আমাদের রূপচর্চা আর দৈনন্দিন অনেক কাজেই সামান্য ভুলের কারণে শরীরের অনেক ক্ষতি হতে পারে। একটু সাবধান হলেই এসব সমস্যা দূর করা যায়। চলুন একটু জেনে নেই যেসব ছোট ছোট ভুলের কারণে ক্ষতিগুলো হয়ে থাকে—
মেকাপের যেসব ভুলে অসুস্থ হচ্ছেন আপনি
- আইলাইনার চোখের ওয়াটার লাইনে ব্যবহার করা
অনেকেই চোখ সুন্দর করে আইলাইনার দিয়ে এঁকে থাকেন। এবং বেশীর ভাগ সময়েই কাজল বা লাইনার চোখের ওয়াটার লাইনে ব্যবহার করেন।এতে লাইনারে ব্যবহৃত কেমিক্যাল চোখের সংস্পর্শে চলে আসে তা তাৎক্ষণিকভাবে শুধুমাত্র চোখ জ্বালাপোড়া করলেও নিয়মিত ব্যবহারে চোখের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। - চোখে ফলস আইল্যাশ ব্যবহার
চোখের পাতা বড় দেখানোর জন্য চোখে আইল্যাশ ব্যবহার করেন অনেকেই।কিন্তু এই ফলস আইল্যাশ লাগানো হয় গ্লু দিয়ে যা চোখের জন্য এবং ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর। গ্লুতে থাকা ফরমাল ডিহাইড চোখের সংস্পর্শে এলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং সাবধান। - নোংরা মেকাপ ব্রাশ ব্যবহার
সপ্তাহে অন্তত ১ দিন মেকাপ ব্রাশগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নেয়া উচিত যা অনেকেই করেন না।আর একারণেই নোংরা মেকাপ ব্রাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ত্বকের ক্ষতি হয়। ত্বকের ইনফেকশন, ব্রণের উপদ্রব হওয়ার মূল কারণ নোংরা মেকাপ ব্রাশ ব্যবহার করা। - মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও মেকাপ ব্যবহার
নারীরা একবার মেকাপের জিনিসপত্র কিনলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহারই করতে থাকেন।অনেক কম নারীই রয়েছেন যারা এক্সপায়ার ডেটের খবর রাখেন। কিন্তু এই কাজটিও বেশ ক্ষতিকর। মেয়াদ শেষ হওয়া মেকাপ ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।ত্বকের নানা সমস্যা এমনকি ত্বকের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী মেয়াদউত্তীর্ণ মেকাপ ব্যবহার। - ঘন ঘন নেইলপলিশ ব্যবহার
সবসময় নেইলপলিশ ব্যবহার করলে নখ পাতলা হয়ে যায়। আর নখের উজ্জ্বলতা কমে যায়। তাই নেইলপলিশ কম ব্যবহার করা উচিত।
দৈনিক রূপচর্চায় যে সব ভুলে অসুস্থ হতে পারেন
- মুখ ধোয়ার জন্য কেউই হাত পরিষ্কার করে নেন না।অনেকেই ভাবেন মুখ ধোয়ার সাথে হাতও পরিষ্কার হয়ে যায়।কিন্তু আপনার হাতে যে জীবাণু রয়েছে তা প্রথমেই ত্বকে চলে যায় এবং সমস্যার সৃষ্টি করে।তাই আগে হাত ধুয়ে নিন।
- অনেকেই শুকনো ত্বকে ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক ধুয়ে থাকেন এতে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়।প্রথমে ত্বক পানি দিয়ে ভিজিয়ে তারপর ত্বকে ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
- অনেক সময় নানা ফেসমাস্ক বা উপটান ব্যবহারের পর তা ঠাণ্ডা বা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া থাকে।তখন আমরা সঠিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে অনেক বড় ভুল করে থাকি।খুব ঠাণ্ডা বা বেশ গরম পানি দিয়ে ত্বক ধোয়া উচিত নয়।
- স্ক্রাবিং ত্বকের জন্য অনেক বেশি জরুরি। এতে করে ত্বকের মরা চামড়া দূর হয় এবং গভীরে জমে থাকা ময়লা দূর হয়।অনেকে বেশি সময় ধরে ত্বক স্ক্রাব করেন যা অনেক ক্ষতিকর। স্ক্রাবার দিয়ে মুখের ত্বক ১/২ মিনিটের বেশি স্ক্রাব করা একেবারেই উচিৎ নয়।কারণ এর বেশি সময় ধরে স্ক্রাব করলে ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি হয়।
- যেকোনো একটি তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছা মোটেও ত্বকের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। মুখ মোছার তোয়ালে অবশ্যই আলাদা করে রাখবেন।তা না হলে ত্বকে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।
- ত্বক কখনোই তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে ঘষে মুছবেন না। এতে ত্বকের টিস্যুর মারাত্মক ক্ষতি হয়।তোয়ালে বা কাপড় চেপে ধরে শুধুমাত্র ত্বক থেকে পানি শুষে নিন।
দৈনন্দিন যেসব ভুল কাজে আপনি অসুস্থ হতে পারেন
- সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
অনেকেই দাঁড়ানোর সময় হাঁটু একেবারে সোজা করে দাঁড়ান। কিন্তু এই কাজের কারণে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে আপনার হাঁটুর জয়েন্টে, যার কারণে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে পারে আপনার হাঁটুর জয়েন্ট। তাই দাঁড়ানোর সময় হাঁটু সামান্য বাঁকা করে দাঁড়ান, সব সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই।
- পেটে উপর চাপ দিয়ে উপুড় হয়ে ঘুমানো
অনেকেই চিৎ হয়ে বা কাত হয়ে ঘুমান না। আরমের জন্য উপুড় হয়ে পেটে ভর দিয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন।কিন্তু জেনে রাখুন এতে আপনার পরিপাকতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।এছাড়াও যখন আপনি উপুড় হয়ে ঘুমান তখন মাথা কাত করে রাখতে হয় যার কারণে আপনার মেরুদন্ডের উপর চাপ পড়ছে এবং ক্ষতি হচ্ছে সেখানেই। সুতরাং এই ব্যাপারে সর্তক হোন।
- সারাক্ষণ চুইংগাম চিবোনো
অনেকেই সারাক্ষণ চুইংগাম চিবোতে থাকেন। সারাক্ষণ না হলেও দীর্ঘসময় এই কাজটি করার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কিন্তু এই কাজটির কারণে ক্ষতি হচ্ছে আপনার চোয়ালের মাংসপেশি। সুতরাং অভ্যাসটি ত্যাগ করুন।
- টাইট জামা-কাপড় পরা
অনেকে বেশি টাইট করে জামা কাপড় পরেন। নিজেকে একটু স্লিম দেখাবার জন্য অনেক টাইট করে জামা কাপড় বা বেল্ট পড়েন। কিন্তু অনেকটা সময় ধরে টাইট করে জামাকা পড় পড়ার কারণে আপনার শরীরের পেশীগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।যার কারণে শরীর ব্যাথা হতে পারে,পেটে চাপ পড়লেখাবারসঠিকভাবেহজমহতেপারেনাএবংঅ্যাসিডিটিরসৃষ্টিকরে।
- একটানা বসে থাকা
কাজ করার জন্য অনেকেই একটানা বসে থাকেন যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি নানা শারীরিক সমস্যার জন্য দায়ী।প্রতি ৪৫ মিনিট পরপর উঠে হেঁটে আসা উচিত।
লিখেছেন- সোহানা মোরশেদ
ছবি- বিউটিএন্ডক্রিটিফাই.ব্লগস্পট.কম