রাস্তাঘাটে আমরা অনেক ভাবেই পথশিশুদের দেখি ভিক্ষা করতে অথবা ফুল বিক্রি করতে আবার কখনো অসহায় এবং এতিমদের দেখা যায় যাদের থাকার জায়গাটুকুও নেই। আমরা অনেকেই এসব দেখে কিছুক্ষণ ভাবি এদের জন্য কিছু করা যায় কিনা, কিন্তু সেই ভাবনাটুকু স্থায়ী হয় কি!
আমাদের উচিত এই ভাবনাটা স্থায়ী করা। আমাদের মনে রাখা উচিৎ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর রয়েছে সমান অধিকার। খুব বেশি কিছু না হলেও অল্প কিছু তো করতেই পারি।
কিছুদিন আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পথশিশুদের পোশাক দান করে আসি বিভিন্ন এলাকায়। তাদের জন্য কিছু করতে পেরে তাদের থেকে বেশি ভালো লাগে আমাদেরই। চাইলে আপনিও পারেন অনেকভাবে তাদের সহায়তা করতে।
শিশুরা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের দান।প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোনো পিতৃহীন শিশুর মাথায় যদি কেউ হাত বুলায়, তবে তার হাত যত চুলের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে, প্রতি চুলের পরিবর্তে তাকে অনেক নেকি দান করা হবে।’
আমরা কি সামান্য কিছু করে অন্তত একটি শিশুকে খুশি করতে পারিনা? মনে রাখবেন আপনি শুরু করলে বাকিরাও এগিয়ে আসবে, একজনের জায়গায় তখন হয়তো আরো অনেক পথশিশুর পাশে আমরা দাঁড়াতে পারবো। এই কাজের জন্য আর্থিক সামর্থ যে খুব বেশি থাকতে হবে এমনটা না,ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ঠ।
- সঙ্গবদ্ধভাবে কাজ করলে সবই খুব তাড়াতাড়ি করা সম্ভব। তাই এই বিষয়ে প্রথমেই মানুষকে উৎসাহ দিতে হবে।
- আজকাল অনেক রকম সংগঠন পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
- ফেসবুক বর্তমানে এই কাজের জন্য খুব ভালো একটি মাধ্যম। অনেক পেইজ বা গ্রুপ আছে যেখানে পথশিশুদের নিয়ে অনেকেই কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, আপনি তাদের কীভাবে সাহায্য করতে চান সেটা সবাইকে জানান। যেমন- টাকা দেয়া ছাড়াও অনেকে খাবার কিনে দিয়ে, পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দিয়ে সাহায্য করে। আবার অনেকে পোশাক দান করে। আপনি যেভাবে সাহায্য করতে চান তাদের জানান।
- আপনি যদি নিজে থেকে কিছু করতে চান তাহলে সেটা অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার হয়ে যাবে। সেজন্য আপনাকে প্রথমেই বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে পথশিশুরা থাকে সেখানে গিয়ে গিয়ে কথা বলতে হবে।
- টাকা দিয়ে সাহায্য করলে তা অনেক সামান্যই হয়। কারণ আপনি যতটুকু টাকা দিবেন তার থেকে নিজের কিছু দিয়ে সাহায্য করলে সেটা তাদের জন্য অনেক বেশি উপকারের হবে। যেমন- আমাদের ঘরে অপ্রয়োজনীয় অনেক জামা কাপড় পড়ে থাকে। আমরা সেসব ব্যবহারও করি না অনেক দিন। সেসব একত্র করে দান করে দিন। এতে পথশিশুদের পাশাপাশি তাদের অসহায় পরিবারও সাহায্য পাবে। খুব ভালো হয় যদি নিজ হাতে এক এক করে দিতে পারেন। এতে আপনারও ভালো লাগবে। যেকোন মানুষকে খুশি করা, নিজেকে খুশি করার সমান!
- অনেক জায়গায় আজকালকার তরুণ সমাজ পথশিশুদের লেখাপড়া করায়। ফেসবুকে এরকম অনেক পেইজ থাকে। সেইসব অসহায় গরীব শিশুদের যেকোনোভাবেই আপনি চাইলে সাহায্য পাঠাতে পারেন। এজন্য আপনার এরকম পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করুন যারা এরকম কাজ সেচ্ছায় করে থাকে।
- পথশিশু আর এতিমদের নিয়ে বিভিন্ন ফাউন্ডেসন থাকে। যেখানে অনেকভাবে সাহায্য করা হয় এই শিশুদের। আপনার ক্ষমতা থাকলে তাদের পাশে দাঁড়ানো আপনার কর্তব্য।
- বিভিন্ন এতিমখানায় যোগাযোগ করুন। জামাকাপড় বা বই-খাতা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলে তাদের সাথে খোলাখুলি কথা বলুন।
- বন্ধুদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করতে পারেন এবং নিদিষ্ট দিনে সাহায্য করার জন্য সবাইকে একত্র করে নিন। যে যতটুকু পারে তাই নিয়ে সাহায্য করুন।
- যারা সপরিবারে পথেই বসবাস করে তাদের মতো যদি একটি পরিবারকেও সাহায্য করা যায়, ক্ষুধার্ত পরিবারকে একবেলা খাওয়ানো যায় সেটাই আমাদের জন্য অনেক বেশি।
- দুঃখের বিষয়,এসব পথশিশুর একটা বিরাট অংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অনেক ছেলেমেয়ে প্রকাশ্যে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করছে। এরকম কিছু দেখে সবাইকে জানান এবং সচেতন করুন, এলাকার আইন কর্মকর্তাদের জানান।
- পথশিশুদের শিক্ষাদান করে থাকেন অনেকেই। আপনি চাইলে অবসর সময়টাতে এই কাজ করতে পারেন। আপনারও ভালো লাগবে।
দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর। আর সে জায়গায় যদি শিশুরাই সঠিক শিক্ষা না পায় তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কথা ভাবা যায় কি! তাই এই পথশিশুদের ভবিষ্যৎ আমরা এভাবেই নষ্ট দিতে পারিনা, সকলে মিলে যতটা সম্ভব সাহায্য ও সহানুভূতি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান।
লিখেছেন – সোহানা মোরশেদ