প্রিয় স্বপ্নযোদ্ধারা,
আশা করি আপনারা আপনাদের ডায়েট চালু রেখেছেন।এই ক’দিন ডায়েটের কথা লিখেছি, আজ লিখব ব্যায়ামের কথা। ওজন কমাতে চাইলে ডায়েটের পাশাপাশি অতি অবশ্যই ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা গা ঘামে এমন ব্যায়াম করতে হবে।দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এটুকু সময় আপনাকে যেভাবেই হোক বের করতে হবে, দিনের যে কোন সময়ে।
প্রি ওয়ার্কআউট মিলঃ
ব্যায়াম শুরু করার অল্প কিছুক্ষণ আগে একটা মাঝারি সাইজের কলা খেয়ে নেবেন- দেড় ঘন্টা ঝাড়া এক্সারসাইজেও দেখবেন কিচ্ছু হবেনা। একেবারে কিচ্ছু না খেয়ে খালি পেটে এক্সারসাইজ করতে গেলে কিন্তু মাথা ঘুরে পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
ওয়ার্ম আপ এ্যান্ড স্ট্রেচিংঃ
ব্যায়াম করার আগে অতি অবশ্যই ওয়ার্ম আপ এবং স্ট্রেচিং করে নেবেন। কিভাবে করবেন, সেজন্যে ছবি সংযুক্ত করে দিয়েছি। ওয়ার্ম আপ পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে করে ফেলবেন।মনে রাখবেন, ওয়ার্ম আপ এবং স্ট্রেচিং ছাড়া ব্যায়াম করতে গেলে ইনজুরি হবার সম্ভাবনা থাকে, এটা স্কিপ করা বিপদ ডেকে আনার সামিল।
হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিংঃ
শুরুতেই সবচাইতে সহজ এবং শক্তিশালী মেথডের কথা বলিঃ হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT)। স্বল্প সময়ে আপনাকে ঘামিয়ে গোসল করিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে এই সিস্টেমটি।
এই সিস্টেমের নামের ভেতরেই এর কায়দাকানুন লুকিয়ে আছে। হাই ইনটেনসিটি মানে প্রচন্ড তীব্র, ইন্টারভাল মানে বিরতি। ছোট ছোট বিরতি দিয়ে ছোট ছোট সময়ে প্রচন্ড তীব্র ব্যায়াম করার যে সিস্টেম, এটাই হচ্ছে এইচ আই আই টি।
যদি সুযোগ থাকে, আমার প্রথম রেকমেন্ডেশন হচ্ছে স্প্রিন্ট-ট্রেনিং।
- প্রথম ২ মিনিটঃ আস্তে আস্তে জগিং
- পরবর্তী ১ মিনিটঃ শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে দৌড় বা স্প্রিন্ট
- পরের ২ মিনিটঃ জগিং
- তারপরের ১ মিনিটঃ সর্বশক্তিতে দৌড়
- পরের ২ মিনিটঃ জগিং
- তারপর ১ মিনিটঃ সর্বশক্তিতে দৌড়
- পরের ১ মিনিটঃ জগিং
উপরের দশ মিনিটের যে প্ল্যান- আমি এটা দুই সেট করি প্রতিদিন। মোট বিশ মিনিটে শরীর থেকে বৃষ্টির মত ঘাম বের হয়। আপনারা যদি আশেপাশে দৌড়ানোর মত জায়গা থাকে (রাস্তা বা গলি হলেও চলবে)- প্রথম দিন পাঁচ মিনিট করে দুই সেট করুন। আস্তে আস্তে টানা বিশ মিনিট করবেন।
বিশ্বাস করুন,ম্যাজিকের মত কাজ হয়।
থ্রি হান্ড্রেড ওয়ার্কাউট ফর মেনঃ
