নারী সৌন্দর্যের অন্যতম হল ঘন স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল। কিন্তু আবহাওয়ার রেডিকাল চেঞ্জ ও শারীরিক সমস্যাসহ নানাবিধ কারণেই দিন দিন চুল পাতলা এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে সঠিক যত্নের মাধ্যমেও কিন্তু চুলের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা সম্ভব। এসবের জন্য অবশ্যই চাই এক্সপার্টের পরামর্শ! হ্যা, আজ চুলের যত্নে সচারাচর আপনার মনে যেসব প্রশ্ন জাগে এবং যার উত্তর হয়ত খুঁজে পাননি এখন সেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিখ্যাত ডার্মাটোলজিষ্ট এবং কসমেটোলজিষ্ট ডাঃ অপর্ণা সান্থানাম হাজির হয়েছেন।
তিনি একাধারে ভারত, মধ্য প্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিভিন্ন এফএমসিজি ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ও ভারতীয় সৌন্দর্য্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কৌশলগত পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার লেখা দুটি শ্রেষ্ঠ বিক্রিত বই হলো ”স্কিন ডিপ” ও ”লেটস টক হেয়ার”।
১। স্বাস্থ্যজ্জ্বোল চুলের গোপন রহস্য কী?
স্বাস্থ্যজ্জ্বোল চুল এর জন্য অন্যতম গোপন রহস্য হচ্ছে পরিমিত সুষম খাদ্যভ্যাস অর্থাৎ চা-কফি কম পান করা এবং তাজা ফলের রস পান করা ও কাঁচা সবজির নির্যাস এবং দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করা। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে পানি পান করা উচিত যা আপনার ত্বক ও স্ক্যাল্পকে হাইড্রেটেড রাখে।
২। চুলে কতক্ষন তেল দিয়ে রাখা উচিত?
চুলে কতক্ষণ তেল দিয়ে রাখবেন, এই সময়টুকু নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত চুলের পুষ্টির চাহিদা এর উপর। যাদের চুল শুষ্ক বা বর্ষাকালে যাদের চুলে জট লেগে যায়, তাদের সারা রাত চুলে তেল দিয়ে রাখা উচিত, যদি সম্ভব হয় । বালিশে যাতে তেল না লাগে, এজন্য চুলে বাথ ক্যাপ ব্যবহার অথবা চুল তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। পরের দিন সকালে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। যাদের চুল তেলতেলে তাদের জন্য চুলে নারিকেল তেল দিয়ে ১ অথবা ২ ঘণ্টা রাখাই যথেষ্ট কারণ এই সময়ের ভেতরেই স্ক্যাল্প প্রয়োজনীয় পুষ্টি শুষে নেবে এবং চুল দেখাবে স্বাস্থ্যজ্জ্বোল ও মসৃণ। সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য চুলে সপ্তাহে অন্তঃত তিনবার নারিকেল তেল দেওয়া উচিত।
৩। চুলে তেল দেওয়ার পূর্বে গরম করার তাৎপর্য কী?
চুলে তেল দেওয়ার পূর্বে তেল গরম করে নিলে চুলের জন্য এটি চমৎকার সুফল বয়ে আনবে এবং বিভিন্ন সমস্যা যেমন খুশকি, স্ক্যাল্পের শুষ্কতা এবং ক্ষতিগ্রস্থ চুলের নিরাময় হিসেবে কাজ করবে। তেলকে কুসুম গরম করে নিলে স্ক্যাল্প তেল আরও ভালোভাবে শুষে নিবে যার দরুণ চুলে আরও ভালোভাবে পুষ্টি যোগাবে । আপনার চুল হয়ে উঠবে সম্পূর্ণরূপে স্বর্গীয় ও চমৎকার ।
৪। বর্ষাকাল চলে এসেছে। চুলের যত্নে এই বর্ষাকালে কী করা জরুরি?
আমরা যতই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির ফোটা, জমে থাকা পানিতে দাপাদাপি, কুঁড়মুড়ে পাকোড়া এবং মসলা চায়ে চুমুক দেয়া পছন্দ করি না কেন; চুলের জন্য বর্ষাকাল মোটেও সুখকর নয়। বৃষ্টি এলেই আপনার চুল কোঁকড়া এবং এলোমেলো হয়ে যায়। এ সময় নারিকেল তেলের ম্যাসাজ প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে এবং চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায় যা আপনার চুল রাখে পরিপাটি ও স্বাস্থ্যজ্জ্বোল। আপনার চুল যখনই বৃষ্টিতে ভিজে যাবে তখনই মাইল্ড শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন। বর্ষাকাল ছোট স্টাইলিশ চুল রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।
৫। কেউ কেউ পরামর্শ দেন বিভিন্ন রকম তেলের (জলপাই, বাদাম, নারিকেল) মিশ্রণ ব্যবহারের, আবার কেউ কেউ পরামর্শ দেন একটি তেল ব্যবহার করাই ভালো। আপনার পরামর্শ কী?
অনেক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমি জেনেছি যে, নারিকেল তেল-ই চুলের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। চুলে নারিকেল তেল দিলে স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার বৃদ্ধি প্রায় ১২% এরও বেশী যা স্ক্যাল্পের চামড়া উঠা এবং চুলকানো বন্ধ করে। নারিকেল তেলের ম্যাসাজ মাথার রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যজ্জ্বোল চুল ও চুলের পর্যাপ্ত ময়েশ্চারের মাত্রা। চুল ধোয়ার পূর্বে নারিকেল তেলের ম্যাসাজ চুলের প্রোটিন হ্রাসের পরিমান প্রায় ২৮% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। নারিকেল তেলের ম্যাসাজ চুলের সকল সমস্যা নিরাময় করার নিশ্চিত উপায় এবং দেয় অপূর্ব সুন্দর চুলের আলিঙ্গন।
ছবি – হেলথকেইউ.কম