চুল শ্যাম্পু তো আমরা সবাই করি, তবে তা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে বা মেনে কি করি? জী হ্যাঁ পাঠক, সঠিক উপায়ে চুলে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার করে শ্যাম্পুর গুণাগুণের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারা যায়। শ্যাম্পু হয়ত প্রায় প্রতিদিনই করি আমরা, তবে সঠিকভাবে চুল ধোয়ার এই কাজটি করলে চুলের স্বাস্থ্য জেল্লা দুইই রক্ষা করতে পারা যায়। আর যদি ঠিকভাবে না করে থাকেন তবে আপনার অজান্তেই চুলের ক্ষতি করে চলেছেন। তাই সাধারণ ভুলগুলো শুধরে দিতেই আজকের এই লেখা।
মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। অনেকেই শ্যাম্পুর সময় চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। শুকনো চুল আঁচড়ে নেওয়ার অভ্যাস থাকলে এই সমস্যা কেটে যাবে সহজেই।
চুল ভিজিয়ে নিন প্রথমেই
উষ্ণ পানিতে চুল ভিজিয়ে নিন প্রথমেই। গরম পানি চুলে দেওয়া ঠিক না একথা সবাই জানি। তাই কুসুম কুসুম গরম পানি ইউজ করুন। চুল ধোয়ার কাজে এটা বেশ উপকারী। এতে স্কাল্পের উপরে ধুলো ময়লার যে আস্তরন পড়ে, সেটা কিছুটা লুজ হয় আর চুলের গোড়ার ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
চুল যদি লম্বা হয়
আপনার চুল যদি লম্বা, অর্থাৎ কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ বা কোমর বরাবর হয়, তবে চুল ভিজিয়ে শ্যাম্পু দেওয়ার আগে একটু কন্ডিশনার দিয়ে নিন চুলে। লম্বা চুলের অধিকারীদের একটা সাধারণ সমস্যা হল তাদের চুলের উপরিভাগ থাকে বেশ স্বাস্থ্যজ্জল। আর মাঝ থেকে নিচ অবধি চুলগুলো কেমন যেন রুক্ষ আর প্রাণহীন হয়ে থাকে। একই চুলের মধ্যে এই দুরকম বৈষম্য দূর করতেই লম্বা চুলের শ্যাম্পুর আগে প্রিকন্ডিশনিং করে নেওয়া ভালো।
শ্যাম্পু দিন মাথার ত্বকে
অনেকে মনে করেন শ্যাম্পু “চুলে” দেওয়ার জন্য। আসলে শ্যাম্পুর প্রধান কাজ মাথার ত্বক এর তৈলাক্তভাব আর ধুলো ময়লা দূর করে চুলকে ঝরঝরে রাখা। তাই “পুরো চুল ঘষে ফেনা না তুললে চুল ধোয়া হবে না” এই ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখাতে নজর দিন। আর শ্যাম্পু ধুয়ে ফেলার সময় তা তো চুল বেয়েই নামবে, তখনি চুল পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ঘষাঘষি নয় একদমই
অনেকেই শ্যাম্পু করার সময় অযথা চুল ঘষতে থাকেন। তাদের বলছি, একটু ভেবে দেখুন। এটা আপনার বিছানার চাদর বা পাপোশ নয় যে জোরে ঘষা মাজা করলেই সব ময়লা উঠে সাফ সুতরো হয়ে যাবে। আস্তে ধীরে কোমল ভাবে শ্যাম্পু করুন। খুশকি বা ময়লা থাকলে কেউ কেউ শ্যাম্পু দিয়ে একবারে নখের আঁচড়ে সব পরিস্কার করতে চান। এতে কিউটিকল ড্যামেজ হয়ে চুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শ্যাম্পু দেবার পর মিডিয়াম প্রেসারে চিরুনির মত করে চুলে আঙ্গুল চালান। এতে স্কাল্পে ব্লাড সারকুলেশন হবে আর চুল বৃদ্ধির সহায়ক হবে। সার্কুলার মোশনে মাথার ত্বকে মাসাজ করবেন না। এতে চুলে জট লেগে যায় ও শ্যাম্পুর পরে জট ছাড়াতে গেলে চুলও পড়ে।
২য় বার শ্যাম্পুর আগে
শ্যাম্পুর বোতলে একটা কথা প্রায়ই লেখা থাকে। সেটা হল Rinse. Repeat. আপনি যদি নিয়মিত চুল পরিষ্কার করেন, তবে দুইবার করে শ্যাম্পু করার কোন প্রয়োজন নেই। চুলে অতিরিক্ত ময়লা ও ধুলাবালির কারণে চুল যদি নোংরা হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে প্রথমবার চুলে শ্যাম্পু দিলে ফেনা কম বা নাও হতে পারে। তখন ২য় বার শ্যাম্পু ব্যাবহার করুন।
অনেকেই কন্ডিশনার দেওয়ার সময় পুর মাথা জুরে লাগিয়ে ফেলেন। কন্ডিশনার শুধু চুলে লাগানর জন্য। মাথার তালু থেকে এক ইঞ্চি চুল বাদ রেখে কন্ডিশনার লাগান চুলের ডগা পর্যন্ত। মাথার ত্বকে লাগানো যাবেনা কারন চুলের গোড়ার অংশ স্কাল্পের ন্যাচ্রাল অয়েলের কারণে আগে থেকেই ময়েশ্চার ধরে রাখে। চুলের মাঝ থেকে ডগা পর্যন্ত কন্ডিশনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তাই ওই অংশেই মনোযোগ দিন সব থেকে বেশি।
শেষ করুন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে
ঠাণ্ডা মানে বরফ শীতল পানি নয়, নরমাল পানি। চুল ধোয়ার সময় নরমাল পানিতে চুল ধুয়ে নিন। এতে স্কাল্পের ওপর একটা শীতল পরত সৃষ্টি হবে যা চুলের পরিচ্ছন্নতাকে নিশ্চিত করবে এবং মাথার ত্বককে ভালো রাখবে।
কন্ডিশনার চুল থেকে ধোয়া হয়ে গেলে পিঠের দিকেও একটু নজর দিন। চুল পরিস্কার হয়ে গেলেও অনেক সময় পিঠ থেকে কন্ডিশনার ভালোভাবে না ধোয়ার দরুন পিঠে ছোটখাটো র্যাশ, পিম্পল হয়। তাই নজর রাখুন সেখানেও। প্রয়োজনে বডি ক্লিনিং ব্রাশ ব্যাবহার করতে পারেন।
লিখেছেন – চৌধুরী তাহাসিন জামান
ছবি – স্টেপটুহেলথ.আরইউ