এই রমজানে গরম আবহাওয়া, ঘুমানোর সময়ের পরিবর্তন ও খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে আপনার চুলের ক্ষতি হবেই। কারো চুল শুষ্ক এবং ভংগুর হয়ে যায়, অন্যদের চুল পড়া শুরু হয়। শুষ্ক আবহাওয়া, প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব এবং অতিরিক্ত হ্যাট, স্কার্ফ এর ব্যবহারের কারণে আপনার চুলের ও হয় তো ক্ষতি হওয়া শুরু হয়েছে। আপনার চুল কি সহজেই ভেঙে যাচ্ছে? আপনার চুলের আগা কি আগের চেয়ে বেশি ভাঙছে? চুল কি উজ্জ্বলতা হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে? এসব কারণে আমরা হয়ে যাই ঈদের জন্য অপ্রস্তুত। সুসংবাদ হলো, আপনিও এড়াতে পারেন এসব সমস্যা।যদি আপনি বেছে নেন,এই সহজ বাছাইকৃত এবং নিজেই করা যায় ড্যামেজ – কন্ট্রোল সমাধানগুলো যা আপনার চুলের ক্ষতি পূরণ করবে নিমেষেই।
নারিকেল তেল ও অ্যাভোকাডো হেয়ার মাস্ক
ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক এবং জৈব হেয়ার মাস্ক আপনার চুল এবং স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং কেবল সাশ্রয়ীই নয়, খুব সহজও বটে।আপনার প্রয়োজন শুধু মাত্র কিছু সহজলভ্য রান্নার উপাদান যেমন অ্যাভোকাডো, নারিকেল তেল এবং মধু।
যেভাবে এটা কাজ করে:
- অ্যাভোকাডোতে রয়েছে প্রোটিন, অ্যামিনো এসিড ও ভিটামিনের ভরপুর সংমিশ্রণ যা ক্ষতিগ্রস্ত চুলের গভীরে পৌছে পুষ্টি যোগায়।
- নারিকেল তেল চুলকে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। কারণ এটি স্ক্যাল্পের গভীরে পৌছে চুলকে রাখে ময়েশ্চারাইজড গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত।
- যত্ন সম্পন্ন করে মধু, যা নিষ্প্রাণ চুলকে করে স্বাস্থ্যজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত।
কে জানতো যে আপনার সালাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা উপাদান আপনার ক্ষতিগ্রস্ত চুল সারিয়ে তুলে পুনরায় করে স্বাস্থ্যোজ্জল? ক্ষতিগ্রস্থচুলকেবিদায়জানিয়েস্বাগতজানানচমৎকারচুলের, এইরেসিপিগুলোব্যবহারকরে।
উপাদান
- একটি পাকা অ্যাভোকাডো
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ২ টেবিল চামচ খাঁটি নারিকেল তেল
ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলের জন্য উপরোক্ত পরিমাণই যথেষ্ট। যদি আপনার চুল আরও লম্বা হয় তা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণ বাড়িয়ে নিন।
করণীয়:
১।অ্যাভোকাডোটি ভালো মত ছিলে ভালো করে পিষে পাল্প করে নিন।নারিকেল তেল এবং মধু মিশিয়ে আধা মিনিট গরম করে অ্যাভোকাডোর সাথে মিশিয়ে নিন।
টিপস: অ্যাভোকাডোর খোসা ছুরির মাধ্যমে আড়াআড়িভাবে কাটুন তারপর চামচ দিয়ে খোসা সহজেই ছাড়িয়ে নিন। আপনি চাইলে কাঁটা চামচ দিয়ে পিষে নিতে পারেন অথবা আরো মসৃণ করার জন্য ব্লেনডারও ব্যবহার করতে পারেন।
২। চুলকে হালকা ভিজিয়ে মিশ্রণটি চুলে ভালোভবেম্যাসাজ করুন। তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে মিশ্রণটি স্ক্যাল্পে কম মাখুন। যদি আপনার মনে হয় সব চুলই ক্ষতিগ্রস্থ তাহলে চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত মিশ্রণটি ভালোভাবে বেশী করে মাখুন এবং আধা ঘণ্টা রেখে দিন।
টিপস: মাস্কটি ব্যবহার করার সময় দাগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য পুরনো টিশার্ট পরে নিন। চুলে মাস্ক লাগানো শেষ হলে শাওয়ার ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন নিজের সুবিধার্থে।
