ব্যবহার করবেন। সুতরাং its a definitely win-win situation.
(৫) বিদায়ঘণ্টা বাজান – চিনির জন্য!
“আমি তো ২ চামচ চিনি ছাড়া চা-ই খেতে পারি না!””অ্যাই এত তেতো কফি আবার চিনি ছাড়া কিভাবে খায়?”উপরের এই ডায়ালগ বলা ব্যক্তিটি যদি আপনি হন, তাহলে দুঃসংবাদ! চিনি না ছাড়লে এ জীবনে ওজন কমাটা কিন্তু দিবাস্বপ্ন হয়ে রয়ে যাবে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে লিভারের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বির একটি স্তর তৈরী হয়। এর ফলে লিভারের আকৃতির পরিবর্তনসহ লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে আপনার ত্বকে খুব দ্রুত বলিরেখা পড়তে শুরু করে। আর তাই বয়স বেশি হবার আগেই বুড়িয়ে যেতে না চাইলে অবশ্যি চিনি খাওয়া ছাড়তেই হবে। সুইট ডিশের ক্রেইভিং হলে কিশমিশ খান, মধু খান, কিন্তু সাদা চিনি কে না বলুন।
(৬) নড়ুন! খুবই সহজ একটা কথা। নড়তে হবে। হাঁটাচলা করতে হবে। নিজের কাজগুলো নিজে করতে হবে। আপনি যদি বেলা এগারোটা / বারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে তারপর আস্তে ধীরে উঠে আলুর পরোটা খান; অথবা সকালে উঠে লিফট দিয়ে বাসা থেকে নেমে গাড়িতে চড়ে লিফটে উঠে অফিসে গিয়ে সারাদিন না নড়েচড়ে ডেস্কেই বসে থাকেন, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে আপনার শখের জামাগুলোকে দর্জির কাছে সেলাই ছোটানোর জন্য নিয়ে ছুটতে হবে।
(৭) লিফট নয়, সিঁড়ি দিয়ে উঠুন।সিঁড়ি দিয়ে ওঠা খুব ভালো একটি এক্সারসাইজ যার জন্য কোন ইকুইপমেন্ট এর প্রয়োজন হয় না। কাজেই যেখানে লিফট আছে, সেখানে ও চেষ্টা করুন সিঁড়ি ব্যবহার করতে।
(৮) সফট ড্রিংকস খাওয়া ছেড়ে দিন। আমাদের মধ্যে অনেকেই রিচফুড বা ফাস্ট ফুড এমনকি ঘরে তৈরি খাবার খেয়ে ও অনেক সময় বলি- অস্থির লাগছে, বদহজম লাগছে, একটু কোল্ড ড্রিংকস খেলে ভালো লাগবে। কিন্তু এই কোল্ড ড্রিংকস যে শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী তা আমরা অনেকে জানলে ও মানি কি? কাজেই সফট ড্রিংকস খাওয়া ছেড়ে দিন। বাইরে যদি কোথাও খেতে যান তাহলে ওয়েটার যখন জিজ্ঞেস করবে- ড্রিংকস কি থাকবে সাথে? একটু কষ্ট হলে ও বলে ফেলুন – plain water.
(৯) বেকিং গ্রীলিং এর অভ্যাস গড়ে তুলুন।বেকিং হলো রান্না করার খুবই স্বাস্থ্যকর একটি পদ্ধতি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে বেক এবং গ্রীল করে রান্না করার চেষ্টা করুন।
(১০) একটি ব্লেন্ডার কিনে ফেলুন।শুনতে আজব শোনালে ও ব্লেন্ডার কিন্তু বড় দরকারি একটা জিনিস। আপনি ২ চা চামচ টক দই, ১টা ছোট্ট কলা/আপেল ৪০০ এম.এল. পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে খান, পরবর্তী ঘণ্টা দুই-তিনেক আপনার পেট ভরা থাকবে, বাড়তি হাবিজাবি খাওয়ার জন্য মন খচখচ করবে না। আপনি যেকোন একটি ফল বা কয়েক রকম ফল মিক্স করে জুস বানিয়ে খেতে পারেন, চিনি দিবেন না কিন্তু।
আর মনে রাখবেন, ওজন কিন্তু একদিনে কমে না, ছোট ছোট দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমেই ওজন কমানো এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কাজেই ক্র্যাশ ডায়েট এবং যাদুকরী রেডিমেড ওয়েইট লস ড্রিংক্স এর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবি – স্টাইলক্রেজ ডট কম
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি