কাঁঠাল বৃক্ষ- উৎপন্ন সর্ববৃহৎ ফল। এশিয়া মহাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল, সাধারণত এই গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়। তবে খুঁজলে এমনও অনেক ফ্রুটস লাভার পাওয়া যাবে যারা এই ফলটির ব্যাপারে সর্বদাই নাক সিটকায়। অথচ হলুদ, রসালো আর মিষ্টি স্বাদযুক্ত এই ফলে রয়েছে বহু স্বাস্থ্যগুণ। আজ আমরা পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কাঁঠালের কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে জানব।
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি এর উৎস স্বরূপ কাঁঠাল শ্বেত রক্ত কণিকার কার্যাবলীর সহায়ক হিসেবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভাইরাল আর ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনজনিত রোগসমূহ যেমন- সর্দি, কাশি, ফ্লু থেকে রক্ষা করে। শুধুমাত্র ১০০ গ্রাম কাঁঠাল আমাদের প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর চাহিদার ১৭ শতাংশ পূরণ করে।
২। ত্বক ভালো রাখে
নিয়মিত কাঁঠাল খেলে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এতে বিদ্যমান এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রী র্যাডিকেল ড্যামেজ প্রতিহত করে। ত্বকের বলিরেখা, শুষ্কতা ইত্যাদি কমায়। তাছাড়া কোলাজেন উৎপন্ন করতে সহায়তা করে ফলে ত্বক টানটান থাকে।
৩। রক্তশূন্যতা দূর করে
কাঁঠাল খেলে তা থেকে অনেক পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়, যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেহে আয়রনের অভাবে যে রক্তশূন্যতা হয়, তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৪। দেহের শক্তি বাড়ায়
কাঁঠাল শক্তি উৎপন্নকারী ফল হিসেবে পরিচিত। এতে ফ্রুক্টোজ আর সুক্রোজ নামক শ্যুগার থাকে যা রক্তের শ্যুগার লেভেলকে প্রভাবিত না করে দেহে তৎক্ষণাৎ শক্তি প্রদান করে। এতে কোনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট কিংবা কোলেস্টেরল নেই।
৫। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ দেয়
কাঁঠালের ডায়েটারি ফাইবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাছাড়া পাইলস আর কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৬। উচ্চ রক্তচাপ কমায়
এই ফল কার্ডিওভাস্কুলারের জন্যও অনেক উপকারী কেননা এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সক্ষম। এর ভিটামিন সি ফ্রী র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া এর পটাশিয়াম দেহের সোডিয়াম লেভেল নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর ভিটামিন বি৬ রক্তের হোমোসিসটিনের মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক আর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৭। দৃষ্টিক্ষমতা বাড়ায়
কাঁঠালে ভিটামিন এ রয়েছে, যা সুস্থ্য চোখের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। তাই এই ফল খেলে দৃষ্টিক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তাছাড়া রাতকানা, চোখে ছানি পরা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। চোখকে যেকোনো ব্যাকটেরিয়াল আর ভাইরাল ইনফেকশন থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
৮। হাড় মজবুত করে
এর ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের কার্যকারীতা বাড়িয়ে দেয়। এই ম্যাগনেসিয়াম আর ক্যালসিয়াম এক সাথে কাজ করে হাড় মজবুত করে এবং হাড় জনিত ডিসর্ডারসমূহ যেমন অসটেওপোরোসিস থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া পটাসিয়াম ক্যালসিয়ামের ক্ষয় রোধ করে হাড়ে এর ডেনসিটি বৃদ্ধি করে।
৯। থাইরয়েডের সুস্থ্যতায়
কাঁঠালের কপার থাইরয়েডের মেটাবোলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে হরমোন উৎপাদন আর শোষণে। এতে যে ভিটামিন বি রয়েছে তার সুবাদে হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এর জিংক, ম্যাগনেসিয়াম আর পটাসিয়াম ও থাইরয়েডের জন্য উপকারী।
১০। ক্যান্সার নিরোধক
ক্যান্সার নিরোধক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং এন্টিঅক্সিডেন্টস এই ফলে রয়েছে। তাই এটি ওরাল, কোলন আর স্কিন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে।
তাই খাদ্য তালিকায় কাঁঠাল রাখুন। এমনকি এই রমজানে তৈলাক্ত ভাজা পোড়া আর মশলাযুক্ত খাবারের পরিবর্তে কাঁঠাল খেতে পারেন। তবে মনে রাখা ভালো,বেশি পরিমাণে কাঁঠাল খেলে পেটের অসুবিধা হতে পারে। গর্ভবতী মায়েরা এবং যারা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান তারা ডাক্তারের পরামর্শনুযায়ী কাঁঠাল খাবেন।
ছবি – ড্রিমসটাইম.কম
লিখেছেন- নীল