এইটা আমার সবচাইতে প্রিয় ওয়ার্কআউট রূটিন।জেরার্ড বাটলার অভিনীত স্পার্টান যোদ্ধাদের নিয়ে বানানো “থ্রি হানড্রেড” মুভিটা দেখেছেন? ওখানকার অভিনেতাদেরকে যে ওয়ার্কআউট করানো হত সেটার কিছুটা সহজ ভার্সন এটি। স্কোয়াট, পুশ-আপ, প্লাঙ্ক ইত্যাদি মিলিয়ে তিন সেটে সব মিলিয়ে তিনশ বারের মত বিভিন্ন ব্যায়াম করে এই এক্সারসাইজ সিরিজটি কমপ্লিট করতে হয়। আমি নিজে এটা করি, এবং ঠিকমত করলে এই সিরিজ শেষ করার পর ডাক ছেড়ে কান্নাকাটি করতে ইচ্ছে করবে। প্রথম দিনই পারফেক্টভাবে তিনশ ওয়ার্কআউট করতে পারবেন না, তবে শুরু করুন এবং যতদূর সম্ভব অবস্থার উন্নতি ঘটান।কিভাবে কি করবেন ছবিতে দেখানো আছে।
লারা ক্রফট ওয়ার্কআউট ফর ওমেনঃ
ডেয়ারবী নামে একটা ওয়েবসাইট আছে, সেখান থেকে এই চমৎকার ওয়ার্কআউট রূটিনটি নিয়েছি। মেয়েদের উপযোগী করে এই ওয়ার্কআউট সিরিজটি বানানো, এযাঞ্জেলিনা জোলী অভিনীত “টুম্ব রেইডার” মুভির নায়িকা লারা ক্রফটের জন্যে যে ব্যায়াম ডিজাইন করা হয়েছিল- তার ভিত্তিতে এটি গড়া।আপনাদের জন্যেও একই ইন্সট্রাকশন, আস্তে আস্তে যতদূর পারবেন করবেন, চেষ্টা করবেন গা ঘামাতে। এক দিনেই পারফেক্ট হবেনা- তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ছবি নীচে সংযুক্ত।
পোস্ট ওয়ার্কআউট মিলঃ
প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন, এক টুকরো মাছ বা মাংস। প্রচুর পরিমান পানি খাবেন, স্যালাইন খেতে পারেন।
আমার কথাঃ
উপরের ওয়ার্কআউটগুলো প্রতিটা আমি নিজে করেছি, আমি জানি এগুলো কাজের। ব্যায়াম সম্পর্কে বিগিনার লেভেলে ধারণা দিতে এই লেখাটি, এই পদ্ধতিগুলো ছাড়াও হাজার হাজার উপায় আছে এক্সারসাইজ করার।অনেকে জিমে গিয়ে প্রফেশনাল ট্রেইনারদের সাথে ব্যায়াম করেন- অনেকেই ওয়েট লিফটিং এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং করেন।কেউ কেউ মিক্স মার্শাল আর্ট করেন। এগুলো মূলতঃ অভিজ্ঞ ট্রেইনারের তত্বাবধানে জিমে গিয়ে করাই ভাল।আমি নিজেও শিখতে চেষ্টা করছি- আস্তে আস্তে যেটুকু শিখব আপনাদেরকে জানাতে চেষ্টা করব।
উপরের ব্যায়ামগুলো ছাড়াও চেষ্টা করুন নিজেকে এ্যাকটিভ রাখতে, লিফটের বদলে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন- কাছাকাছি দূরত্বে রিকশা বা গাড়ি নিয়ে যাবার বদলে হেঁটে যান।যেখানেই কিছুটা ফিজিকাল এ্যাকটিভিটির সুযোগ পাবেন- করে ফেলুন!
এই অজুহাত দয়া করে দেবেন না যে আপনার সময় নেই। আপনি বারাক ওবামা নন, ভ্লাদিমির পুতিনও নন- যাঁরা দুজনই প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করেন।ফিজিকাল এক্সারসাইজ আপনার মস্তিষ্ককে সরাসরি সতেজ করবে, আপনার বয়েস কমিয়ে দেবে, ডিপ্রেশন বা স্ট্রেসকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে।
ফিজিকাল এক্সারসাইজ কোন বিলাসিতা নয়, এটা আপনার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। সপ্তাহে অন্ততঃ পাঁচ দিন এই বিনিয়োগ করে দেখুন, আপনার জীবন পাল্টে যাবে- আমার যেমন গিয়েছে।
সবাইকে শুভেচ্ছা!!!
ছবি এবং লিখেছেন - মাসরুফ হোসেন
চলবে………
আট সপ্তাহে ১৪ কেজি ওজন কমালাম কীভাবে? (পর্ব ১ )
আট সপ্তাহে ১৪ কেজি ওজন কমালাম কীভাবে? (পর্ব ২)
আট সপ্তাহে ১৪ কেজি ওজন কমালাম কীভাবে? (পর্ব ৩)