৩। নিয়মিত পদ্ধতিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। আঙুল ব্যবহার করে চুল এবং স্ক্যাল্পের ভেতর থেকে সকল অ্যাভোকাডোর টুকরো পরিষ্কারকরে ফেলুন।
চুলের যত্ন নিন মাসে দু’বার এই মাস্ক ব্যবহার করে এবং উপভোগ করুন আপনার পছন্দের চমৎকার চুল। আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী মাসে একবার মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন যদি মনে করেন ওটুকুই যথেষ্ট। ব্যবহার যেমনই হোক, নিমেষেই আপনি পাবেন স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল এবং নিশ্চিন্তে বেছে নিন মন মাতানো নতুন হেয়ার স্টাইল।
তিন তেল এর প্রাকৃতিক হেয়ার মাস্ক
এই হেয়ার মাস্ক হচ্ছে মস্তকি, মেন্থল এবং নারিকেল তেলের যুগান্তকারী সংমিশ্রণ। এই তিনটি বোটানিক্যাল উপাদানের নির্যাস তৈরী করে অত্যন্ত কার্যকর প্রতিষেধক ও চুলের ক্ষতি নিরাময়কারী গুণাবলিতে ভরপুর হেয়ার মাস্ক যা আপনার চুল সারিয়ে তুলবে নিমেষেই।
যেভাবে এটি কাজ করে:
-মস্তকি শুষ্ক এবং ভঙ্গুর চুলের নিরাময় করতে পারদর্শী কেননা এর মধ্যে রয়েছে টারপেনয়েড যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটোরি বৈশিষ্ট শুষ্ক ও রুক্ষ কোষকে সুস্থ করে তোলে।
-মেন্থল তেল গরমে ক্ষতি গ্রস্থ চুলের ধকল নিরাময় করে এবং চুল করে ঠান্ডা। এর ফলে চুলের গোঁড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যা সুনিশ্চিত করে চুলের যথাযথ পুষ্টি। এছাড়াও এর সুগন্ধ অপূর্ব।
-নারিকেল তেল ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, আয়রন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান নিয়ে চুলে পুষ্টি যোগায় এবং শুষ্ক ও রুক্ষ চুল করে কোমল। একমাত্র নারিকেল তেলই চুলের গোঁড়ার ভেতরে পৌছে গভীর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে শুধু বাহিরে থেকে প্রলেপ নয়, ভেতর থেকে ও ময়েশ্চারাইজ করে।
উপাদান
- ১/২ চা চামচ মস্তকি তেল
- ১/২ চা চামচ মেন্থল তেল
- ১/২ কাপ খাঁটি নারিকেল তেল
টিপস: মস্তকি ও মেন্থল তেল যেকোন কসমেটিকস ও সুপার স্টোরে সহজলভ্য। আপনিএইগুলোবিভিন্নওয়েবসাইটথেকেওকিনতেপারেন।
করণীয়:
১।তিন প্রকার তেল ভালোভাবে মিশান।
২।মিশ্রনটি ভালো করে নেড়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।
টিপস:স্ক্যাল্পে আপনি একটু শিহরন অনুভব করতে পারেন।ভয়ের কিছু নেই এইভাবেই মেন্থল তেল আপনার স্ক্যাল্পে কাজ করে।
৩।অন্তত এক ঘন্টা চুলে দিয়ে রাখুন।
টিপস:যদি আপনার সময় কম থাকে তাহলে হট-টাওয়াল দিয়ে সম্পূর্ণ চুল ভালো মত পেচিয়ে হট-টাওয়াল ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এর মাধ্যমে তেল আপনার চুল এবং স্ক্যাল্পের আরো গভীরে দ্রুত প্রবেশ করবে।
৪।গরম পানি দিয়ে আপনার নিজের নিয়মিত পদ্ধতিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন এবং অনুভব করুন চুলের পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য নিমেষেই। তাই আপনি নিশ্চিন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে চুলের বিন্দুমাত্র ক্ষতি ছাড়াই চুলের সাজ বদলাতে পারেন ইচ্ছেমত একটি থেকে আরেকটায়।
মডেল – শেখ মারুফা নাবিলা
লিখেছেন – মরিয়ম আকতার