রমণীর কেবল বাহানা চাই, তারা সদা উৎসুক থাকে উৎসবগুলোকে সাজপোশাকে তুলে আনতে। কয়দিন আগে বসন্তবরণের পালা গেলো, আর সামনে আসছে বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ এসে গেছে প্রায়। এই উৎসব বাঙ্গালির বিরাট এক উপলক্ষ আনন্দ করার, বাংলা বছরকে বরণ করে নেয়ার। আর রমণীদের বিরাট এক বাহানা সাজসজ্জায় বিশেষ রূপ ফুটিয়ে তোলার। এরই মধ্যে তাই বঙ্গললনার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
শাড়িখানা কেমন ঢঙের হবে, রঙের ক্ষেত্রে চেনা ধারায় বদল ঘটবে কিনা, গহনায় সেকেলে ভাব থাকবে নাকি আধুনিকতার ছোঁয়া, ভাবনার কমতি নেই। চড়া সাজে জমকালো দিন কাটবে নাকি স্নিগ্ধতার পরশে শান্তিতে, সেটাও এক ভাবনা বটে।
কারো হয়তো সব প্রস্তুতি সারা, আর কারো এখনো শাড়িখানাও ঠিক করা হয়নি। কিন্তু উৎসবের আমেজ রয়েছে কমবেশি সকলের মনেই। আর মাত্র কয়টা দিন, তারপরেই গান বাজবে, রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে!
বৈশাখী উৎসব মানেই কেবল লাল-সাদার ছড়াছড়ি নয়, পাড়ে লাল আর জমিনে সাদা রঙের শাড়ি নয়। মেয়েরা এখন দিব্যি ইচ্ছে মতন সব রঙ বেছে নিচ্ছে পহেলা বৈশাখের উৎসবেও। লাল-সাদা শাড়ির চল আছে ঠিকই তবে সেটাই ট্রেন্ড নয়। এই বিশেষ দিনটায় লাল কিংবা সাদা রঙের ধারেকাছে না থাকাটা যে ধারার বাইরের কিছু, আজকাল তাও কেউ ভাবছে না। কাজেই পোশাকের রঙ বেছে নিন মনের শান্তি আর চোখের আরাম বুঝে, সেটাই বরং এখনের ট্রেন্ড।
উৎসবমুখর আমেজ ফুটিয়ে তোলে, এমন সব রঙেই শাড়ি বেছে নেয়া যায়। চলতে পারে চিরায়ত ঐতিয়্যের উল্টোধারাও, লালরঙা জমিনের পাড়ে সাদা নকশা থাকুক আপনার শাড়িতে। টকটকে লাল শাড়ির সাদা পাড়ে সোনালি জরিসুতার কাজ দারুণ মানাবে আপনার বৈশাখী সাজে। ঘন সাদা রঙের জামদানির আভিজাত্যেও সাজাতে পারেন নিজেকে সেদিন। সাথে বৈপরীত্যের লাল ব্লাউজ বেশ লাগবে। শাড়ি যখন জামদানি, ব্লাউজের কাপড়টাও হতে হবে তার সাথে মানানসই। বেছে নিতে পারেন সুতি কাতান কাপড়ের ব্লাউজ, একরঙা ব্লাউজের হাতায় লেইসফিতার খুব সাধারণ কাজ। সেই সাথে বেণীতে ফুল জড়ানো মুগ্ধতায় আপনার সম্পূর্ণ সাজখানা অসাধারণ হয়ে যাবে। পুরো সাজপোশাকে রঙের ঝকমারি নেই, তবু স্নিগ্ধতায় ভরা সাজখানা ভারি জমকালো দেখাবে।
কোটা কাপড়ের শাড়িগুলি উত্তপ্ত বৈশাখী দিনের জন্য আদর্শ। একরঙা কোটা শাড়িতে কয়েক পরত পাড় বসিয়ে নিয়ে আরামদায়ক শাড়ি বানিয়ে নিতে পারেন আপনার বর্ষবরণ উৎসবের জন্য। গরমে স্বস্তিও হলো, সাথে নিজের বানানো শাড়িও হলো। পাড়ে যে লেইসের ব্যবহার চলতে পারে, তার সাথে রঙ মিলিয়ে তৈরি করুন ব্লাউজখানা। পাড় খুব চওড়া হলে শাড়িটাই একটু জমকালো দেখাবে, তখন একরঙা ব্লাউজও ভালো লাগবে এই শাড়িতে। আর পাড় চিকন রাখলে ব্লাউজ বানান নকশাদার কাপড়ে। ফুলেল নকশা, গামছা কাপড়, বা সুতার কাজের নকশাদার ব্লাউজ এসব তখন ভালো মানাবে আপনার শাড়ির সাথে।
এই বিশেষ উৎসবের বিভিন্ন উপকরণও শাড়ির গায়ে নিয়ে আসা যায়। হ্যান্ডপেইন্ট করা শাড়ির চাহিদা অনেক থাকে এমন উপলক্ষগুলোতে। ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়ে নেয়া যায় এসব শাড়ি। ডালা-কুলো, ডুগডুগি, বাঁশী এসমস্ত সামগ্রী ছাপচিত্রে উঠে আসতে পারে আপনার শাড়ির আঁচলে বা কুঁচিতে, বাকি শাড়িখানা নাহয় খালিই রইলো। কিংবা পুরো শাড়ি ফাঁকা রেখে কেবল কাঁধের কাছটায় খানিক জ্যামিতিক নকশা, বা বৈশাখী উপকরণেরই ছবি এঁকে নিলেন। একই রকম নকশা করা ব্লাউজটা হতে পারে ভিন্ন কোন রঙের। বৈশাখী সাজে এমন একখানা শাড়ি চমৎকার লাগবে।
যেমন শাড়িই বেছে নিন না কেনো, আনন্দের সাথে আরাম আর স্বস্তির খেয়ালটাও রাখুন। উৎসব পালন যেনো বিরক্তি নিয়ে না আসে বৎসরের পয়লা দিনটায়। আনন্দে আর শান্তিতে কাটুক এমন উৎসবের দিনখানা।
মডেল - সানজিদা তন্বী
ছবি – শাওন কাইয়ুম
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব