Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

আপনারা এত সিজার করেন কেন? অর্থই কি এর প্রধান কারণ!

$
0
0

আমাদের দেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কাজেই গাইনী চিকিৎসকদের সবারই একটি কথা কম বেশি শুনতে হয়,তা হল “আপনারা এত সিজার করেন কেন?”বেশিরভাগ মানুষের ধারনা টাকা পয়সাই এর প্রধান কারণ!

সেদিন আমার এক ডেন্টিস্ট ডাক্তার বন্ধু ঠিক একই কথা বললেন। আমি জানালাম শুধু ডাক্তার নয়,রোগিরও অধিক আগ্রহ থাকে সিজার করার ব্যাপারে,বিশেষ করে উচ্চ বিত্ত শ্রেনির ক্ষেত্রে। নরমাল ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা আছে জেনেও শুধুমাত্র ব্যাথা সহ্য করার ভয়ে হাজার হাজার কিংবা লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

উন্নত দেশে প্রেগনেনসির প্রথম থেকেই কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে গর্ভবতীদের নরমাল ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকলে তাকে অবশ্যই নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা করতে হবে। সিজারের মাধ্যমে অস্ত্রপাচার এবং অজ্ঞানজনিত  যেকোন জটিলতা হবার সম্ভাবনা থাকে,তাই এটা মায়ের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

গবেষনায় পাওয়া গেছে একটি সিজারের পর একজন মহিলার ফার্টিলিটি (বাচ্চা ধারনের ক্ষমতা) অনেকাংশে কমে যায়। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্মানো বাচ্চারা কষ্টসহিষ্ণু হয়, তাদের শ্বাসকষ্ট এবং এ্যাজমাজনিত সমস্যা কম হয়। তার পরেও আমাদের দেশে নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে রোগি এবং ডাক্তারদের অনাগ্রহের কিছু কারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি।

ইউরোপ আমেরিকার শতকরা  ২০ থেকে ২৫ভাগ ডেলিভারি সিজারের মাধ্যমে হয়। এখানকার ডাক্তাররা যেকোন অস্ত্রপাচার বা অপারেশন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেন,কারণ যেকোন অপারেশনে অনেক বেশি রিস্ক নিতে হয়। এসব দেশে মিডোয়াইফ বা সিস্টাররা নরমাল ডেলিভারি কন্ডাক্ট করে,এবং সমস্যা মনে হলে জুনিয়ার ডাক্তার ও স্পেশালিষ্টকে অবহিত করা হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে নরমাল ডেলভারিতে এক্সপার্ট লোকবল খুব কম সেন্টারেই আছে। তাই একজন গাইনকোলজিস্ট গর্ভবতী মাকে  এই ধরনের কোন সেন্টারে রেখে নরমাল ডেলিভারি করানোর ব্যাপারে ভরসা পান না। আবার রোগী এবং তার লোকজনও সিস্টার এবং জুনিয়র ডাক্তারের উপর আস্থা রাখতে পারেন না। ফলে সিজার করানোর জন্য তারা একসময় ডাক্তারদের ইনসিস্ট করতে থাকে।

আমি সৌদিআরবের যে সেন্টারে ছিলাম সেখানে ডেলিভারি রুমে প্রতিটি রোগির বিছানার সাথে সিটিজি মেশিন ছিল যা দিয়ে গর্ভস্ত বাচ্চার হার্টবিটের সার্বক্ষনিক মনিটরিং হত। এছাড়া প্রয়োজনের মুহুর্তে তাতক্ষনিক রক্ত সরবরাহ করা,নবজাতকের ডাক্তার কিংবা ইমারজেন্সি সিজারের ব্যাবস্থা খুব অল্প সময়ের মধ্যে করা যেত, যা অফিসিয়াল সময়ের বাইরে আমাদের দেশে অসম্ভব ব্যাপার। সেখানে চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার সরকার বহন করত। যার ফলে টাকা পয়সা নিয়ে ডাক্তার বা রোগির চিন্তার কোন কারণ ছিল না। আমাদের দেশে সাধারন মানের ক্লিনিকে ইমারজেন্সি সিজারের ব্যাবস্থা করতে গেলে যে সময়ক্ষেপন হয় তাতে মা ও শিশুর যেকোনো সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকে। তখন ওই ডাক্তার যতই আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসা করুক, শেষ পর্যন্ত সব দোষের ভাগ তাকেই নিতে হয়।  এ কথা চিন্তা করেই অনেক গাইনকলজিস্টরা রিস্ক না নিয়ে সিজার করাকেই বেশি নিরাপদ মনে করেন।

বিদেশে চিকিৎসক দের জবাবদিহিতা অনেক বেশি। তবে সেখানে যেকোনো  চিকিৎসার খুঁটিনাটি সব কিছুরই ডকুমেন্ট থাকে।  কোন চিকিৎসক এর হাতে রোগির কোন ক্ষতি হলেও সে যদি সঠিক  প্রটোকল এর মধ্যে থাকে তবে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে অসুবিধা হয় না।

অন্যদিকে আমাদের দেশে রোগির চিকিৎসার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন প্রোটোকল এবং ডকুমেন্ট না থাকায়  এখানে যেমন একজন অপরাধ করেও আইনকে ফাকি দিতে পারবে তেমনি একজন নির্দোষ  হয়েও নিজেকে প্রমান করতে ব্যর্থ হতে পারে। কাজেই ডাক্তারদের জবাবদিহিতা এবং ভাল মানের চিকিৎসা সেবার জন্য আগে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

ডা: নুসরাত জাহান

সহকারী অধ্যাপক(গাইনী-অবস)

ডেলটা মেডিকেল কলেজ,মিরপুর,ঢাকা।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles