নতুন বৌ! শব্দটাই ভীষণ ভারী। এইটা করা যাবে না, ওভাবে চলা যাবে না, এমনটা না করলে আর কেমন বৌ হলো এমন হাজারটা কথার পাহাড় মাথায় নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে অসংখ্য মেয়ে। বিয়ের সাথেসাথেই জীবনে ঘটে যায় জাদুমন্ত্রের মতো বদল। সেই বদল সামলে নিতে হিমশিম খেয়ে যায় কতো নতুন বৌ!
বলি, আর কতোকাল মানুষের জন্য সব করা? এমনকি নিজের বিয়েটাও! বিয়ে পরবর্তী সময়টা যদি নিজেই স্বস্তিতে না থাকা গেলো তবে বাকিটা জীবন একটা আফসোস থেকে যাবে না?
আফসোস থাকতে দেবেন না। নিজেকে নিজের মতন রাখুন। সবার আগে নিজের স্বস্তি, নিজের সাধ। আপনি হাসিখুশি থাকলে তবেই সবচেয়ে সুন্দর থাকবেন, নতুন বৌ ভাবটা ফুটে থাকবে চোখেমুখে।
জবরজং সাজ, রঙচঙা সব শাড়ি, গহনার বোঝা চাপানো পুতুল একটা, নতুন বৌ মানেই কিন্তু এই ছবিটা নয়। বৌ তো হয়েই গেছেন বিয়ের পরে, আপনার সাজ এবং শাড়ি-গহনায় আপনি নতুন বৌ কিনা তা যাচাই করা হবে না। সাজপোশাক হোক আপনার পছন্দ মতন। কোন কোন পরিবারে লাল টুকটুকে রঙের আধিক্য ছাড়া নতুন বৌকে ভাবাই যায় না। শাড়ি হতে হবে লাল, লিপস্টিকে লাল রঙ থাকবে, হাত ভরে মেহেদী আর নখেও লাল নেইলপলিশ, এসব নিয়েই একজন বৌয়ের সাজ পরিপূর্ণ বলে মনে করা হয় কোথাও কোথাও। এইসব কোন নিয়ম নয়। মানুষ মানলে তবেই তো নিয়ম। ভালো না লাগলে নতুন পরিবারের মানুষদের বুঝিয়ে বলুন আপনার ভালোলাগা কোনটা। আপনি কেমন সাজপোশাকে স্বস্তি পাবেন তা জানতে দিন তাদের।
শাড়িতে না হয় লালের সাথে অন্য রঙের সমন্বয় বেছে নিন। চাপা সাদা জমিনে লাল কাজ, কিংবা হোক লালের মাঝে সাদা নকশা। বাদামি, বাসন্তী, সবুজ রঙগুলির সাথে লাল রঙের মিশেলে শাড়ি পরুন। লাল পরাও হচ্ছে আবার বাড়াবাড়িও দেখাবে না।
নতুন বৌ মানেই শাড়ি, অন্য পোশাক পরা বারণ, সেই যুগও পার হয়েছে। ঘরে ঘরে নতুন বৌয়েরা শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ বেছে নিচ্ছে নিত্যদিনের পোশাক হিসেবে। তবে কিনা, সামান্য একটা তাঁতের শাড়িতেই যে জৌলুস থাকে, তা খুব সাধারণ সালোয়ার-কামিজে পাওয়া যাবে না। কাজেই কামিজ বানালে একটু কায়দা করে বানানো উচিত। আনারকলি ধাঁচের লম্বা কামিজ হতে পারে সদ্য বিবাহিতার রোজ পরিধেয় পোশাক। বিয়ের পর বন্ধু বা কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের দাওয়াত রক্ষায় বা নিজের বাসায় তাদের দাওয়াতের অনুষ্ঠানের জন্যেও জমকালো সালোয়ার-কামিজ বেছে নেয়া যায় নির্দ্বিধায়। কামিজে রাখুন উজ্জ্বল রঙের নকশাদার ইয়ক, চুমকি বা কুন্দনের কাজ থাকতে পারে সাথে। সুতার ভরাট কাজও মানানসই হবে কামিজে, সাথে জামদানি ওড়না পরতে পারেন তখন। একরঙা ওড়নায় লেইসের বাহার থাকুক যেমন খুশি। ওড়নার পাড়ে থাকতে পারে কিছু ঝুমঝুমিও। নতুন বৌয়ের ওড়নায় টুংটুং শব্দ বেশ মানাবে। কারুকাজ করা হরেক রকম লেইস কামিজের নিচে পরপর বসিয়ে নিন, সাধারণ কাপড়ের কামিজও নজরকাড়া হয়ে যাবে। স্বস্তিতে ব্যবহার করতে পারবেন ঘরের জন্য।
মোটা বালা, গলায় দৃশ্যমান একটা হার, ঝুমকো দুলে বৌ সেজে থাকতে চাইলে তাই থাকুন। কিন্তু তাতে স্বস্তি না পেলে হালকা গয়নাই পরুন সবসময়। বিয়েতে স্বর্ণালংকার যার যার সাধ্য মতন থাকে, কিন্তু বিয়ের পর সবসময় ব্যবহারের জন্য মেয়েরা আজকাল স্বর্ণের পানি চড়ানো অলঙ্কার বেছে নিচ্ছে ব্যাপকহারে। তেমন গোল্ড প্লেটেড কিছু সেট কিনে বা বানিয়ে নিতে পারেন। এসব গহনায় ইচ্ছে মতন পাথর, পুঁতি, মুক্তো বা কুন্দন বেছে নিন। স্বর্ণের গহনাও সব ভারী না বানিয়ে দুটো একটা হালকা ধাঁচের রাখুন। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পরার জন্য মানানসই হবে। গোল্ড প্লেটেড ভারী একজোড়া নূপুর পরতে পারেন সবসময়। বেশ ভালো লাগবে নৌতুন বৌ হিসেবে। রূপোর গহনাও ব্যবহার করতে পারেন যেকোন দাওয়াত বা ঘুরতে যাওয়ার দিনে। খোঁপাতে রূপোর কাঁটা, কানে লম্বাটে দুল, রূপোর নূপুরে চমৎকার সাজ হতে পারে শাড়ির সাথে। বিয়ের পরে বেশ কিছুদিন নথ পরা যায়, রকমারি নথের সংগ্রহ আপনাকে বেশ একটা নতুন বৌয়ের আমেজ এনে দেবে।
ঘরে সবসময়ই চড়া সাজে থাকাটা অনর্থক। কাজল, লিপস্টিক আর খুব দরকার হলে হালকা পাউডারেই সাজ শেষ করুন। পড়শি বা আত্মীয়রা বৌ দেখতে আসার থাকলে শাড়ি পাল্টে সাজটা একটু বাড়িয়ে নিন। তখন চোখের পাতায় হালকা শ্যাডো, আই লাইনারের সাথে ঠোঁটে লিপস্টিকের রঙটা গাঢ় করে দিন খানিক। সেটুকুই যথেষ্ট।
সবসময়ই হাতে মেহেদীর ছোঁয়া রাখতে পারেন বেশ কতোদিন। খুব ঘন নকশা না হলেও হাতের তালুতে গোল একটা নকশা কেটে রাখুন, উল্টো পিঠেও তাই। দুহাতে মেহেদীর রঙ থাকলেই বৌয়ের সাজে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে।পায়ে আলতা দিয়ে রাখলেও দারুণ লাগে বৌদের।
বিয়ের পরের সুন্দর সময়গুলো আনন্দে কাটান, নিজে স্বস্তিতে থাকুন। লোকদেখানো পুতুল বৌ সেজে থেকে নিজেকে কষ্ট দেয়ার মানে হয় না। জীবনের এই নতুন পর্বের খুশির ছটা আপনার চোখেমুখে থাকুক, সাজসজ্জায় কী আসে যায়!
মডেল – অদ্রিতা কায়সার
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব