বিকালের নাস্তায় ভাবছেন আজ একটু মজা করে কিছু রান্না করবেন! রান্নার সময় স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে কয়েক চামচ টেস্টিং সল্ট দিয়ে নিলেন। রান্না শেষে পরিবারের সবাই মিলে খেলেন বেশ মজা করে কিন্তু আপনি হয়তো জানেনই না, প্রিয় মানুষগুলোর স্বাস্থ্যের কতখানি ক্ষতি করে বসলেন!
মদ, নিকোটিন এবং কিছু ড্রাগের থেকেও এই স্বাদ বর্ধক টেস্টিং সল্ট বেশি ক্ষতিকর এবং নীরব ঘাতক। আর এই উপকরণটিকেই আপনি বিপদের সময়ে খাবারের স্বাদ বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকরী বন্ধু ভেবে বসে আছেন।
ভাবছেন, এখন থেকে রান্না করার সময় আর টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করলেই তো হলো! এখানে না হয় আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। কিন্তু বাজার থেকে আনা প্রসেসড ফুডে তো আর আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই! কৌটাজাত যেকোনো খাবার সেটা স্যুপ থেকে শুরু করে মাছ এবং মাংসেও আজকাল টেস্টিং সল্ট (মনোসোডিয়াম গ্লুমেট) ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাহলে করণীয় কী?
আজ এই টেস্টিং সল্ট/মনোসোডিয়াম গ্লুমেট কি, কেন ক্ষতিকর ইত্যাদি সম্পর্কে জানবেন।
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক, টেস্টিং সল্ট (মনোসোডিয়াম গ্লুমেট) আসলে কী? ১৯০৮ সালের দিকে Kikunae Ikeda নামের একজন জাপানিজ সি উইডে থাকা এমন একটি উপাদান আবিস্কার করেন যা কিনা খাবার থেকে তার স্বাদ বের করে আনতে এবং মুখরোচক করে তুলতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি হলো মনোসোডিয়াম গ্লুমেট; আমরা যাকে টেস্টিং সল্ট হিসেবে জানি। সাইন্টিফিক্যালি টেস্টিং সল্ট বলে আসলে কিছু নেই! মনোসোডিয়াম যেসব উপাদানে গঠিত সেগুলো হল- সোডিয়াম, গ্লুমেট এবং আমিনো এসিড।
একে অনেকে ইফ্লেভার বা মিট টেন্ডারাইজার বলে ভুল করেন। কারণ এই মনোসোডিয়াম গ্লুমেট/ টেস্টিং সল্টের নিজস্ব স্বাদ নেই বললেই চলে। খাবারে স্বাদ বাড়িয়ে তোলার মতো কোন কিছুই আসলে ঘটে না এটা মূলত একটি ট্রিক; যে স্বাদটা আপনার মধ্যে তৃপ্তির অনুভূতি যোগায় সেটা আসলে গ্লুমেটের ফ্লেভার।
এবার আসা যাক, এর ক্ষতিকর দিকগুলোতে। ডঃ রাসেল ব্লেলক নিউরোসার্জন তার “Excitotoxins: The Taste that Kills.” বইয়ে মনোসোডিয়াম গ্লুমেটকে ‘এক্সাইটোটক্সিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা মূলত সোজা ব্রেইনে অ্যাটাক করে। এই এম এস জি ‘এক্সাইটোটক্সিন’ মস্তিষ্কের সেলগুলোকে ওভার এক্সাইট করে তোলে যার ফলে ব্রেইন ড্যামেজের সম্ভবনা থাকে। এতে করে লার্নিং ডিজ্যাবলিটি, স্মৃতিভ্রষ্টতা, পারকিনসন্স ডিজিস (পেশী সমূহে কাঠিন্য দৈহিক কম্পন প্রভৃতি লক্ষণযুক্ত নার্ভ তন্ত্রের ক্রম বর্ধমান ব্যাধি বিশেষ) ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
যদিও এফডিএ (ফুড ড্রাগ অ্যাডমিন্সট্রেটর) এই ক্ষতিকর দিকগুলো মানতে নারাজ। তবে এক্সপার্টদের মত অনুযায়ী হার্ট পেশেন্ট এবং হার্ট মাসলসের জন্যেও এই গ্লুমেট বেশ ক্ষতিকর। এটা বেশী খাওয়ার ফলে হার্টের পেশেন্টের তাৎক্ষনিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এছাড়াও ওবিসিটি, হতাশা, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি এবং ডিজ অরিয়েন্টেশনাল ডিপ্রেশন,বুকে ব্যথা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা, হঠাৎ করেই হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চাইনিজ কুজিনে এই এমএসজি এর ব্যবহার অধিক। জানলে অবাক লাগবে, অতিরিক্ত চাইনিজ ফুড গ্রহণের ফলে একটা সময় বেশ কিছু সংখ্যক লোক, যারা চাইনিজ ফুড নিয়মিত খেতেন তাদের মধ্যে এই শারীরিক সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে যার ফলে এই শারীরিক সমস্যাগুলোকে ‘চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে আরেকটু শুধরে এর নামকরণ করা হয় ‘এমএসজি সিনড্রোম কমপ্লেক্স’।
টেস্টিং সল্ট খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন যেভাবে-
এক কথায় বলতে গেলে খাবার তালিকা থেকে প্রসেসড ফুড বাদ দিন। কেননা প্রসেসড ফুডের স্বাদ বজায় রাখতে এমএসজি ব্যবহার করা হবেই। কাজেই ফ্রেশ ফুড হ্যাবিট ফলো করতে হবে।
রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার দেয়ার আগে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে নিতে হবে খাবারগুলো এম এস জি ফ্রি কিনা। কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায়, রেস্টুরেন্ট গুলো ব্যবসার কথা মাথায় রেখে আপনার কাছে এম এস জি বিদ্যমান কিনা এই ব্যাপারটি চেপে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনার একমাত্র ভরসা আপনার কিচেন। সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকতে চাইলে আপনার কিচেন থেকে টেস্টিং সল্ট ফেলে দিন।
ডাঃ শেখ আনিসুর রহমান
Physician & Cardiologist
MD (Hons)
Clinical Ordinatura (Medicine), Ph, D (Cardiology)
খুলনা মেডিকেল কলেজ